ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ৯ কার্তিক ১৪৩১

নবজাতকের খবর শুনলেই গাছের চারা নিয়ে হাজির দেলোয়ার

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, পটুয়াখালী

প্রকাশিত: ১২:৪৩, ১৬ জুন ২০২৪

নবজাতকের খবর শুনলেই গাছের চারা নিয়ে হাজির দেলোয়ার

সম্মাননা হাতে দেলোয়ার।

বিত্তবান, প্রভাবশালী কিংবা কোন জনপ্রতিনিধি নন। নেই কোন পরিচিতি। একজন শ্রমজীবী মানুষ। কলাপাড়ায় শেখ কামাল সেতুর টোল প্লাজায় কাজ করেন। পুরো নাম দেলোয়ার হোসেন। তবে দুলু নামেও চেনেন স্থানীয়রা। অর্থবিত্ত না থাকা এ মানুষটির রয়েছে পরিবেশ রক্ষায় একটি অদম্য মন। আর দৃঢ় মানসিকতা। 

সেই পুঁজির ওপর ভর করে দেলোয়ার হোসেন পরিবেশ রক্ষায় ব্যতিক্রমধর্মী কাজ করে যাচ্ছেন। তার নিজ গ্রাম কলাপাড়ার সলিমপুরে কোন নবজাতকের জন্ম হলেই ওই পরিবারের জন্য পাঁচটি গাছের চারা নিয়ে হাজির হন। নিজ হাতে রোপন করে আসেন। 

২০১৯ সাল থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত সলিমপুর ও নীলগঞ্জ গ্রামের অন্তত ১২৩ নবজাতকের জন্য এমনভাবে বৃক্ষের চারা রোপন করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। দেলোয়ার জানান, মেয়ে সন্তান হলে পাঁচটি কাঠ জাতীয় গাছের চারা এবং ছেলে সন্তান হলে তিনটি ফলদ ও দুইটি কাঠ জাতীয় গাছের চারা রোপন করে দিয়ে আসেন। তার মতে মেয়ে সন্তান ১৫-১৬ বছরে বিয়ে হয় আর এই সময়ে অন্তত দুই-তিনটি গাছ বড় হলেও দরিদ্র পরিবারের কিছু টাকার যোগান দিতে পারবে গাছগুলো।

স্ত্রী মোসাম্মৎ ইতি বেগম, তিন ছেলে ও এক শিশু কন্যা নিয়ে দেলোয়ারের জীবন জীবিকা। নিতান্ত দরিদ্র ঘরের সন্তান। টানাপোড়েনের মধ্যেই কাটান। এক সময় ট্রাক ড্রাইভার ছিলেন। চিটাগংয়ের একটি বৃক্ষরোপন অনুষ্ঠানে গিয়ে ওখানকার সাবেক মেয়র আ.জ.ম নাসিরের বক্তব্য শুনে তিনি বৃক্ষ রোপণের গুরুত্ব সম্পর্কে বুঝতে পারেন। এরপরে বাড়িতে ফিরে সবুজ পৃথিবী গড়ার কাজে নামেন। ব্যতিক্রমধর্মী এ পরিকল্পনা করেন। যেই ভাবনা সেই কাজ। 

এ দুই গ্রামে কোন নবজাতকের জন্মের খবর পেলেই সেখানে তিনি গাছের চারা নিয়ে ছুটে যান। নিজের খরচে সবুজ পৃথিবী গড়ার চেষ্টা করছেন। এজন্য তার সদ্য জন্মনেয়া একজন সন্তানের জন্য দুই শ’ থেকে সাত শ’ টাকা খরচ হয়। দেলোয়ারের বিশ্বাস একটি মেয়ে শিশুর বিয়ে পর্যন্ত তিনটি গাছও যদি বেচে থাকে তাইলে তা বিক্রি করে খরচের কিছুটা যোগান দিতে পারবেন ওই পরিবার।

দেলোয়ার আরও জানান, প্রথম দিকে বিতরণ করা ফলদ জাতীয় চারা বিতরণ করা পরিবারগুলো তাকে এখন ফলফলাদি উপহার দেয়। তখন মনে প্রশান্তি খুঁজে পান। ২০২০ সালে তিনি পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে পুর¯কারও পেয়েছেন। দেলোয়ারের বিশ্বাস পরিবেশের উন্নয়নের পাশাপাশি গাছের চারা বিতরণকারী পরিবারের মধ্যে কিছুটা হলেও আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে। দেলোয়ারের টার্গেট নীলগঞ্জের মোট পাঁচটি গ্রামে তার এই পরিবেশ উন্নয়ন কাজ চলমান রাখবেন। 

এই কাজের সাফল্যের জন্য দেশের পরিবেশবাদী সংগঠন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) এবং নদী ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করা সংগঠন ওয়াটার কিপার্স বাংলাদেশের উদ্যোগে মঙ্গলবার দেলোয়ারকে ব্যক্তি পর্যায়ে ‘ সবুজ সাথী সম্মাননা-২০২৪’ প্রদান করা হয়েছে। দুপুরে কলাপাড়া প্রেস ক্লাবের ইঞ্জিনিয়র তৌহীদুর রহমান মিলনায়তনে এই সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন কলাপাড়ার পৌর মেয়র বিপুল চন্দ্র হাওলাদার। তুলে দেন কিছু উপহার সামগ্রী।


পরিবেশ যোদ্ধা শ্রমজীবী দেলোয়ার হোসেন জানান, বড় সন্তান রাব্বি গ্যারেজ মিস্ত্রিী হিসেবে কাজ করছে। মেজ ছেলে ১২ বছর বয়সী রাহাত ৭ম শ্রেণীতে পড়ছে। ১০ বছর বয়সী ফারুক ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী ও ছোট্ট সালদা মাত্র চার বছর বয়সের শিশুকন্যা। মাত্র ৩০ শতক জমি রয়েছে এ মানুষটির। আর্থিক স্বচ্ছলতা নেই। তারপরও তার রয়েছে সমাজের জন্য পরিবেশের জন্য কিছু করতে হলে দরকার শুধু একটি সুন্দর মনের আর প্রবল মানসিক শক্তি থাকা  শ্রমজীবী এই দেলোয়ার হোসেন হতে পারে পরিবেশ কর্মীদের জন্য অনুপ্রেরণা।

দেলোয়ারের ইচ্ছা তিনি তার ইউনিয়ন নীলগঞ্জের আরও তিনটিসহ মোট পাঁচটি গ্রামে তার পরিবেশ সেবার পরিধি বাড়াবেন। এই দেলোয়ারকে প্রয়োজন এখন উৎসাহ দিয়ে আরও এগিয়ে নেয়া প্রয়োজন, এমনটি জানালেন কলাপাড়া প্রেস ক্লাবের সভাপতি হুমায়ুন কবির।
 

 এসআর

×