পদ্মা নদী থেকে বালু উত্তোলনের অভিযোগে বেশকিছু ড্রেজার আটক করে প্রশাসন
মাদারীপুরের সকল নদ-নদীসহ পদ্মা নদীতেও দিনরাত চলছে বালু উত্তোলনের মহোৎসব। জেলার শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়ি, চরচান্দ্রা এলাকার কাওলিপাড়াসহ পদ্মা সেতুর বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে দিনরাত চলছে বালু উত্তোলন। এ ছাড়াও কাঁঠালবাড়ি, চরজানাজাত ইউনিয়নের পদ্মার চর এলাকার নদীবর্তী চর কেটেও মাটি নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে। স্থানীয় প্রভাবশালী মহল এই বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
জানা গেছে, বর্তমানে অর্ধশত ড্রেজার বালু উত্তোলনের কাজে সক্রিয় রয়েছে। পদ্মা সেতুর কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নের কাউলিপাড়া এলাকার নদীর বিভিন্ন এলাকায় ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করছে। পরে উত্তোলনকৃত বালু বাল্কহেডে ভরে নিয়ে যাওয়া হয় বিক্রির জন্য।
ড্রেজারগুলো নারায়ণগঞ্জ, বরিশাল, ঝালকাঠিসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ভাড়ায় এনে নদীতে বালু উত্তোলন করা হয়। বিভিন্ন সময় অভিযানে শ্রমিকরা আটক হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকছে মূল হোতারা। এ ধরনের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। বিভিন্ন সময়ে অভিযান চালিয়ে ড্রেজার জব্দ, জড়িতদের আটক এবং অর্থদ- করা হলেও থেমে নেই অবৈধভাবে বালু উত্তোলন। সম্প্রতি উপজেলা প্রশাসন অভিযান চালিয়ে কিছু ড্রেজার মেশিন আটক করে শিবচরের কাঁঠালবাড়ি ঘাটে রেখেছিল।
পরে সে সব ড্রেজার মালিককে জরিমানা করে জব্দকৃত ড্রেজার ছেড়ে দেয়। তারা পুনরায় নদীর বিস্তীর্ণ এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে বালু উত্তোলন করেই চলেছে। এ ছাড়াও সদর উপজেলার আড়িয়ল খাঁ নদ, রাজৈরে কুমার নদ ও কালকিনির পালরদী নদীতে নিয়মিত বালু উত্তোলন করা হয়। কিন্তু প্রশাসনের অভিযান চালানোর খবর আগেই বালুখেকোরা জেনে যায় রহস্যজনকভাবে।
রাজৈরের হরিদাসদী-মহেন্দ্রদী কালিবাড়ি এলাকায় নিয়মিত বালু উত্তোলন করা হলেও এখানে কোনো অভিযান চালানোর তৎপরতা নেই। বালু উত্তোলন বন্ধে ইতোমধ্যে স্থানীয়রা জেলা প্রশাসকের নিকট অভিযোগ দায়ের করেছেন।
শিবচর উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বালু উত্তোলনের খবর পেয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল মালেকের নেতৃত্বে ১১ সেপ্টেম্বর দুপুরে পদ্মা সেতু সংলগ্ন কাউলিপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত থাকায় দুটি ড্রেজার জব্দ করে এবং দুজনকে আটক করে। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাদের ১ লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়েছে। শুক্রবার আরও দুটি ড্রেজার জব্দ করে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
পদ্মার তীরবর্তী এলাকার কতিপয় ব্যক্তি পদ্মা নদী থেকে বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে। আগে রাতের বেলা ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করা হতো। বর্তমানে দিনের বেলাও ড্রেজার চলে। প্রশাসনের তৎপরতা দেখলে সাময়িক বন্ধ রাখে ড্রেজার চালানো। বিশেষ করে পদ্মা নদীবর্তী এলাকার আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এই কাজে জড়িত ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।
গত ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ব্যক্তির পরিবর্তন ঘটলেও নদী থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ হয়নি। কাঁঠালবাড়ি ও চরজানাজাত এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, ‘শিবচর উপজেলার চরজানাজাত, কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নের পদ্মা নদীতে জেগে ওঠা নতুন চরের (বাঘরা সীমানা, চার নং পোল এলাকা) মাটি ড্রেজারের মাধ্যমে স্থানীয় প্রভাবশালীরা কেটে বিক্রি করে দিয়েছে।
নতুন জেগে ওঠা চর ফসল উৎপাদনের উপযোগী হলেও বালুখেকোদের কবলে পরে নিশ্চিহ্ন হচ্ছে। গত ৫ আগস্টের আগে নিয়মিত এই সকল এলাকার চরের মাটি কেটে নিতো স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। বর্তমানে তারা পলাতক রয়েছে। কিন্তু ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধ হয়নি।
শিবচরের চরজানাজাত নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুস সালাম বলেন, ‘গত তিন মাসে পদ্মা নদী থেকে ২৪টি বাল্কহেড ও ড্রেজার জব্দ করা হয়েছে।
আমরা খবর পেলেই অভিযান পরিচালনা করি। তা ছাড়া সাধারণ মানুষ পুলিশের বিরুদ্ধে মিথ্যা কিছু অভিযোগও করে থাকে।’ শিবচরের চরজানাজাত নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিসুর রহমান সংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা অভিযান চালাচ্ছি। গত কয়েক মাসে অনেক ড্রেজার আটক করেছি। পদ্মা নদীর মাগুরখ-, কাওলিপাড়া এলাকায় ড্রেজারগুলো চলে। কারও কারও ড্রেজার চালানোর কাগজপত্র রয়েছে।’
তবে পদ্মায় বালু উত্তোলনকারী সব ড্রেজারই অবৈধ বলে জানিয়েছেন শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনি বলেন, ‘আমরা অভিযান পরিচালনা করি। গত বুধবারও ২টি ড্রেজার জব্দ করা হয়েছে। শুক্রবার আরও ১লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়েছে। আমরা বালু উত্তোলন বন্ধে কঠোর অবস্থানে আছি।