ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

হালদা পাড়ের মাটি লুট

নিজস্ব সংবাদদাতা, ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম

প্রকাশিত: ২৩:০৮, ১ মার্চ ২০২৪

হালদা পাড়ের মাটি লুট

.

পরিবেশ আইন অমান্য করে রাতের আঁধারে এশিয়ার সর্ববৃহৎ মৎস্য প্রজননকেন্দ্র হালদা নদীর পাড় এবং কৃষিজমির মাটি কেটে বিক্রি করছে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী এবং দুষ্কৃতকারীরা। অন্যদিকে, দিন-দুপুরে চলে হালদা নদী, ধুরুং খাল, সর্তা খাল ফটিকছড়ি খাল থেকে ড্রেজার মেশিন এবং নৌকা দিয়ে বালু উত্তোলন।

এতে একদিকে ঊর্বর জমি বিলীন হচ্ছে, অন্যদিকে নদী খাল ভাঙনের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। এতে যেমন হুমকির মুখে পড়েছে হালদার জীববৈচিত্র্য, তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্যও। সন্ধ্যার পর অন্ধকার নেমে আসলেই মহাযজ্ঞ শুরু হয় উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় মাটিভর্তি শতাধিক ট্রাক চলাচলের। চলে রাতভর। মাটিবাহী এসব ট্রাকের প্রভাব পড়ছে সড়কগুলোতেও। মাটি খেকোদের  দৌরাত্ম্য দিন দিন বেড়েই চলেছে।

সরেজমিনে পরিদর্শন করে এবং খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফটিকছড়ি উপজেলার সুন্দরপুর ইউনিয়নের নাসির মোহাম্মদ ঘাটের বিপরীতে উত্তরে হালদার পাড়, নাজিরহাট পৌরসভা সুয়াবিল ইউনিয়ন পরিষদের সামনে, সুয়াবিল অংশের বিভিন্ন স্থানে, হারুয়ালছড়ি ইউপি, ভূজপুর ইউপিসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষিজমি  থেকে রাতের আঁধারে অবাধে কাটা হচ্ছে মাটি। শুষ্ক মৌসুমে চলে এই ধরনের মাটি কাটা। সম্প্রতি তা  আরো বেড়েছে।

অন্যদিকে, পাইন্দং এলাকা এবং সুয়াবিল এলাকার হালদা অংশ, সর্তা খালের খিরাম অংশ, ধুরুং এবং ফটিকছড়ি খালে ড্রেজার মেশিন এবং নৌকা দিয়ে বালি উত্তোলন করা হচ্ছে। মাটিদস্যুদের দৌরাত্ম্যে ফটিকছড়িতে আশঙ্কাজনক হারে ঊর্বরতা হারাচ্ছে ফসলি জমি। হুমকির মুখে পড়ছে নদী-খাল। দস্যুরা রাতের আঁধারে সাবাড় করে দিচ্ছে ফসলি জমির ওপরের অতি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি সমৃদ্ধ মাটি (টপ সয়েল) এবং নদীর পাড়ের মাটি বালু। মাটি ব্যবসায়ীদের লুট থেকে বাদ যাচ্ছে না মালিকানা জমি, খাস জমি, খাল নদীর পাড়। গভীর গর্ত করে মাটি কেটে নেওয়ায় কৃষিজমি জলাশয়ে পরিণত হয়েছে। দিন দিন কমে যাচ্ছে ফসল উৎপাদন। ফলে পরিবেশ প্রতিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নাসির মোহাম্মদ ঘাটের এক যুবক বলেন, রাত নামলে শুরু হয় মাটি পাচার। ১০-১২টি ড্রাম ট্রাক দিয়ে হালদার পাড় কেটে নিচ্ছে দুষ্কৃতকারীরা। এদের কিছু বলার সাহস কারও নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক আওয়ামী লীগ  নেতা বলেন, দলের লোক হোক বা যেই হোক, ফটিকছড়িতে যেভাবে জমির মাটি এবং বালি তোলা চলছেÑ এসব বন্ধ হওয়া উচিত। এলাকার পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এদের যেভাবেই হোক দমাতে হবে।

উপজেলা কৃষি অফিসার হাসানুজ্জামান বলেন, কৃষিকাজের জন্য টপ সয়েল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি দীর্ঘদিন ধরে প্রাকৃতিকভাবে জৈব ব্যবস্থাপনার ফলে মাটির ওপরের -১০ ইঞ্চি জমির প্রাণশক্তিতে পরিণত হয়। টপ সয়েল সরিয়ে নিলে মাটির গুণাবলী নষ্ট হয়ে যায়। ফলে জমিতে যে মাটি থাকে তা ফসল ফলানোর জন্য উপযুক্ত থাকে না।

তিনি বলেন, টপ সয়েল কাটার ফলে জমির যে ক্ষতি হবে তা ১০০ বছরেও পূরণ করা সম্ভব নয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক বলেন, আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। কিন্তু এত বড় ফটিকছড়িতে সবাই সহযোগিতা না করলে আমার সারাদিন অভিযানই করতে হবে, অফিস করা যাবে না। স্থানীয় মেম্বার-চেয়ারম্যানদের এত করে বলার পরেও তারা আমাদের কোনো ধরনের সহযোগিতা করছেন না। এলাকার মানুষ কষ্ট পাচ্ছে।

×