ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

মসিক নির্বাচন

পোস্টারঝড়ে টালমাটাল ভোটের হাওয়া ॥ বিব্রত টিটু

স্টাফ রিপোর্টার, ময়মনসিংহ

প্রকাশিত: ০০:১৭, ৩ মার্চ ২০২৪

পোস্টারঝড়ে টালমাটাল ভোটের হাওয়া ॥ বিব্রত টিটু

ময়মনসিংহ সিটি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী ইকরামুল হক টিটু ও শহিদুল ইসলাম স্বপন

পাল্টাপাল্টি পোস্টারের ঝড়ে টালমাটাল হয়ে উঠেছে ময়মনসিংহ সিটির ভোটের হাওয়া। ময়মনসিংহ সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে উন্নয়ন বঞ্চনার বিপরীতে উন্নয়ন বিবরণের চিত্র নিয়ে নগরজুড়ে সাটানো বাহারি পোস্টার ভোটের পরিবেশকে সরগরম করে তুলেছে। মেয়র প্রার্থীদের পক্ষ থেকে এসব পোস্টার নিয়ে নগরবাসীর মধ্যে মিশ্রপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।

ভোটের আগে উন্নয়ন বঞ্চনার পোস্টার নিয়ে সদ্য সাবেক মেয়র এবং এবারের নির্বাচনে টেবিল ঘড়ি প্রতীকের পুনরায় মেয়রপ্রার্থী ইকরামুল হক টিটু বিব্রত হলেও প্রতিদ্বন্দ্বী অপর মেয়র প্রার্থীরা এ নিয়ে আছেন ফুরফুরা মেজাজে। সদ্য সাবেক মেয়র ইকরামুল হক টিটু জানান, ময়মনসিংহ সিটির লোগো ব্যবহার করে ভোটের আগে এই ধরনের অপপ্রচার কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ‘একটি মহল আমার জনপ্রিয়তায় ঈশ্বান্বিত হয়ে এই ধরনের অপপ্রচারে নেমেছেন’ বলেন, মেয়রপ্রার্থী ইকরামুল হক টিটু।  

সাবেক এই মেয়র আরও জানান, তার মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী ময়মনসিংহ নগরীর উন্নয়ন কাজে ১ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। করোনা পরিস্থিতি ও রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যেও  ইতোমধ্যে ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩৫৮ কিমি রাস্তাঘাট ও ২৪৯ কিলোমিটার ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন কাজ শেষ হয়েছে। টেন্ডারের মাধ্যমে আরও ৪০০ কোটি টাকার উন্নয়নের কাজ চলমান রয়েছে। এর আগে ১৭১ কিলোমিটার সড়কে এলইডির আধুনিক বাতি স্থাপন করার কাজ শেষ হয়েছে।

তারপরও বরাদ্দের টাকা নয় ছয় নিয়ে পোস্টার সাঁটানো তাকে হেয় করা ছাড়া আর কিছুই নয় বলে জানান তিনি। বরাদ্দের পুরো টাকায় চলমান উন্নয়ন কাজ শেষ হলে বদলে যাবে ময়মনসিংহ নগরীর অচেনা চেহারা জানান ইকরামুল হক টিটু। হাতি প্রতীকের মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাদেকুল হক খান মিল্কি টজু জানান এসব পোস্টারে সিটি কর্তৃপক্ষের দুর্নীতি ও নগরবাসীর বঞ্চনার চিত্র ফুটে উঠেছে।

নগরবাসী এর পরিবর্তন চায়। জবাবদিহিমূলক, যানজট ও জলাবদ্ধতা মুক্ত আধুনিক ক্লিন ও গ্রিন সিটি গড়তেই এবারের নির্বাচনে তিনি মেয়রপ্রার্থী হয়েছেন বলে জানান। ময়মনসিংহ সিটিকে দুর্নীতি মুক্ত করতে মেয়রপ্রার্থী হয়েছেন বলে জানান ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ঘোড়া প্রতীকের এহতেশামুল আলম। তিনি বলেন, নগরবাসী পরিবর্তন চায়।
ময়মনসিংহ সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর রাতারাতি নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডের প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে অলিগলিতে সাঁটানো সিটি কর্তৃপক্ষের নানা অনিয়ম-দুনীতি ও উন্নয়ন বঞ্চনার ছবিসহ পোস্টার নগরবাসীর নজর কাড়ে। মেয়রপ্রার্থী অ্যাডভোকেট সাদেকুল হক খান মিল্কি টজুর ছবিসহ উন্নয়ন বঞ্চনার এসব পোস্টারে দেখা যায় নগরীর যানজট, জলাবদ্ধতা, ধুলোবালি ও ভাঙ্গাচোরা রাস্তাঘাটের ছবি তুলে ধরা হয়েছে।

পোস্টারে প্রশ্ন রেখে বলা হয় ‘যানজটে জীবন থেমে যাওয়া ধীর গতির ময়মনসিংহ সিটি, কেন এই দুর্বিষহ যাতনা? ‘সামান্য বৃষ্টিতে নদী হয়ে যাওয়া ময়মনসিংহ সিটি’ আমরা কি ডুবে মরব? আকাশে বাতাসে উড়ে যাওয়া ধুলোবালির ময়মনসিংহ সিটি, পেক কাদা আর ভাঙ্গাচোরা রাস্তাঘাটের লক্কর ঝক্কর ময়মনসিংহ সিটি। সচেতন নাগরিক সমাজের নামে সাঁটানো আলাদা পোস্টারে লেখা রয়েছে- দেশে একমাত্র প্রতিষ্ঠান- যেখানে ঠিকাদার ১ জন, মালিক ১ জন, শাসকও ১ জন।

ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও অটোরিক্সার রেজিস্ট্রেশন এবং প্রধানমন্ত্রীর থেকে বরাদ্দের টাকা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। এসব পোস্টারে সিটির দীর্ঘদিনের উন্নয়ন বঞ্চনার চিত্র তুলে ধরা হলেও মূলত মেয়রপ্রার্থী ইকরামুল হক টিটুকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করা হয়। সিটি নির্বাচন ও ময়মনসিংহ সিটি নিয়ে অপপ্রচারের অভিযোগে পোস্টার সাঁটানোর সময় হাতেনাতে আটক করা হয় তিনজনকে এবং পোস্টারের বিপক্ষে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। 
পরবর্তীতে মেয়র প্রার্থী ইকরামুল হক টিটুর পক্ষ থেকে ‘অপপ্রচারের’ জবাব দিতে সাঁটানো হয় নগরজুড়ে পাল্টা পোস্টার। মূলত এসব পোস্টারে সিটি কর্তৃপক্ষের উন্নয়নের চিত্র মেলে ধরা হয় নগরবাসীর সামনে। সাবেক মেয়র ইকরামুল হক টিটুর মেয়াদে বরাদ্দ পাওয়া ১ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকার মধ্যে চলমান প্রায় ৭০০ কোটি টাকার উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরা হয়।

এর মধ্যে নগরীর ৩৫৯ কিমি রাস্তাঘাটের উন্নয়ন, জলাবদ্ধতা দূরীকরণে ২৪৯ কিলোমিটার ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন, ১৭১ কিলোমিটার সড়কে আধুনিক এলইডি বাতি স্থাপন ও জবর দখলমুক্ত ১৬ কিলোমিটার খাল সংস্কারের উন্নয়ন বিবরণ তুলে ধরা হয়। নগরবাসী উন্নয়নের এসব সুফল ভোগ করছে এবং দৃশ্যমান উন্নয়ন দেখছে উল্লেখ করে সাবেক মেয়র ইকরামুল ও টিটো জানান, এসব অপপ্রচারে তার জনপ্রিয়তা ক্ষুণ্ণ হবে না।

×