ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১২ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১

পদ্মায় ভাঙন রোধের চেষ্টা ব্যর্থ

জলে গেল ৩১ কোটি টাকা

নিজস্ব সংবাদদাতা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

প্রকাশিত: ০০:০৯, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

জলে গেল ৩১ কোটি টাকা

পদ্মার ডান তীর জুড়ে দেখা দিয়েছে ব্যাপক ভাঙন

পদ্মায় গত মাসে অস্বাভাবিক পানি বাড়া ও কমার কারণে ডান তীর জুড়ে দেখা দিয়েছে ব্যাপক ভাঙন। গত তিন সপ্তাহে ডান তীরের পাকা, নারায়ণপুর ও আলাতুলি ইউনিয়নের ৭০০ বাড়িঘরসহ ফসলি জমি, স্থাপনা নদীতে বিলীন হয়েছে। নদীতে ঠিকানা হারিয়ে দিশাহারা ভুক্তভোগীরা। ভাঙনরোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি করেছেন স্থানীয়রা।

এদিকে, পদ্মায় ভাঙনরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ৫ বছরে নদীর বুকে ৩১ কোটি টাকার জিও ব্যাগ ফেলেছে। কিন্তু এতে কোনো কাজ হয়নি। ফলে সরকারের ৩১ কোটি টাকার পুরোটাই ‘জলে’ চলে গেছে।
স্থানীয়রা জানান, শিবগঞ্জ উপজেলার পাকা, দুর্লভপুর এবং সদর উপজেলার নারায়ণপুর ও আলাতুলি ইউনিয়নের ৮-৯টি গ্রামজুড়ে চলছে তীব্র ভাঙন। পদ্মা গ্রাস করছে একের পর এক বসতবাড়ি ও ফসলি জমি।

বসতবাড়ি ও ফসলি জমি হারিয়ে বহু পরিবার এখন প্রায় নিঃস্ব। পদ্মায় বছরের পর বছর ধরে চলে আসা ভাঙনরোধে সাময়িক ব্যবস্থা হিসেবে নদীপাড়ে জিও ব্যাগ ফেলা হলেও কখনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে ভাঙনরোধে বরাদ্দের কোটি কোটি টাকা নদীর পানিতেই ভেসে গেছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, গত ৫ বছরে পদ্মার  ভাঙনরোধে ব্যাপক পরিমাণ জিও ব্যাগ ও জিও টিউব ব্যবহার করা হয়েছে।

এ সময়ে পাকা, নারায়ণপুর, আলাতুলিসহ ভাঙনকবলিত এলাকায় ৫ লাখ ৩৩ হাজার জিও ব্যাগ ব্যবহার হয়েছে। তাছাড়া জিও টিউব ব্যবহার করা হয়েছে ১৩ হাজার ৪০০টি। এজন্য খরচ হয়েছে ৩১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।
সদর উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের সামাজিক সংগঠক সাদ্দাম আলী বলেন, গত কয়েকদিনে ১৬৫টি বাড়ি বিলীন হয়েছে।  নারায়ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজির হোসেন বলেন, সর্বগ্রাসী পদ্মার ভাঙনের মুখে পড়ে নারায়ণপুরে দুই শতাধিক বাড়িঘর অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

আলাতুলি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদিন বলেন, আলাতুলি, কোদালকাঠি এলাকার ২৫০টি বাড়ি ইতোমধ্যে নদীতে বিলীন হয়েছে। এই দুই এলাকার মানুষজন তাদের বাড়িঘর অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন। অনেকেই ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত পার করছেন। সদর উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মওদুদ আহমেদ বলেন, নারায়ণপুর ও আলাতুলিতে ভাঙন অব্যাহত আছে। নদীগর্ভে বাড়িঘর বিলীন হওয়া পরিবারগুলোর তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। শীঘ্রই ওই তালিকা সম্পন্ন হলে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। 
শিবগঞ্জ উপজেলার পাকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক বলেন, পদ্মার পূর্বপাড়ের পাকাঘাট এলাকাসহ বোগলাউড়ি, বাবুপুর, সাত্তার মোড় এলাকায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনে মানুষের বসতবাড়ি নদীতে নেমে যাওয়ার পাশাপাশি দুই সপ্তাহ আগে সাত্তারের মোড়ে পল্লি বিদ্যুতের একটি পোল নদীতে পড়ে যায়। এতে বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে পদ্মাপাড়ের গ্রামগুলো।

শিবগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, চলতি বন্যায় পাকা ও দুর্লভপুর ইউনিয়নের ১৫০টি বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এছাড়া গাছপালা ও ফসলি জমি নদীতে নেমে গেছে। এ দুই ইউনিয়নেই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করেছি। শীঘ্রই জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে তাদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী ময়েজ উদ্দীন বলেন, পদ্মায় বেশি পানি থাকার কারণে এই মুহূর্তে ভাঙনরোধে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাচ্ছে না। পানি না কমলে কাজ ভালো হবে না। সম্প্রতি কিছু বরাদ্দ পাওয়া গেছে। পদ্মার পানি কমলে আলাতুলি এলাকায় ভাঙনরোধে কাজ শুরু করা হবে। তবে পাকা, নারায়ণপুরের ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।
    
মেঘনার ভাঙন এলাকায় কর্মকর্তারা
নিজস্ব সংবাদদাতা, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ থেকে জানান, মঙ্গলবার দুপুরে  ভৈরবের মেঘনা নদীতে ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিএডিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এ সময় বিএনপির কেন্দ্র্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি শরীফুল আলম এলাকা পরিদর্শন করেন। গত রবিবার গভীররাতে হঠাৎ করে বাগানবাড়ীর নদীর পাড় এলাকার ১৬০ মিটার এলাকা বিলীন হয়ে যায়। এতে বিএডিসির দুটি সার গুদাম ও যমুনা অয়েল কোম্পানির তেল ডিপো ভাঙনের হুমকির মুখে পড়ে।
মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকার কেন্দ্রীয় অঞ্চলের পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী (চিফ ইঞ্জিনিয়ার) মো. আসাদুজ্জামান, বিএডিসির প্রধান কার্যালয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুজ্জামান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মো. রেদোয়ান আহমেদ রাফি, ভৈরব সেনা ক্যাম্পের মেজর সানজিদুল ইসলাম, বিএডিসি ভৈরব সার গুদামের সহকারী পরিচালক (সার) শিপন সাহা, যমুনা ডিপোর সহকারী ব্যবস্থাপক মো. মতিউর রহমান। এছাড়াও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি মো. শরীফুল আলম মঙ্গলবার দুপুরে ভাঙন এলাকাটি পরিদর্শন করেন।

×