ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নদীর বুকে চাষাবাদ

নিজস্ব সংবাদদাতা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

প্রকাশিত: ০০:৩৭, ৬ জুন ২০২৩

নদীর বুকে চাষাবাদ

শিবগঞ্জের পাগলা নদীর শাখা ‘চকের নদী’তে চাষাবাদ

শিবগঞ্জের পাগলা নদীর একটি শাখা স্থানীয়ভাবে ‘চকের নদী’ নামে পরিচিত। উপজেলার তর্তিপুর থেকে বিনোদপুরের চৌকা পর্যন্ত নদীটির হাজার একর জমি এখন বেদখল। চকের নদীর ওই জমি এখন ভোগদখল করছেন এলাকার প্রভাবশালীরা। ধানসহ বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ হচ্ছে সেখানে। তবে প্রশাসন বলছে, নদীর জমি দখলমুক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
প্রায় ৩০ কিলোমিটর দীর্ঘ নদীটি চৌকা বিওপির অধীন সীমান্ত এলাকা হয়ে ভারত থেকে বেয়ে এসে তর্তিপুরঘাট পার হয়ে মহানন্দা নদীতে মিশেছে। নদীর ওপরে বর্তমানে পাঁচ-ছয়টি সেতু রয়েছে। সেতুর নিচের জমিও দখল করে ফসল উৎপাদন করছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এক সময়ের প্রবল খর¯্রােতা চকের নদী এখন শুধু কালের সাক্ষী। নদীর বুকজুড়ে এখন ধানসহ বিভিন্ন ধরনের ফসলের সমারোহ। এ নদীটি ছিল উপজেলার মনাকষা, বিনোদপুর, দুর্লভপুর ইউনিয়নজুড়ে। কিন্তু এখন আর নদীর অস্তিত্ব নেই। বর্তমানে শুধু ফসল আর ফসল।
নদীতীরবর্তী এলাকার কয়েক বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে- চকের নদীটি প্রায় ২০০ বছর আগের। এ নদী ঘিরে বিনোদপুর ইউনিয়নের চৌকা বিওপি, মনাকষা ইউনিয়নের মনাকষা হাট, হুমায়ুন রেজা উচ্চ বিদ্যালয়, মনাকষা শ্মশান, আদিনা সরকারি কলেজ, মনাকষা বিওপি, দাদনচক হাট, দাদনচক পিটিআই, নীলকুঠির কারখানা, দুর্লভপুর ইউনিয়নের হিন্দু সম্প্রদায়ের জেলার বৃহত্তম তর্তিপুর মহাশ্মশান, তর্তিপুর মেলা ও তর্তিপুরঘাটসহ ছোট-বড় বিভিন্ন ধরনের শতাধিক স্থাপনা গড়ে উঠেছে।
নদীর তীরঘেঁষে মনাকষা ইউনিয়নের খড়িয়ার ও পারচৌকা গ্রামের সামনে ব্রিটিশ সরকার এক সময় বিরাট এলাকাজুড়ে নীলকুঠি তৈরি করে এলাকার হাজারো কৃষককে বিনা পারিশ্রমিকে নীল চাষে বাধ্য করেছিল। নীল চাষে কৃষকরা অনাগ্রহ দেখালে সহ্য করতে হতো কঠিন নির্যাতন।
এলাকা ঘুরে অনেক জনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এলাকায় যোগাযোগের জন্য আগে চকের নদীতে বড় নৌকায় ছিল একমাত্র বাহন। ব্যবসার প্রয়োজনে নৌকা নিয়ে দূর-দূরান্ত থেকে আসতেন ব্যবসায়ীরা। এ চকের নদীর তীরঘেঁষে হিন্দুদের তীর্থস্থান গঙ্গাস্নান ও তর্তীপুরঘাট। এখানে প্রতি বছরই উত্তরবঙ্গের হাজারো হিন্দু ধর্মাবলম্বী গঙ্গাস্নœান করতে আসেন। সেদিন বড় ধরনের মেলাও বসে এখানে।
প্রবীণ জেলেরা বলছেন, এ নদী যখন প্রবাহমান ছিল, তখন হাজারো জেলে নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। অনেকে শুধু নৌকা বেয়েই জীবন জীবিকা নির্বাহ করতেন। এখন এগুলো শুধু কাল্পনা। কারণ বর্তমানে নদীর নমুনা কিছুই নেই।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) জুবায়ের হোসেন এ বিষয়ে বলেন, বর্তমানে খাস ও নদীর জমি দখলমুক্ত করার কাজ চলছে। কিছু খাসজমি উদ্ধার করা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত আছে। তদন্ত সাপেক্ষে সব জমি ও নদীর জমি দখলমুক্ত করে সরকারের নিয়ন্ত্রণে এনে জনস্বার্থে ব্যবহার করা হবে।

×