হারানো দিনের কলের গান বা গ্রামোফোন ও মাইক ভাড়া দিয়ে এই আধুনিক যুগে এসে প্রায় ৬০ বছর যাবৎ আকড়ে ধরে জীবিকা নির্বাহ করছেন আব্দুল আলী নামের এই বয়স্ক বৃদ্ধ। যিনি ঢাকার দোহার উপজেলার সুতারপাড়া ইউনিয়নের কাজীরচর এলাকার বাসিন্দা আব্দুল আলী। তিনি সেই যুবক বয়স থেকেই জীবিকা নির্বাহের জন্য একমাত্র অবলম্বন হিসেবে শুরু করে ছিলেন কলের গান বা গ্রামোফোন এর ব্যবহার। সেই সময় প্রত্যেকটি এলাকায় যেকোন অনুষ্ঠানে বিনোদনের জন্য একমাত্র মাধ্যমই ছিলো এই কলের গান। পুরানো দিনের কোন অনুষ্ঠান এই কলের গান ছাড়া যেন চলতোই না।
জানা যায়, ১৮৭৭ সালে মার্কিন বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসন প্রথম আবিষ্কার করেন শব্দ ধারণ করার যন্ত্র ‘ফোনোগ্রাফ’। এর এক দশক পরে জার্মানির বিজ্ঞানী এমিল বার্লিনার ১৮৮৭ সালে যন্ত্রটিকে আরো উন্নত করে নাম দেন গ্রামোফোন বা কলের গান। এডিসনের ফোনোগ্রাফে শব্দ ধারণ করা হতো ধাতব চোঙের ওপর। আর গ্রামোফোনে শব্দ ধারণ করা হলো খুব পাতলা চাকতির ওপর। শিল্পীর কণ্ঠের গান গ্রামোফোনে রেকর্ডের মাধ্যমে ছড়িয়ে যায় সাড়া দেশজুড়ে সাধারণ শ্রোতার কাছে। অনেক দিন পর্যন্ত বেশ সচ্ছল ও সংগীত পিয়াসী সংস্কৃতিবান পরিবারেই এই যন্ত্রের দেখা মিলত।
তবে কালের পরিক্রমায় পুরানো দিনের কলের গান বা গ্রামোফোনকে পেছুনে ফেলে জায়গা দখল করে নিয়েছেন আধুনিক প্রযুক্তির সাইন্ড সিস্টেম। যার ফলে বর্তমানে যেকোন অনুষ্ঠানে হারানো দিনের ঐতিহ্যবাহী কলের গান বা গ্রামোফোন বাজানোর জন্য খুব একটা সাড়া পান না আব্দুল আলী। ফলে স্থবির হয়ে পরেছে পুরানো সেই কলের গান। এর ফলশ্রুতিতে নিদারুন কষ্টের মধ্যে জিবীকা নির্বাহ করছেন এই আব্দুল আলী।
আব্দুল আলীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, টাকার অভাবে দোকান না দিতে পেরে নিজেরই থাকার দোচলা ঘরেই রেখেছেন গ্রামোফোন ও মাইক। তিনি নিজে হাতে তৈরি করেন ব্যাটারী। তার বসবাসরত ঘরের ভেতরে থাকার পরিবেশ নেই বল্লেই চলে। তার দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়ে এখন তিনি ও তার স্ত্রী কোনমতে পার করছেন দিন। তবে স্বপ্ন দেখেন এখনো আব্দুল আলী। কিছুটা অর্থ সহায়তা পেলে হয়তো একটি দোকান নিয়ে বাড়াতে পারবেন তার ব্যবসার পরিধি এবং দিতে পারবেন বসবাসের উপযোগি একটি ঘর।
আব্দুল আলী জানান, জীবন যুদ্ধে অনেক অভিজ্ঞতা থাকলেও সততার সাথে অতিবাহিত করেছেন এতগুলো বছর। সংসারে টানাপোড়ন থাকলেও বিক্রি করেননি তার প্রিয় সখের কলের গান বা গ্রামোফোনটি। বর্তমানে ওয়াজ মাহফিলসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে জন্য তার বাড়ি থেকেই তিনি ভাড়া দেন ব্যাটারী ও মাইক। এতে যা আয় হয় এ দিয়ে তিনি কোন রকম দিন যাপন করছেন।
আব্দুল আলীর প্রতিবেশীরা জানান, আব্দুল আলীর জীবন যুদ্ধ অনেক আগে থেকেই দেখছেন তারা। তিনি সৎ ও অনেক পরিশ্রমের মাধ্যমে জিবীকা নির্বাহ করছেন। শুরুতেই তিনি এই এলাকায় প্রথম গ্রামোফোন দিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান শোনাতেন। কিন্তু এখন অর্থের অভাবে অনেকটা সংকোচিত হয়ে গেছে তার ব্যবসা।
স্থানীয় ইউপি সদস্য শিহাবুর রহমান বলেন, আব্দুল আলী সরকারিভাবে বয়স্ক ভাতা পেলেও তার ব্যবসা পরিচালনার জন্য দরকার আরও অর্থ। তাহলে হয়তো ঘুরে দাড়াঁতে পারবে আব্দুল আলী।
এ বিষয়ে দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইলোরা ইয়াসমিন বলেন, এর আগে এ বিষয়টি আমি অবগত ছিলাম না। তবে আপনাদের মাধ্যমে যেহেতু জানতে পারলাম। আগামীতে সরকারী কোন অনুদানের মাধ্যমে তাকে সহযোগিতা করা হবে।