ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

লিজা হত্যার সঠিক তদন্ত ও বিচারের দাাবিতে মানববন্ধন 

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর

প্রকাশিত: ১৯:৪৪, ৯ জুন ২০২৩

লিজা হত্যার সঠিক তদন্ত ও বিচারের দাাবিতে মানববন্ধন 

বিচারের দাাবিতে মানববন্ধন।

গার্মেন্টস কর্মী লিজা মনিকে হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত এবং জড়িতদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে নিহতের স্বজন, এলাকাবাসীসহ সহকর্মীরা। 

শুক্রবার (৯ জুন) মহানগরীর কাশিমপুর থানার সামনে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।

কর্মসূচিতে অংশ নেয়া নিহতের সহকর্মী ও এলাকাবাসী জানান, গত রমজানের
ঈদের দিন (২২ এপ্রিল) গাজীপুর মহানগরীর কাশিমপুর থানাধীন শৈলডুবি এলাকায়
বাবার বাসা থেকে বেড়ানো শেষে  স্বামী শামীমের বাসায় ফেরার কিছু সময় পর গার্মেন্টসকর্মী লিজা মনির (১৯) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। 

নিহতের মাথা ও গলাসহ শরীরে আঘাতের একাধিক চিহ্ন থাকলেও পুলিশের সহায়তায় তা আত্মহত্যা বলে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে স্বামীর পরিবার। এ ঘটনায় লিজাকে হত্যা করার অভিযোগ করে স্বামী, শাশুড়ি ও ননদের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ পত্র পুলিশকে দেন নিহতের বাবা। কিন্তু পুলিশ পক্ষপাতিত্ব করে স্থানীয় প্রভাবশালীর সহায়তায় ওই অভিযোগপত্রটি ভুল হয়েছে এবং তা সংশোধন করে পুনঃরায় লেখার কথা বলে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত নিহতের বাবার কাছ থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। পরবর্তীতে পুলিশ হত্যার অভিযোগপত্রটি পাল্টে দিয়ে স্বাক্ষর নেয়া ওই সাদা কাগজে নিহতের শাশুড়ি ও ননদের নাম বাদ দিয়ে শুধুমাত্র স্বামীকে অভিযুক্ত করে আত্মহত্যার প্ররোচনা করার অভিযোগ লিখে দায়সারা ভাবে থানায় একটি মামলা দায়ের করে। 


নিহতের বাবা মনির হোসেন, মামা মনির ও ফুপু নাজমা বেগম জানান, গাজীপুর
মহানগরীর কাশিমপুর থানাধীন শৈলডুবি এলাকার ভাড়া বাসায় থাকেন চাঁদপুর
জেলা সদর থানার বালিয়ার চর (গোয়াল নগর) এলাকার মনির হোসেন। গত ঈদুল
আজহার দু’দিন পর তার বড় মেয়ে লিজা মনিকে (১৯) বিয়ে করে প্রতিবেশী
শামীম। এর আগে শামীম একাধিক বিয়ে করলেও তার আচরণের কারণে সেসব বিয়ে
বেশিদিন টিকেনি। লিজাকে বিয়ের সময় পূর্বের বিয়ের কথা গোপন রাখে শামীম ও তার পরিবার। একই এলাকায় মা ও বোনকে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকেন গার্মেন্টস কর্মী শামীম।

তারা জানান, বিয়ের কিছুদিন পরই অসৎ উপায়ে টাকা উপার্জনের জন্য লিজাকে
কুপ্রস্তাব দেয় তার স্বামী, শাশুড়ি ও ননদ। এতে রাজী না হওয়ায় তারা লিজাকে
নানাভাবে নির্যাতন করতে থাকে। একপর্যায়ে স্বামীর পরিবারের জন্য টাকা
উপার্জন করতে স্থানীয় বাগবাড়ি এলাকার একজোড়া সোয়েটার কারখানায়
চাকুরি নেয় লিজা। 

সম্প্রতি লিজার পরিবারের কাছে মোটা অংকের যৌতুক দাবি করে শামীম ও তার পরিবার। যৌতুক না পেয়ে লিজাকে তার স্বামী, শাশুড়ি ও ননদ প্রায়শঃ শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে আসছিল। এর জেরে গত রমজানের ঈদের দিন (২২ এপ্রিল) বিকেলে লিজাকে তারা হত্যা করে। পরে স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রচ্ছায়ায় শামীমের পরিবার লিজার মৃত্যু আত্মহত্যা বলে প্রকৃত ঘটনাটি ধামা চাপা দেয়ার চেষ্টা চালাতে থাকে।

লিজার স্বামীর বাসার মালিক জলিল চৌধুরী জানান, লিজার স্বামী শামীমের চারিত্রিক দিক ভাল ছিল না। একাধিক বিয়ে ছাড়াও তার বিরুদ্ধে নারী ঘটিত নানা অভিযোগ রয়েছে। বিয়ের পর থেকে সবসময়ই লিজার সঙ্গে তার স্বামী, শাশুড়ি ও ননদের ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকতো। লিজা ঘরের যে জানালায় আত্মহত্যা করেছে বলে তার স্বামী ও শাশুড়ি দাবি করেছে, সেই জানালাটির অবস্থান তুলনা মূলক অনেক নীচুতে। তাই ওই জানালায় আত্মহত্যার বিষয়টি কিছুটা অস্বাভাবিক। আমরা লিজার লাশটি ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পাই নি।

জিএমপি’র কাশিমপুর থানার ওসি সৈয়দ রফিউল করিম এব্যাপারে কোন কথা না বললেও এসআই শুভ মন্ডল জানান, নিহতের গালের নীচে লালচে দাগ রয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের বাবা মনির হোসেন বাদি হয়ে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে নিহতের স্বামীর বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। লিজার মৃত্যুর প্রকৃত কারণ এখনো উদঘাটন হয়নি, এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে। তবে ময়না তদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলেই লিজার মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।

এমএম

×