মেট্রোরেলের মিরপুর-১০ স্টেশন চালু আগামী সপ্তাহে
আগামী সপ্তাহে চালু হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত মিরপুর-১০ মেট্রোরেল স্টেশনটি। ইতোমধ্যে স্টেশনটি মেরামত করে যাত্রী ওঠা-নামার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার স্টেশনটিতে ট্রেন থামিয়ে সবকিছু ঠিকঠাক আছে কি না, তা পরীক্ষা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) কর্মকর্তারা।
ডিএমটিসিএলের সূত্র জানায়, রাজধানীর উত্তরা-মতিঝিল রুটের মেট্রোরেল সার্ভিসের ক্ষতিগ্রস্ত মিরপুর-১০ মেট্রো স্টেশনটি অক্টোবর মাসেই চালুর প্রস্তুত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে স্টেশনটির মেরামত কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন যন্ত্রাংশ প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। তবে জাপান থেকে নতুন কোনো যন্ত্রাংশ এনে এই স্টেশনে লাগানো হয়নি। অন্য স্টেশন থেকে যন্ত্রাংশ এনে মিরপুর-১০ স্টেশনটি যাত্রীদের ব্যবহারের উপযোগী করা হয়েছে। তাই সব কিছুর প্রস্তুতি নিয়ে চলতি মাসের মাঝামাঝির মধ্যে স্টেশনটি চালুর কাজ করা হচ্ছে বলে কর্মকর্তারা জানান।
এ বিষয়ে ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুর রউফ জনকণ্ঠকে বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত মেট্রোরেলের মিরপুর-১০ স্টেশনটি মেরামতের জন্য তিনটি ধাপে যন্ত্রাংশ সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রথমত স্টেশনের ক্ষতিগ্রস্ত কম্পিউটারসহ বিভিন্ন জিনিস আমরা মার্কেট থেকে ভালো কোম্পানি দেখে ক্রয় করেছি। দ্বিতীয়ত কিছু জিনিস আমরা উত্তরার দিয়াবাড়ির পরিদর্শন কেন্দ্র থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
তৃতীয়ত কিছু জিনিস আমরা অন্য স্টেশন থেকে সংগ্রহ করে এখানে প্রতিস্থাপন করেছি। এতে আমাদের খরচ অনেকটা কম হয়েছে। আমাদের পূর্বের বাজেট থেকে এই খরচ বহন করা হয়েছে। প্রাথমিকভারে স্টেশট যাত্রীদের ওঠা-নামার উপযোগী করা হয়েছে।’ খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে স্টেশনটি আমরা চালু করব বলে জানান তিনি।
ডিএমটিসিএলের কর্মকর্তারা জানান, বৃহস্পতিবার মিরপুর-১০ স্টেশনের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। মিরপুর-১০ নম্বর স্টেশনে যন্ত্র থেকে টিকিট স্বয়ংক্রিয়ভাবে বের হচ্ছে কি না, ভাড়া পরিশোধ করে প্রবেশ ও বের হওয়ার গেটগুলো খুলছে কি না, স্টেশনে নির্ধারিত স্থানে ট্রেনের দরজা খুলছে কি না, এসব বিষয় পরীক্ষা করা হয়ে। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী সপ্তাহেই এই স্টেশন থেকে যাত্রী পরিবহন শুরু হবে।
হামলায় মিরপুর-১০ নম্বর স্টেশনে স্বয়ংক্রিয় টিকিট বিক্রির যন্ত্র, কম্পিউটার, ভাড়া পরিশোধ করে প্রবেশ ও বের হওয়ার স্বয়ংক্রিয় গেট, স্টেশনের ইলেক্ট্রনিক পর্দা ও কিছু কাচ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। কিছু সরঞ্জাম ও উপকরণ স্থানীয় বাজার থেকে কেনা হয়েছে। আবার যেসব স্টেশনে যাত্রী চাপ কম (উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ ও বিজয় সরণি স্টেশন) সেখান থেকে একাধিক টিকিট যন্ত্র ও গেট স্থানান্তর করা হয়েছে। এ ছাড়া উত্তরায় মেট্রোরেলের ডিপোর ভেতর প্রদর্শনকেন্দ্রে আটটি গেট ছিল, সেগুলো এনে লাগানো হয়েছে। পরে আমদানি করে ওই সব জায়গায় গেট ও টিকিট কাটার যন্ত্রগুলো বসানো হবে। তবে আমদানি করলেও আগের সরকার যে ব্যয় প্রাক্কলন করেছিল, তত টাকা লাগবে না।
এ বিষয়ে ডিএমটিসিএলের ম্যানেজার (সিভিল) মাহফুজুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত মেট্রোরেলের মিরপুর-১০ স্টেশনের মেরামতের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা অনেক যন্ত্রাংশ প্রতিস্থাপন করেছি। তবে এই যন্ত্রাংশগুলো জাপান থেকে আনা হয়নি। অন্যান্য স্টেশন ও দিয়াবাড়ি থেকে এনে লাগানো হয়েছে। স্টেশনটি দ্রুত যাত্রীদের ব্যবহার উপযোগী করা হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে স্টেশনটি চালু করা যাবে।’
গত ১৮ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি চলাকালে রাজধানীর মিরপুরের ১০ নম্বর গোলচত্বরে থাকা পুলিশ বক্সে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা। আগুনের কালো ধোঁয়া মেট্রোরেল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। জননিরাপত্তার স্বার্থে ওইদিন বিকেল সাড়ে ৫টায় মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরদিন ১৯ জুলাই শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে মেট্রোরেল বন্ধ ছিল। ওইদিন বিকেলে ভাঙচুরের শিকার হয় মেট্রোরেলের কাজীপাড়া ও মিরপুর ১০ নম্বর স্টেশন। এতে স্টেশন দুটির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং ব্যবহার বন্ধ রাখতে হয়।
এই দুটি মেট্রোরেল স্টেশন সংস্কারে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার এক বছর সময় লাগবে বললেও বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তিন মাসের মধ্যেই দুটি স্টেশন চালুর উদ্যোগ নেয়। এর মধ্যে গত মাসের ২০ তারিখ কাজীপাড়া স্টেশন চালু করা হয়েছে।