ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

বীজতলা ও খেত নিয়ে  হতাশা ক্রমেই বাড়ছে

আলু খেতে পচন রোগ চিন্তিত কৃষক

মাহমুদুল আলম নয়ন, বগুড়া অফিস

প্রকাশিত: ২২:৩৬, ১৩ জানুয়ারি ২০২৪

আলু খেতে পচন রোগ চিন্তিত কৃষক

আলুর পচন ঠেকাতে কৃষক মাঠে কীটনাশক ছড়াচ্ছেন

শীতের সঙ্গে কনকনে বাতাস আর কুয়াশার দাপটে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে ওঠার সঙ্গে বগুড়ায় কৃষকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলছে। সকাল থেকে রোদ্দুরের দেখা নেই। কুয়াশার মাঝে ধোঁয়াটে আকাশ। গত কয়েক দিন ধরেই কুয়াশা জাঁকিয়ে বসা শীতের সঙ্গে কুয়াশা কৃষকদের মনেও শঙ্কার মেঘ তৈরি করছে। বীজতলা ও আলুর খেত নিয়ে কৃষকদের চিন্তা ক্রমশ বাড়ছে।

আলু খেতে দেখা দিয়েছে যেমন পচন রোগ বা লেটব্লাইট তেমনি বোরো আবাদের বীজতলা আক্রান্ত হচ্ছে কোল্ড ইনজুরিতে। বীজতলা তৈরির শেষপ্রান্তে আবহাওয়ার বৈরিতায় কৃষকরা রয়েছেন অস্বস্তিতে। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, এই মুহূর্তে বড় ধরনের কোনো ক্ষতির সম্ভবনা অনেকটা কম থাকলেও আবহাওয়ার এই পরিস্থিতি যদি দীর্ঘায়িত হয় তাহলে ক্ষতির পরিমাণ বাড়বে।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, এবার বগুড়ায় ১ লাখ  ৮৭ হাজার ৫১০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। চলতি মাসেই বোরো আবাদে পুরোমনোযোগ দিবেন কৃষকরা। কিছু নিচু এলাকায় আবাদ শুরু করছেন কৃষকরা। এবার জেলায় ১০ হাজার ৩৩১ হেক্টর জমির বীজতলার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এ পর্যন্ত ৯৬০৫ হেক্টর জমির বীজতলা তৈরি হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে তীব্র শীত ও কুয়াশায় বোরোর বীজতলা কোল্ড ইনজুরিতে আক্রান্ত হচ্ছে। এতে বীজতলার চারা হলুদ ও কিছুটা কালচে হওয়া শুরু করছে।

শেখেরকোলা নুরইল দক্ষিণ পাড়ার কৃষক আমিনুল জানালেন তিনি ২০ শতক জমিতে বীজতলা তৈরি করেছেন। এর মধ্যে ৩ শতক জমির বীজতলা শীতের কারণে ক্ষতির মুখে পড়েছে। তার আশা রোদ ও আবাহওয়া ভালো হলেই খারাপের দিকে যাওয়া বীজতলা সতেজ হয়ে উঠবে। তবুও চিন্তা দূর হচ্ছে না। আমিনুল শুধু নিজের জমিতে আবাদের জন্যই বীজতলা তৈরি করছেন না। বোরোর চারা বিক্রি তার অন্যতম লক্ষ্য। তাই বীজতলা শীতের কারণে হলদে হওয়া শুরু করায় এখন দুশ্চিন্তা ভর করছে। একই এলাকার আব্দুল কুদ্দুস জানালেন ৪ বিঘা জমির জন্য বোরোর বীজতলা ফেলেছেন। তবে এখন যে আবহাওয়া তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন। আশপাশের বীজতলা হলদে ও কালো হয়ে যাচ্ছে।

তার বীজতলা এখানো ভালো থাকলেও চিন্তা দূর হচ্ছে না। আবার আলু নিয়েও রয়েছেন চিন্তায়। মোট ৩২ শতক জমিতে এবার আলু আবাদ করে ২০ শতক জমির আলু ইতোমধ্যে বিক্রি করে ভালো লাভ করে মন ছিল অনেকটা ফুরফুরে কিন্তু বীজতলার সঙ্গে বাকি ১২ শতক জমির আলুর আবাদ পড়েছে লেটব্লাইট বা পচন রোগে। দেখালেন আলুর গাছ কিভাবে শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। শেখেরকোলার চাঁন মিয়া তীব্র শীত উপেক্ষা করেই ওষুধ নিয়ে ছুটেছেন আলুর জমিতে। সূর্য না ওঠায় বুঝতে পারেননি ঠিক কত ভোরে জমিতে গিয়েছেলেন। মাথায় শুধু দুশ্চিন্তা ঘুরপাক দিচ্ছে। দেখা হতেই বললেন, আলু আবাদ রক্ষায় আর কোন ওষুধ ছিটাতে হবে।

সকালে জমিতে একদফা ওষুধ স্প্রে করেও শান্তি পাচ্ছেন না। বগুড়ায় এবার বিপুল পরিমাণ আলুর আবাদ শীতজনিত পচনরোগ বা লেটব্লাইটে আক্রান্ত হয়েছে। বগুড়ার শাখারিয়ার বৃদ্ধ কৃষক বজলু মিয়া জানালেন এবার তিনি ৭ বিঘা জমিতে আলু লাগিয়েছিলেন। ৫ বিঘা জমির আগাম আলুতে যে লাভ করেছেন তা জীবনে পাননি। তবে ২ বিঘা জমিতে এখন পচনরোগ ধরায় তাকে চিন্তায় ফেলেছে। সকাল থেকে তিনি ক্ষেতে ওষুধ স্প্রে করছেন।
বগুড়ায় এবার আলু আবাদ হয়েছে ৫৫ হাজার ২৬০ হেক্টর জমিতে। এর মধে প্রায় সাড়ে ২২শ’ হেক্টর আগাম জাতের আলু। এর মধ্যে ইতোমধ্যে ১৪শ’ হেক্টর জমির আগামজাতের আলু কৃষকরা উত্তোলন করছেন। আগামজাত ছাড়া বাকি আলু এখন জমিতেই। ফাল্গুন মাস পর্যন্ত এই আলু জমি থেকে কৃষকরা আলু ঘরে তুলবেন। তবে হঠাৎ করে খেতে পচন রোগ দেখা দেওয়ায় কৃষকদের দিশেহারা করে তুলেছে। বগুড়া কৃষি অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. মতলুবর রহমান জানালেন কৃষি বিভাগের কর্মীরা কৃষকদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিচ্ছেন।

আবাদ রক্ষায় করণীয় ও প্রয়োজনীয় ছত্রাকনাশক জমিতে স্প্রে করার জন্য লিফলেট বিতারণ করা হচ্ছে। অপর দিকে বোরোর বীজতলা নিয়ে জানালেন, বীজতলার তেমন ক্ষতি হবে না বলে তারা মনে করছেন। এ বিষয়ে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। বীজতলায় নাইট্রোজেন ও ফসফরাস ছিটানোসহ জমিতে পানি দেয়ে তার বের করে দেওয়ার জন্য কৃষি বিভাগের কর্মীরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন। তিনি জানালেন এই আবহাওয়ায় বৃষ্টি না হলে আলু ও বীজতলার পরিস্থতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

×