ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১

নিউ ধলেশ্বরী নদীর বালু লুট

নিজস্ব সংবাদদাতা, টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ২২:৪৭, ৫ আগস্ট ২০২৪

নিউ ধলেশ্বরী নদীর বালু লুট

কালিহাতী উপজেলার গোহালিয়াবাড়ী ইউনিয়নের শ্যামশৈল এলাকার নিউ ধলেশ্বরী নদীর বালু এবাবেই লুট হচ্ছে

কালিহাতী উপজেলার গোহালিয়াবাড়ী ইউনিয়নের শ্যামশৈল এলাকার নিউ ধলেশ্বরী নদী হতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে স্থানীয় প্রভাবশালী বালুখেকোরা ওই বালু বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে। এতে করে বালু দস্যুরা হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। এতে করে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছেন।   
জানা যায়, যমুনা নদীর উৎসমুখে নিউ ধলেশ্বরী নদী হতে শ্যালশৈল এলাকায় গোহালিয়াবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল হাই আকন্দ, হুমায়ুন কবীর সুমন, আজহার ওহাব আলী, সবুর ও আব্দুল লতিফ পরস্পরের যোগসাজশে চেয়ারম্যানের প্রভাব খাটিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে নদী হতে বালু উত্তোলন করে নদী তীরবর্তী শ্যামশৈল এলাকায় বিশাল স্তূপাকারে সংরক্ষণের জন্য জমা রাখেন।

পরবর্তীতে ওই স্তূপাকৃত বালু ভেকু দিয়ে প্রতিদিন শত শত ট্রাক,  ড্রাম ট্রাকে করে বিক্রি করে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। এতে করে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছেন। গোহালিয়াবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হাই আকন্দ বলেন, বেলটিয়ায় আমার দুটি বালু মহল আছে। একটি প্লাস্টারের মোটা বালু, অন্যটি বিটবালু যার একটি মোটা বালু। 
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, নদীর বালু পানি উন্নয়ন বোর্ড অথবা অন্য যে কোনো ব্যক্তিই উত্তোলন করুক না কেন তা সরকারি সম্পদ। নদীর উত্তোলিত বালু পরিমাপ করে নিলামে বিক্রি করা হয়ে থাকে। এ বছর পাউবো টাঙ্গাইল কালিহাতীতে কোনো খনন কাজ করেনি। তবে গত বছর পাউবো নারায়ণগঞ্জ ড্রেজিং বিভাগ ওই এলাকায় কিছু বালু উত্তোলন করেছিল। যা আমরা কালিহাতী উপজেলা প্রশাসনকে বুঝিয়ে দিয়েছি। তারা টেন্ডারে ওই বালু বিক্রি করার কথা।
কালিহাতী উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহাদাত হুসেন বলেন, শ্যামশৈলের বালু সম্ভবত নিলামকৃত। ওই বালু নিলামকৃত নয় বলে নিশ্চিত করা হলে তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের সালে কথা বলতে বলেন এবং বিষয়টি সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) অবহিত করার পরামর্শ দেন। পরে সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) অবহিত করলে দ্রুতই ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান।

মহাদেও নদী 
নিজস্ব সংবাদদাতা, নেত্রকোনা থেকে জানান, কলমাকান্দা উপজেলার সীমান্তবর্তী মহাদেও নদী থেকে অবৈধভাবে বালু তোলার অভিযোগ ওঠেছে একটি প্রভাবশালীর চক্রের বিরুদ্ধে। চক্রটি শুধু বালুই তুলছে না, বালু তোলা এবং পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত প্রতিটি নৌকা থেকে মোটা অংকের চাঁদাও আদায় করছে। 
জানা গেছে, নদী ভাঙনসহ পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কায় চলতিবছর মহাদেও নদীর বালুমহালের ইজারা স্থগিত রেখেছে জেলা প্রশাসন। অন্যদিকে আদালতের নির্দেশে পার্শ্ববর্তী দুর্গাপুর উপজেলার সোমেশ্বরী নদীর বালুমহালগুলোও বেশ কিছুদিন ধরে বন্ধ। 
এ কারণে স্থানীয় বাজারে নির্মাণশিল্পের এই কাঁচামালটির সংকট দেখা দিয়েছে। দ্বিগুণ-তিনগুণ হারে বেড়ে গেছে দাম। আর দাম বৃদ্ধির এই সুযোগটিকে কাজে লাগাতেই রংছাতি ইউনিয়ন পরিষদের এক মেম্বারের নেতৃত্বে গড়ে ওঠেছে একটি চক্র। তারা রাতের আঁধারে মহাদেও নদী থেকে সনাতন পদ্ধতিতে বালু তুলে তা ৪০-৫০টি ইঞ্জিনচালিত নৌকার সাহায্যে বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রংছাতি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান খান পাঠান বাবুল অভিযোগটির সত্যতা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘চক্রটি সতের হাতি, মৌতলা প্রভৃতি এলাকা থেকে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ বালু তুলে নিচ্ছে। আর এতে সরকার রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে।’ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রভাবশালী চক্রটি শুধু বালু তুলেই ক্ষান্ত নেই, প্রশাসন, পুলিশ ও সাংবাদিকদের ‘ম্যানেজ’ করার কথা বলে বালু তোলা এবং পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত প্রতিটি নৌকা থেকে মোটা অংকের চাঁদাও তুলছে। স্থানীয়রা তাদের বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস পাচ্ছে না।

কলমাকান্দা উপজেলা প্রেস ক্লাবের সদস্যসচিব কামাল পাশা বলেন, ‘বিষয়টি শোনার পর আমরা উপজেলা প্রশাসনকে জানিয়েছি।’ উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আসাদুজ্জামান ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) শহীদুল ইসলাম গত সোমবার রাত ১২টার দিকে ডাইয়ারকান্দা এলাকায় মহাদেও নদীতে অভিযান পরিচালনা করে মমিন, ছানাউল্লাহ, হাকিম ও লাদেন নামের চার বালু ব্যবসায়ীকে আটকসহ চারটি বালুবোঝাই নৌকা জব্দ করেন। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জড়িতদের কাছ থেকে ৫৪ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েক বাসিন্দা বলেন, ‘প্রশাসন অভিযান পরিচালনার পরও চক্রটি থেমে নেই। তারা অবাধেই বালু তুলছে। মহাদেও নদীর দুই পাড়ে অনেক বাঙালি ও আদিবাসী জনবসতি। নদী থেকে বালু তোলা হলে পরিবেশ বিপর্যয়সহ বাড়িঘরে ভাঙন দেখা দিতে পারে। তাই এই নদীর বালু তোলা বন্ধের দাবিতে ইতোপূর্বে বহুবার মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করা হয়েছে।’

×