ছবি: সংগৃহীত।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) ৩ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামী’র স্থানীয় নেতারা টিসিবি (ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ) কার্ড বাতিলের জন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে চাপ সৃষ্টির অভিযোগ তুলেছেন। স্থানীয় জনগণ জানান, তাদের কার্ড জোরপূর্বক নিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
বুধবার দুপুরে, রাসিকের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কয়েকজন নারী সংবাদ সম্মেলন করে এই অভিযোগ জানান। তারা জানান, বাংলাদেশ ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের রাজশাহী জেলা শাখার কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে এই ঘটনা তুলে ধরেছেন। তাদের দাবি, টিসিবি কার্ডে বরাদ্দ দেওয়া পণ্য গ্রহণের সময় বিএনপি ও জামায়াতের নেতারা তাদের কার্ড কেড়ে নেন এবং ঘোষণা করেন, এই কার্ড আর কার্যকর থাকবে না।
তবে জামায়াতে ইসলামী অভিযোগটি সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করেছে। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, টিসিবি কার্ড বাতিল করার সাথে তাদের কোন সম্পর্ক নেই। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা কার্ড বাতিল করছে না, বরং তালিকা হালনাগাদের কাজ করছে।
বিএনপির এক নেতার দাবি, "৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা, যিনি টিসিবি কার্ড বিতরণের সময় দলের ভিত্তিতে বিভাজন করেছিলেন। এখন সময় এসেছে এই তালিকা পুনঃমূল্যায়ন করার।"
এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানিয়ে, রহিমা নামের এক নারী লিখিত বক্তব্যে বলেন, "গত তিন বছর ধরে আমরা টিসিবি কার্ডের মাধ্যমে সয়াবিন তেল, মসুর ডাল, চাল ইত্যাদি পেয়ে আসছিলাম। কিন্তু গত নভেম্বরে যখন আমরা টিসিবি কার্ড নিয়ে পণ্য নিতে গেলাম, তখন স্থানীয় বিএনপি নেতারা আমাদের জানিয়ে দেন যে, এই কার্ড বাতিল হয়ে গেছে এবং এই কার্ডের মাধ্যমে আর পণ্য বিতরণ করা হবে না।"
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়েছে যে, পরবর্তীতে মহানগর বিএনপির সদস্য তাজউদ্দীন সেন্টু, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের জামায়াতের আমির মো. মনিরুজ্জামান এবং স্থানীয় বিএনপি নেতারা এলাকার বিভিন্ন বাড়ি বাড়ি গিয়ে কার্ড তুলে নিয়ে যান। এক পর্যায়ে তারা জানতে পারেন যে, ওয়ার্ড সচিবকে বদলি করা হয়েছে।
তাজউদ্দীন সেন্টু নিজেই বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, "আমরা বিএনপি এবং জামায়াত একসঙ্গে একটি কমিটি গঠন করেছি, এবং পুরনো টিসিবি কার্ডগুলো বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের প্রশ্ন, কি কারণে এসব কার্ড বাতিল করা হচ্ছে?"
এদিকে, এই নারীরা দাবি করেন, তারা দরিদ্র শ্রেণির মানুষ, যারা টিসিবি কার্ডের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করেন। তাদের মতে, পূর্বে দেওয়া টিসিবি কার্ডের কারণে যদি এখন তাদের বাদ দেওয়া হয়, তবে তারা খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
এছাড়া, কয়েকদিন আগে বিএনপি ও জামায়াতের নেতারা রাসিকের ওয়ার্ড কার্যালয়ে গিয়ে কার্ড বাতিলের জন্য চাপ দেন। সচিব আহাদ আলী এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে জানান, "আমি তাদের বলেছি, যদি কার্ড বাতিল করতে হয়, তবে নগর ভবনে গিয়ে এর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।" পরে, আহাদ আলীকে বদলি করা হয়।
এ বিষয়ে জামায়াতের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের আমির মো. মনিরুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, "বিএনপির লোকজন তালিকা হালনাগাদ করছে, তবে জামায়াত এই কাজে কোনভাবেই যুক্ত নয়। যদি কেউ আমাদের নাম উল্লেখ করে এই ধরনের কিছু বলেছে, তবে তা সঠিক নয়।"
এ ঘটনার পর, স্থানীয় জনগণ দাবি করেছেন, তাদের জন্য টিসিবি কার্ডের মাধ্যমে পাওয়া সুবিধা যেন অব্যাহত থাকে এবং কোনো রকম অনিয়ম বা রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি না হয়। তারা আশা করছেন যে, প্রশাসন বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখবে এবং এ ধরনের অসঙ্গতি দূর করবে।
নুসরাত