ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৬ জুন ২০২৪, ২ আষাঢ় ১৪৩১

আমের কারবারে চাঙ্গা রাজশাহীর অর্থনীতি

প্রকাশিত: ০১:১৩, ২৪ মে ২০২৪

আমের কারবারে চাঙ্গা রাজশাহীর অর্থনীতি

বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে সুইট কাটিমন আমের বাম্পার ফলনে সফল চাষী মুকুল 

গুটি জাতের আম পাড়ার মধ্য দিয়ে গেল বুধবার (১৫ মে) থেকে শুরু হলো আমের কারবার। আগামী তিনমাসের বেশি সময় ধরে এ অঞ্চলে বিশেষ করে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ জেলায় আম পাড়া ও বাজারজাতকরণে ব্যস্ত থাকবেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা। ইতোমধ্যে এ অঞ্চলে আমের হাঁকডাক শুরু হয়ে গেছে। আমের কারবারে এ অঞ্চলে অর্থনীতি যেমন সম্প্রসারিত হয় তেমনি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় বহু মানুষের।  

ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার অনুযায়ী গুটি জাতের পর পর্যায়ক্রমে বিখ্যাত সব আম যেমন গোপালভোগ, রানিপছন্দ, খিরসাপাত, লক্ষণভোগ, ল্যাংড়া-ব্যানানা ম্যাঙ্গো, আম্রপালি, ফজলি, বারি আম ৪, আশ্বিনা, গৌড়মতি, ইলামতি আম পাড়া হবে। এ ছাড়া কাটিমন ও বারি আম-১১ সারা বছর সংগ্রহ করা যাবে। আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার অন্তত এক সপ্তাহ আগেই গুটিজাতের আম পাড়া শুরু হয়েছে।

তবে এবার গাছে আম কম। বাজারে গুটি জাতের আম ১৩০০ থেকে ১৫০০ টাকা মণ বিক্রি করা হচ্ছে। রাজশাহী কৃষি বিভাগ জানায়, এ বছর রাজশাহী জেলায় ১৯ হাজার ৬০২ হেক্টর জমিতে আম চাষ হচ্ছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬০ হাজার ১৬৪ মেট্রিক টন। রাজশাহীর বাগান মালিকরা এরই মধ্যে আম পাড়া জাল, জালতা, টুকরি ও ক্যারেট নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

গাছে উঠে আমও পাড়ছেন কর্মচারীরা। সেখান থেকে আম নামিয়ে প্যাকিং করা হচ্ছে। শুরুতে গুটি ও কাঁচা মিষ্টি জাতের আম নামাচ্ছেন তারা। প্রথম আম নামানোর কারণে বাগান থেকেই কিনে নিয়ে যাচ্ছেন অনেকে। 
স্থানীয় আম চাষিরা জানান, গাছে আম বড় হয়েছে। তবে এখনো পাক ধরেনি। এখন গাছ থেকে বেছে বেছে আম পাড়তে হচ্ছে। আমের বাজার জমতে আরও দেড় সপ্তাহ সময় লাগবে। ঝড়-বৃষ্টির ক্ষতি না হলে এবার ভালো লাভ হবে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। এবার রাজশাহী থেকে অন্তত ৩০০ কোটি টাকার বেশি আম রপ্তানির টার্গেট নেওয়া হয়েছে।

তাই গাছে গাছে চলছে আমের ফ্রুট ব্যাগিং। রাজশাহীর আম খুবই সুমিষ্ট হওয়ায় দেশ-বিদেশে এর চাহিদাও ব্যাপক। প্রতি বছরই এখানকার ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতিতে উৎপাদন করা আম ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে রপ্তানি করা হয়। যা থেকে আয় হয় বৈদেশিক মুদ্রা। এবারও ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতিতে কয়েকগুণ বেশি আম উৎপাদন করা হচ্ছে। ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতিতে উৎপাদিত আমগুলো বিদেশের বাজারে বিক্রি করা গেলে এ বছর আয় হবে সব মিলিয়ে ৩০০ কোটি টাকারও বেশি।

রাজশাহী জেলায় আম উৎপাদনে শীর্ষে বাঘা উপজেলা। বাঘায় জেলার এক-তৃতীয়াংশ আম উৎপাদন হয়ে থাকে। খুব সুমিষ্ট হওয়ায় এ উপজেলার আমের বিদেশেও চাহিদা রয়েছে। কয়েক বছর থেকে এই উপজেলা থেকে আম রপ্তানি করা হচ্ছে। এ বছরও আম রপ্তানিতে ঝুঁকছেন কৃষকরা। শুধু বাঘাতেই নয়, বিদেশে রপ্তানির লক্ষ্যে ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতি অনুসরণ করে আম উৎপাদন করছেন রাজশাহী নগরীর তেরখাদিয়ার শান্তিবাগ এলাকার চাষি আনোয়ারুল হক।

তিনি ইতোমধ্যে গাছে গাছে ফ্রুট ব্যাগিং শুরু করেছেন। আনোয়ারুল হক বলেন, বাগান থেকে পর্যায়ক্রমে গোপালভোগ, খিরসাপাতি, ল্যাংড়া, ফজলি, আম্রপালি ও বারি-৪ জাতের আম রপ্তানি করা হয়। এসব আম ইংল্যান্ড, সুইডেন, ইতালি, জার্মানি, ফ্রান্স ও সুইজারল্যান্ডে পাঠানো হয়।
মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী

থোকায় থোকায় ঝুলছে কাটিমন
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে দৈবজ্ঞহাটি ইউনিয়নের খালকুলা গ্রামে হালদার রুহুল মমিন ওরফে মুকুলের বাগানজুড়ে থোকায় থোকায় ঝুলছে আম, বাম্পার ফলনে চাষির মুখে হাসি। বারোমাসী সুইট কাটিমন আম এখন সারা জাগিয়েছে গোটা জেলায়।  সরেজমিনে উপজেলার খালকুলা গ্রামে দেড় একর জমির ওপরে থাইল্যান্ডের বারোমাসী এ সুইট কাটিমন প্রজাতের আমের এ বছরে বাম্পার ফলন ফলিয়েছে সফল চাষি হালদার রুহুল আমিন ওরফে মুকুল।

বাগানঝুড়ে তার ৩ শতাধিক গাছে একদিকে থোকায় থোকায় ঝুলছে আম, অন্যদিকে প্রতিটি ডগায় আমের মুকুলের সমারহ। এ সফল চাষি ২০২০ সাল থেকে তার বাগানে আমের চাষ করছেন। বিগত অন্যসব বছরের চেয়ে এবারে ফলন হয়েছে দ্বিগুণ। আর মাত্র ১ সপ্তাহ পরে এ বাগানের পাকা আম বাজারজাত হবে দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায়।

ভোক্তারা এখনই মোবাইল ফোনে আম ক্রয়ের অগ্রিম বায়না করছেন। চাহিদাও রয়েছে প্র্রচুর, অব সীজনে প্রতিকেজি আম বিক্রি করতেন ৫শ’ টাকায়, এখন সীজনে বিক্রি হচ্ছে ১শ’ ৫০ টাকা কেজি দরে। গতবছর এ বাগান থেকে ২ লাখ টাকার আম বিক্রি হয়েছে, এ বছর চাষি ধারণা করছেন, ৫০ থেকে ৬০ মণ আম ক্রেতাদের হাতে তুলে দিতে পারবেন তিনি। বিক্রি নামতে পারে প্রায় ৪ লাখ টাকা।    
সফল এ চাষি হালদার রুহুল মমিন মুকুল বলেন, তার বাবা আবুল কাশেম হালাদার একজন সরকারি চাকরিজীবী ছিলেন। তারপরেও তিনি অফিস থেকে এসে মাঠে যেতেন, নিজেদের উৎপাদিত ফসলের পরিচর্যা করতেন। পিতার কাছ থেকেই শিখেছেন নিজের পায়ে দাঁড়ানো। দেশের মাটি ফেলে বিদেশে গিয়ে অনেকে অর্থ উপার্জন করছেন, ছোট বেলা থেকেই তার ইচ্ছা দেশের মাটিতে বসেই সোনা ফলানো উদ্যোক্তা সৃষ্টি হওয়া।

নিজের অক্লান্ত পরিশ্রমে আজকের এ সফলতা, আমের বাম্পার ফলন। সম্পূর্ণ বিষমুক্ত কোনো প্রকার রাসায়নিক সার ছাড়াই এ কাটিমন আমের চাষ করেছেন তিনি। কোনো বেপারী বা ফরিয়াদের হাতে নয়, সরাসরি ভোক্তাদের হাতে পৌঁছে দিতে চান তার উৎপাদিত এ কাটিমন আম। ভোক্তারা তাদের চাহিদা অনুযায়ী সরাসরি এ চাষির ব্যবহৃত ০১৭১৪-৫০৯৩৩৭ নম্বরে যোগাযোগ করে অর্ডার করলে কুরিয়ারের মাধ্যমে পৌঁছে দেবেন আম।  

তিনি আরও বলেন, এ আমের বৈশিষ্ট্য সুস্বাধু মিষ্টি, আমের আঁটি খুবই পাতলা কোনো প্রকার আঁশ নেই ও পোকামুক্ত। ১৫-২০ দিন কোনো প্রক্রিয়া ছাড়াই এ আম সংরক্ষণে রাখা যাবে। এ সম্পর্কে দৈবজ্ঞহাটি ইউনিয়ন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মশিউর রহমান বলেন, ইউনিয়নের ৫ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কাটিমনসহ বিভিন্ন প্রজাতির আম চাষ করেছেন কৃষক। এবারে প্রতিটি বাগানেই আমের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। 
উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর থেকে নির্দিষ্ট সময়ে এ সকল চাষিদের উৎসাহ বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে বিভিন্ন সময় সহযোগিতা ও পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও এ সফল চাষিদেরকে কৃষি অফিস থেকে প্রদর্শনী দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলে এ কর্মকর্তা জানান। 
গণেশ পাল, মোরেলগঞ্জ, বাগেরহাট

×