ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

বেড়া পাম্পিংস্টেশন থেকে শাহজাদপুরের  বাঘাবাড়ি 

সড়ক সম্প্রসারণ কাজ শেষ পর্যায়ে

নিজস্ব সংবাদদাতা, শাহজাদপুর, সিরাজগঞ্জ

প্রকাশিত: ২৩:০৯, ৮ ডিসেম্বর ২০২৩

সড়ক সম্প্রসারণ কাজ শেষ পর্যায়ে

বেড়া পাম্পিং স্টেশন থেকে বাঘাবাড়ি পর্যন্ত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ কাম সড়ক

পাবনার বেড়া পাম্পিং স্টেশন থেকে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বাঘাবাড়ির রাম খারুয়া পর্যন্ত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ কাম সড়ক সম্প্রসারণ পুনর্নির্মাণ সমাপ্তির পথে। দীর্ঘ তিন দশক পর সাড়ে ১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কটির নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করছে বেড়া পানি উন্নয়ন বিভাগ। সড়কটি নির্মিত হলে পাবনা ও সিরাজগঞ্জের মধ্যে আন্তঃযোগাযোগ বৃদ্ধিতে ব্যাপক পরিবর্তন সূচিত হবে। এতে বেড়া, শাহজাদপুর, ফরিদপুর, ভাঙ্গুড়া ও চাটমোহর উপজেলার চার লক্ষাধিক মানুষের দুর্ভোগের অবসান যেমন হবে তেমনি এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যে গতিশীলতা আসবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বেড়া অফিস সূত্রে জানা যায়, পাবনা সেচ ও পল্লী উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ১৯৮০ সালে বেড়া পাম্পিং স্টেশনে বাঘাবাড়ি পর্যন্ত বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীতে যানবাহন চলাচলের জন্য সড়কটি পাকা করা হয়। বেড়া পাম্পিং স্টেশন থেকে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বাঘাবাড়ির রাম খারুয়া পর্যন্ত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ কাম সড়কটির দৈর্ঘ্য চার দশমিক সাত কিলোমিটার। দীর্ঘদিন ধরে মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সড়কটি যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। গত বর্ষা মওসুমে নদীর প্রবল ¯্রােতে বাঁধের স্লোপ ভেঙে যায়। অবৈধভাবে দখল করে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ কাম সড়কের ঢালুতে শতাধিক বসতি গড়ে ওঠে। দীর্ঘদিন চেষ্টার পর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শেষে সড়কটি সম্প্রসারণ ও পুনর্নির্মাণ কাজ একেবারে শেষের পথে।  
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চার দশমিক সাত কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে সড়ক নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ১৯ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। কুড়িগ্রামের মেসার্স সালেহ এন্ড মেসার্স বেলাল কন্সট্রাকশন (জেভি) নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এই কাজ বাস্তবায়ন করছে। ইতোমধ্যে সড়ক পুনর্নির্মাণ কাজ ৯৯ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। সড়কটি চালু হলে বেড়া থেকে বাঘাবাড়ির দূরত্ব  পাঁচ কিলোমিটার কমবে। সময় ও জ্বালানি সাশ্রয়ের পাশাপাশি বেড়া সিএনবি মোড় ও বাঘাবাড়ি তিনমাথা মোড়ে অসহনীয় যানজট থেকে রেহাই পাবেন যাত্রীরা।
স্থানীয় ইউপি সদস্য তুষার আহমেদ সাচ্চু (মেম্বর) বলেন, ৩০ বছর ব্যবহারের অনুপযোগী সড়কটি নির্মাণ করায় যাতায়াত, কৃষিপণ্য পরিবহন ও অসুস্থ মানুষকে খুব দ্রুত হাসপাতালে আনা নেওয়ায় ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হবে। আগে কৃষিপণ্য হাট-বাজারে নেওয়া ছিল খুব কষ্টসাধ্য কাজ। তাই কৃষকরা বাড়িতেই ফড়িয়াদের কাছে কম দামে কৃষিপণ্য বিক্রি করতে বাধ্য হতেন। এতে তারা ন্যায্যমূল্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত হতো। অসুস্থ রোগীকে খাটিয়ায় তুলে কাঁধে করে হাসপাতালে নিতে হতো। এ সমস্যা থেকে আমরা মুক্তি পাওয়ায় আনন্দিত।
স্থানীয় বাসিন্দা সড়ক ও জনপথ বিভাগের সাবেক প্রকৌশলী আব্দুর রউফ জানান, সড়ক পাকাকরণে গুরুত্বপূর্ণ হলো সাব গ্রেড, ইমপ্রুভ গ্রেড, সাব বেজ, বেস টাইপ-১, কার্পেটিং, সিল কোট ও মেকানিক্যাল কম্পেকশন ডিজাইন ও এস্টিমেট অনুযায়ী সঠিকভাবে করায় কাজের মান অনেক ভালো হয়েছে। ট্রাক চালক আব্দুর রহমান, সিএনজি চালক লুৎফর, বোরাক চালক খবির উদ্দিন বলেন, বেড়া ও বাঘাবাড়ি আঞ্চলিক মহাসড়কে অনেক যানজট হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই কাজে আমাদের অনেক সময় বাঁচবে, জ্বালানি কম লাগবে। আরামে যাতায়াত করতে পারব। 
বেড়া-বাঘাবাড়ি সড়ক সম্প্রসারণ ও পুনর্নির্মাণ তদারকিতে নিয়োজিত বেড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী সাদেকুল ইসলাম বলেন, আশির দশকে বেড়া পাম্পিং স্টেশন ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করা হয়। ৩০ বছর পর নতুন করে পুনর্নির্মাণ ও মেরামত করা হচ্ছে। চার দশমিক সাত কিলোমিটার এই সড়ক বাঘাবাড়ি থেকে বেড়া পাম্পিং স্টেশন পর্যন্ত নির্মাণ করতে প্রায় সাড়ে ১৯ কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। 
পানি উন্নয়ন বোর্ড পাবনা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সুধাংশু কুমার সরকার বলেন, এডিপিভুক্ত প্রকল্পের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ কাম সড়ক নির্মাণে এই প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছিল। ৩০ বছর এটি জরাজীর্ণ অবস্থায় ছিল। জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের কথা মাথায় রেখে এটি পুনর্নির্মাণ ও সম্প্রসারণ করা হয়েছে। এর মূল উদ্দেশ্য হলো ভারী যানবাহন চলাচল ও যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করা। এ ছাড়াও এ অঞ্চলের মানুষের উপকারসহ যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ হবে এবং সময় কমে আসবে। এটি নির্মাণের মাধ্যমে একদিকে সেচ ও পল্লী উন্নয়ন প্রকল্পের স্বার্থ সংরক্ষণ হবে অন্যদিকে এলাকাবাসী এর সুফল পাবে।

×