ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩১ ভাদ্র ১৪৩১

তুচ্ছ ঘটনার জেরে আ.লীগ নেতা-কর্মীদের হাতে ইউএনও লাঞ্ছিত 

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর 

প্রকাশিত: ২২:৫৭, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

তুচ্ছ ঘটনার জেরে আ.লীগ নেতা-কর্মীদের হাতে ইউএনও লাঞ্ছিত 

ইউএনও লাঞ্ছিত 

 

গাজীপুরের কালীগঞ্জে তুচ্ছ ঘটনার জেরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সহ কয়েক কর্মকর্তা ও আনসার সদস্যকে লাঞ্চিত করেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। এসময় তারা ইউএনও কার্যালয়ের দরজা জানালার কাঁচ ভাংচুর করে। 

তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ এ ঘটনা অস্বীকার করে তারা দাবী করেন ইউএনও সাহেব সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীসহ আনসার সদস্যদের নিয়ে দলের নেতা-কর্মীদের উপর হামলা চালিয়ে মারধর করেছে। এ ঘটনায় অন্ততঃ ছয়জন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। 

শনিবার কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চত্বরে গাড়ি রাখতে নিষেধ করায় এ ঘটনা ঘটে। আহতরা হলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) গাড়ি চালক রুবেল হোসেন, আনসার সদস্য আকরাম ও রেজোয়ান, উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয়ের কর্মচারী রাসেল মিয়া, বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি) কার্যালয়ের কর্মচারী লিটন আহমেদ ও মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয়ের প্রোগ্রামার উজ্জ্বল কুমার শীল। 
  
উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্থানীয়রা বলেন, শনিবার বিকেলে কালীগঞ্জ আর আর এন পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে শহীদ ময়েজ উদ্দিনের ৩৯তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে এক স্মরণসভার আয়োজন করে উপজেলা আওয়ামী লীগ। স্মরণসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক। স্মরণসভায় যোগ দিতে দুপুর হতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে নেতা-কর্মীরা সমাবেশ স্থলে উপস্থিত হতে থাকেন। 

স্থানীয় মোক্তারপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেনের নেতৃত্বে নেতা-কর্মীরা অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল নিয়ে উপজেলা পরিষদ চত্বরে জড়ো হন। এসময় জাতীয় কন্যা দিবস উপলক্ষে উপজেলা পরিষদ চত্বরে শিল্পকলা একাডেমিতে অনুষ্ঠান চলছিল। 

প্রথমে উপজেলা পরিষদের নিরাপত্তায় দায়িত্বরত আনসার সদস্যরা আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীদের গাড়ি উপজেলা চত্বরের বাইরে নিয়ে রাখার অনুরোধ করেন। এতে নেতা-কর্মীরা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিজুর রহমান সেখানে উপস্থিত হন। তিনি ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেনকে ডেকে বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিদের উপজেলা পরিষদে আসার কথা রয়েছে। সম্ভব হলে নেতা-কর্মীদের গাড়ি যেন চত্বরের বাইরে খোলা জায়গায় নিয়ে রাখা হয়।

এতে ইউপি চেয়ারম্যান ও তার সঙ্গে থাকা নেতা-কর্মীরা ক্ষিপ্ত হয়ে নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও’র) সঙ্গে বাগ-বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে তারা ইউএনওকে লাঞ্চিত করেন। তাকে রক্ষার জন্য সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও আনসার সদস্যরা চেষ্টা করলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাদের ওপরও হামলা চালায়। এসময় উত্তেজিত নেতা-কর্মীরা ইউএনওর কার্যালয় এবং উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে ইটপাটকেল মারতে থাকেন। এতে ওইসব অফিসের কয়েকটি জানালার গ্লাস ভেঙ্গে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনে। 

কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিজুর রহমান জানান, উপজেলা পরিষদ চত্বরে গাড়ি রাখতে নিষেধ করায় চেয়ারম্যান আলমগীর এবং তার সঙ্গে থাকা নেতা-কর্মীরা ক্ষিপ্ত হয়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর হামলা চালায় ও ভাংচুর করে। এসময় আমাকে রক্ষা করতে গিয়ে সঙ্গে থাকা কয়েক কর্মচারী ও আনসার সদস্য আহত হয়েছেন। পুরো ঘটনার ভিডিও চিত্র রয়েছে। এঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে মামলা দায়ের করা হবে।

এ বিষয়ে মোক্তারপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম আলমগীর হোসেন বলেন, শহীদ ময়েজউদ্দিনের ৩৯তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণসভায় যোগ দিতে আমার ইউনিয়নের নেতাকর্মীদের নিয়ে উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে জড়ো হই। 

পরে ইউএনও সাহেব আমাদের বেড়িয়ে যেতে বলেন। আমি লোকজনকে নিয়ে বেড়িয়ে যাওয়ার সময় পেছন থেকে আনসার বাহিনী নিয়ে আমার নেতা-কর্মীদের উপর হামলা করে। আমার উপস্থিতিতে বা উস্কানীতে হাতাহাতি ও লাঞ্চিত হওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ন মিথ্যা ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। 

কালীগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ ফায়েজুর রহমান বলেন, ওই ঘটনায় অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 
 

এস

×