ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

সুন্দরবনের গহীন নদীতে অবমুক্ত

কুমিরের পিঠে স্যাটেলাইট চিপ

নিজস্ব সংবাদদাতা, মোংলা

প্রকাশিত: ২৩:১৫, ১৪ মার্চ ২০২৪

কুমিরের পিঠে স্যাটেলাইট চিপ

মোংলায় কুমিরের পিঠে স্যাটেলাইট চিপ বসিয়ে সুন্দরবনে অবমুক্ত

এশিয়া মহাদেশের মধ্যে এই প্রথম নোনা পানির কুমিরের পিঠে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার বসিয়ে সুন্দরবনের গহীন নদীতে অবমুক্ত করা হয়েছে। বুধবার রাতে কুমির বিশেষজ্ঞ শ্রীলঙ্কার ড. রু-সোমাওয়ারি ও অস্ট্রেলিয়ার ড. পাউল সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের কুমির ‘জুলিয়েট’ এবং যশোরের মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাড়ির এলাকা থেকে উদ্ধার করা কুমির ‘মধুর’ শরীরে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার ডিভাইস বসিয়ে গহীন সুন্দরবনের ভদ্রা নদীতে অবমুক্ত করা হয়। এ সময় বন বিভাগ ও আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) এ কাজে তাদের সহযোগিতা করেন।  
করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবীর জানান, কুমির দুটির পিঠে এ স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার বসানোর মাধ্যমে উন্মুক্ত কুমিরের গতিবিধি, চলাচল ও এর আগে যেসব কুমির নদীতে অবমুক্ত করা হয়েছে তাদের আচরণ, লবণ পানিতে টিকে থাকা ও কুমিরের ডিম দেওয়া ছাড়াও তাদের বাচ্চা থেকে বংশবৃদ্ধি সংক্রান্ত তথ্য (সারভাইভাল রেট) জানা যাবে। এ দুটি কুমিরের পাশাপাশি এক সপ্তাহের মধ্যে আরও তিনটি কুমিরের শরীরে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার ডিভাইস বসিয়ে বনের নদীতে অবমুক্ত করার কথা রয়েছে বলে জানায় আজাদ কবীর।
এ স্যাটেলাইট চিপের সময়সীমা আগামী দেড় বছর এ কার্যক্রমের মাধ্যমে সুন্দরবনে উন্মুক্ত করা নোনা পানির কুমিরের আচরণ, গতিবিধি, চলাচল ও লবণ পানিতে তাদের বংশবৃদ্ধি কৌশল ও অস্তিত্ব টিকে থাকার যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করা হবে এ স্যাটেলাইট ডিভাইসের মাধ্যমে। প্রতি আধ ঘণ্টা পর পর এর তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করা হবে। তা থেকে নির্ধারণ করা হবে সুন্দরবনের মধ্যে বসবাস করা নোনা পানির কুমিরের তথ্য।

বুধবার সন্ধ্যায় বিকেলে সুন্দরবনের ভদ্রা অফিসে বসে ট্রান্সমিটার বসানোর কার্যক্রম শেষ করা হয়। পরে কুমির অবমুক্ত কার্যক্রম শুরু করা হয় রাতে, এগুলোকে বনের ভদ্রা নদীতে চরে অবমুক্ত করেন এ বিশেষজ্ঞ টিম। কিছুক্ষণ পর কুমির দুটি নিজ ইচ্ছায় নদীতে নেমে যায়, তবে কুমিরের পিঠে অস্ত্রোপাচার করে বসানো স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার কিছুটা অস্বস্তিকর হলেও কিছুদিন যাওয়ার পর তা ঠিক হয়ে যাবে বলেও জানায় এ টিমের সদস্যরা।
শুরু থেকে এ কার্যক্রমের সময় উপস্থিত ছিলেন, সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মুহাম্মদ নুরুল করিম, সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন, বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা নির্মল কুমার পাল, আইইউসিএনের কান্ট্রি ডিরেক্টর সরোয়ার আলম দীপু, মৎস্য বিশেষজ্ঞ মফিজুর রহমান, করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবীরসহ বন বিভাগের অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও তাদের সঙ্গে ছিলেন।

সুন্দরবন পর্যটক স্পর্ট ও করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কুমির বিশেষজ্ঞ হাওলাদার আজাদ কবীর আরও বলেন, মিষ্টি পানির ও নোনা পানির কুমির প্রায়ই বিলুপ্তির পথে। তাই নোনা পানির কুমিরকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য পুরো সুন্দরবনে বাংলাদেশের মধ্যে একটি মাত্র সরকারি কুমির প্রজনন কেন্দ্র করমজল। সেখানে ২০০২ সাল থেকে কুমিরের ডিম থেকে বাচ্চা ফুটিয়ে লালন-পালন করে তা বড় বানিয়ে প্রতিবছর কমবেশি সুন্দরবনের নদী ও খালে অবমুক্ত করা হয়।

এর আগে বাটাগুড় বাস্কা কচ্ছপের পিঠে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার বসিয়ে সুন্দরবনে অবমুক্ত করা হয়েছিল। এবার কুমিরের পিঠে স্যাটেলাইট ডিভাইস বসানো হলো, এ কুমির নোনা পানির মধ্যে বসবাস করা, চলাচল, একে অপরের সঙ্গে আচরণ ও গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা যাবে এ ডিভাইসের মাধ্যমে। পর্যায়ক্রমে আরও অবমুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে বন বিভাগের বলে জানায় বন বিভাগের এ কর্মকর্তা। 

অবস্থান কর্মসূচি
সুন্দরবন সংলগ্ন নদী-খাল বিষমুক্ত ও শিল্প দূষণমুক্ত করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘ধরা’। বৃহস্পতিবার দুপুরে আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবস উপলক্ষে ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা), ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ ও পশুর রিভার ওয়াটারকিপার আয়োজিত মোংলা শিল্প এলাকার পশুর নদীর পাড়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা।

×