ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১৮ আশ্বিন ১৪৩১

ভাঙন থেকে সুরক্ষা

আবুল বাশার

প্রকাশিত: ০১:৫০, ২৬ জুলাই ২০২৪

ভাঙন থেকে সুরক্ষা

শরীয়তপুর জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায়

শরীয়তপুর জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় পদ্মাপাড়ে জয় বাংলা এভিনিউ, সোনার বাংলা এভিনিউ, রূপসী বাংলা এভিনিউ ও স্বাধীন বাংলা এভিনিউ নির্মাণে বন্যা ও প্রমত্ত পদ্মা নদীর ভাঙন থেকে সুরক্ষা পাচ্ছে জেলার নদী তীরবর্তী এলাকার ৬ লক্ষাধিক মানুষ। জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিস সূত্রে জানা গেছে, শরীয়তপুর জেলার জাজিরা ও নড়িয়া উপজেলায় পদ্মা নদীর ডান তীর রক্ষা প্রকল্পের (প্রথম সংশোধিত) আওতায় নড়িয়াতে পদ্মাপাড়ে ১ হাজার ৪শ’ ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে জাজিরা উপজেলার সফি কাজীর মোড় থেকে নড়িয়া উপজেলার সুরেশ^র মোড় পর্যন্ত ১০.২০ কিলোমিটার দীর্ঘ জয় বাংলা এভিনিউ নামে বেড়িবাঁধ ও ওয়াকওয়ে নির্মাণ, সখিপুরে ৫শ’ ৯২ কোটি টাকা ব্যয়ে ভেদরগঞ্জ উপজেলার তারাবুনিয়া স্টেশন বাজার হতে ধুলারচর মনাই হাওলাদার বাজার পর্যন্ত ৫ দশমিক ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সোনার বাংলা এভিনিউ নামে বেড়িবাঁধ, জাজিরাতে ৮শ’ ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে জাজিরা উপজেলার মাঝিরঘাট জিরো পয়েন্ট হতে সফি কাজীর মোড় পর্যন্ত ৮ দশমিক ৬৭ কিলোমিটার দীর্ঘ রূপসী বাংলা এভিনিউ নামে বেড়িবাঁধ এবং নড়িয়ার চরআত্রা-নওপাড়ায় ৫শ’ ৯৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ১২ দশমিক ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ স্বাধীন বাংলা নামে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে।

এসব বেড়িবাঁধের কোনো কোনোটির কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে আবার কোনোটার কাজ শতকরা ৯৬ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। এসব বেড়িবাঁধ নির্মাণ করায় পদ্মা নদীর পাড় সংলগ্ন এলাকার ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, হাট-বাজার ও ফসলি জমিসহ সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা ও সম্পদ নদী ভাঙন থেকে রক্ষা পাচ্ছে।

এতে পদ্মা নদীপাড় সংলগ্ন এলাকায় বসবাসরত নড়িয়া উপজেলার মুলফৎগঞ্জ, কেদারপুর, চন্ডিপুর, সুরেশ^র, নওপাড়া, চরআত্রা, মোক্তারের চর, জাজিরা উপজেলার কুন্ডেরচর, বিলাশপুর, নাওডোবা, কলমীরচর, ভেদরগঞ্জ উপজেলার কাঁচিকাটা, ধুলারচরসহ পদ্মা নদীর আশেপাশের ৬ লক্ষাধিক লোক বন্যা ও নদী ভাঙন থেকে সুরক্ষা পাচ্ছে। জানা গেছে, শুধু ২০১৮ সালে নড়িয়াতে সাড়ে পাঁচ হাজার ঘরবাড়িসহ, রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, ফসলি জমি ও বহু সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা নদীতে বিলীন হয়েছে। নড়িয়াতে প্রমত্ত পদ্মার ভাঙা-গড়ার আতঙ্কের এলাকায় এখন ভাঙন রোধ হয়ে সেখানে গড়ে উঠছে সুরম্য অট্টালিকা, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নানা প্রতিষ্ঠান।

গত ৫২ বছর যাবৎ যেখানে পদ্মার ভাঙাগড়ার সঙ্গে মানুষ লড়াই করে কোনোরকম টিকে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছিল, সেখানে আজ ভাঙন রোধ হওয়ায় মানুষ নিরাপদে বসবাস করছে। ভ্রমণপিপাসুদের জন্য পরিণত হয়েছে আনন্দের পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে। এ ছাড়া জেলা সদরের পশ্চিম পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া কীর্তিনাশা নদীর ডান ও বাম তীর রক্ষার জন্য নড়িয়া থেকে মাদারীপুর জেলার কালকিনি পর্যন্ত প্রায় ২০টি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। এতে হাজার হাজার লোক নদী ভাঙন ও বন্যার হাত থেকে সুরক্ষা পাবে। শরীয়তপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য সাবেক পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম বলেন, ৬ বছর আগেও নড়িয়ায় নদীভাঙন ছিল।

হাজার হাজার মানুষ ভিটেমাটি হারা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বদৌলতে এখন আর নড়িয়ায় নদীভাঙন নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী প্রজন্ম নিয়ে ভাবেন এবং তিনি দূরদর্শী পদক্ষেপ নেন। সেজন্য তিনি ডেল্টাপ্লান-২১০০ বাস্তবায়নেরও ঘোষণা দিয়েছেন। এ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে সারাদেশে নদী ভাঙন ও জলাবদ্ধতার কোনো সমস্যাই থাকবে না। 
শরীয়তপুর জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম আহসান হাবীব বলেন, আমরা বর্তমান সরকারের আর্থিক সহযোগিতায় নানা উন্নয়নমূলক কাজ করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে সফলতার সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে নদীতীর সংরক্ষণ ও ড্রেজিং কাজ করায় নদী ভাঙন প্রতিরোধ করা হয়েছে। এ এভিনিউগুলো নির্মাণ করায় একদিকে যেমন নদীভাঙন প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে, অন্যদিকে বন্যার কবল থেকে এ অঞ্চলের লোকজন রক্ষা পাচ্ছে। এতে এলাকার আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা, নদীর প্রবাহ স্বাভাবিক ও মূল চ্যানেল বজায় রয়েছে। তা ছাড়া এলাকার সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও পর্যটন শিল্পের বিকাশ লাভ করেছে। এ ছাড়া জেলার বিভিন্ন এলাকায় মরা খাল পুনর্খননের মাধ্যমে বন্যা নিয়ন্ত্রণ, সেচ ও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন হয়েছে। মৎস্য সম্পদ উন্নয়নসহ পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা এবং ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। 
আবুল বাশার, শরীয়তপুর

×