ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

শরীয়তপুর-১

আওয়ামী লীগে একাধিক প্রার্থী অস্তিত্ব সংকটে বিএনপি

আবুল বাশার, শরীয়তপুর

প্রকাশিত: ২৩:২৪, ৩ জুন ২০২৩

আওয়ামী লীগে একাধিক প্রার্থী অস্তিত্ব সংকটে বিএনপি

উত্তরে প্রমত্ত পদ্মা, পূর্বে মেঘনা ও পশ্চিমে কীর্তিনাশা নদী পরিবেষ্টিত শরীয়তপুর জেলা

উত্তরে প্রমত্ত পদ্মা, পূর্বে মেঘনা ও পশ্চিমে কীর্তিনাশা নদী পরিবেষ্টিত শরীয়তপুর জেলা ফরায়েজী আন্দোলনের প্রবাদপুরুষ হাজী শরীয়তউল্লাহর পুণ্যভূমি হিসেবে পরিচিত। হাজী শরীয়তউল্লাহর নাম অনুসারে এ জেলার নামকরণ করা হয়েছে শরীয়তপুর। ১৯৮৪ সালের ১লা মার্চ শরীয়তপুর জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। বর্তমানে শরীয়তপুর বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী জেলা। ৬টি উপজেলা, ৬টি পৌরসভা, ৭টি থানা, তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনী এলাকার শরীয়তপুরে প্রায় ১৭ লাখ মানুষের বসবাস। বাংলাদেশের উন্নয়নের সবচেয়ে বড় মেগা প্রকল্প পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন হওয়ায় এবং এ সেতুর দক্ষিণপ্রান্ত শরীয়তপুরের জাজিরার নাওডোবাতে অবস্থিত বিধায় সারাবিশে^ই এখন পরিচিতি পেয়েছে শরীয়তপুর জেলা। শরীয়তপুরে তিনটি সংসদীয় নির্বাচনী আসন বরাবরই আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি। বিএনপি-জামায়াত বা অন্য কোনো দলের তেমন তৎপরতা নেই বললেই চলে। নেতৃত্বের অভাবে অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে বিএনপি। 
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে চলতি বছরের শুরু থেকেই মাঠ গরম করতে শুরু করছেন আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী কেউ কেউ বসন্তের কোকিল স্বরূপ ঢাকা থেকে মাঝে-মধ্যে এলাকায় এসে নানা অপকর্ম ও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে দল থেকে বহিষ্কার হওয়া নেতা-কর্মীসহ বিএনপি-জামায়াত সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে নিজ সমর্থনের পাল্লা ভারী করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। ফলে দলীয় কোন্দল সৃষ্টিসহ সাধারণ কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হচ্ছে বলে দলীয় নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেছেন। এলাকায় যাদের জনসমর্থন নেই- এরকম নেতাদের আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন না দেওয়ার জন্য দলীয় প্রধানের কাছে দাবি জানিয়েছেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা। 
এদিকে, নির্বাচনী আমেজে প্রকাশ্যে মাঠে নেই বিএনপি। তবে আড়ালে-আবডালে ব্যানার সেঁটে ২/১টি দলীয় কর্মসূচি পালন করে তা সামাজিক যোগযোগমাধ্যম ফেসবুকে আপলোড করে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছেন একাধিক গ্রুপে বিভক্ত হওয়া বিএনপি দলীয় নেতাকর্মীরা। দলীয় কর্মসূচি পালনের ক্ষেত্রে এলাকায় ফটোসেশনমূলক কর্মকা- চালাচ্ছেন তারা। এখানে জাতীয় পার্টিসহ অন্য কোনো দলের তেমন দৌড়-ঝাঁপ নেই।
শরীয়তপুর সদর ও জাজিরা উপজেলা নিয়ে শরীয়তপুর-১ আসন গঠিত। শরীয়তপুর সদর উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন, একটি পৌরসভা এবং জাজিরা উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা রয়েছে এ আসনে। এখানে ভোটার সংখ্যা প্রায় তিন লাখ। স্বাধীনতার পর থেকে এ আসনে পাঁচবার আওয়ামী লীগ, একবার বিএনপি, দুবার জাতীয় পার্টি এবং একবার স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচিত হন। 
আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী অন্তত পাঁচজনের নাম শোনা যাচ্ছে। তাঁরা হলেন- বর্তমান সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির টানা দুবারের সদস্য ইকবাল হোসেন অপু, সাবেক সংসদ সদস্য ও টানা পাঁচ মেয়াদে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, জাজিরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি মোবারক আলী সিকদার, শরীয়তপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রফিকুল ইসলাম কোতোয়াল ও সাবেক ছাত্রনেতা আব্দুল আলীম বেপারী। 
তবে আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতৃবৃন্দ মনে করছেন, মনোনয়ন লড়াইয়ে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বর্তমান সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন অপু ও সাবেক সংসদ সদস্য বি, এম মোজাম্মেল হকের মধ্যে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী থাকলেও বর্তমান সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন অপুকে পুনরায় চাচ্ছেন তৃণমূলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ। পক্ষান্তরে এ আসনে বিএনপি থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো মাত্র একজন প্রার্থীকেই সম্ভাব্য বলে মনে করছেন দলীয় জ্যেষ্ঠ নেতারা। তিনি হলেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক তিনবার নির্বাচিত এমপি সরদার একেএম নাসির উদ্দিন কালু। এ আসনে বিএনপির একক প্রার্থী থাকলেও সাংগঠনিক অবস্থা মজবুত নয়। জাসদ ও জাতীয় পার্টি থেকে কে প্রার্থী হবেন তা এখনো জানা যায়নি। তবে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে বলে জানা গেছে। 
১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আমিনুল ইসলাম দানেশ, ’৭৯ সালে দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে সরদার একেএম নাসির উদ্দিন কালু, ’৮৬ সালে তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির নাসির উদ্দিন কালু, ’৮৮ সালে ৪র্থ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির নাসির উদ্দিন কালু, ’৯১ সালে ৫ম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে কেএম হেমায়েত উল্লাহ আওরঙ্গজেব, ’৯৬ সালে ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ৬ষ্ঠ সংসদ নির্বাচনে (প্রহসনের নির্বাচন) স্থগিত থাকে।
’৯৬ সালের ১২ জুন ৭ম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আব্দুর রাজ্জাক দুটি আসন থেকে নির্বাচিত হওয়ায় এই আসনটি ছেড়ে দিলে একই বছর উপনির্বাচনে মাস্টার মজিবুর রহমান নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হেমায়েত উল্লাহ আওরঙ্গজেব, ২০০৮ সালে ৯ম নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিএম মোজাম্মেল হক এবং ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের টিকিটে দ্বিতীয়বারের মতো বিএম মোজাম্মেল হক সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ইকবাল হোসেন অপু সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। 
এ আসনে ব্যক্তি ইমেজ কোনো ব্যাপার নয়। এখানে মূল ব্যাপার হলো মার্কা। যিনি নৌকা মার্কা পাবেন তিনিই বিজয়ী হবেন বলে ধারণা সাধারণ ভোটারদের। এ আসনে আওয়ামী লীগ দুটি গ্রুপ হলেও বিএনপিতে কোন্দল চরমে। নির্বাচনকে সামনে রেখে এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা মাঝে-মধ্যে ঢাকা থেকে এসে মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা ও মতবিনিময় করছেন। মোড়ে-মোড়ে ঝুলছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের ছবি সংবলিত পোস্টার, ব্যানার ও তোরণ। 
আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে বর্তমান সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন অপু এক সময় ছাত্রলীগের সাড়া জাগানো নেতা ছিলেন। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের তুখোড় ছাত্রনেতা ইকবাল হোসেন অপু আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ-যুবলীগের রাজনীতিতে শক্ত ভূমিকা রাখায় ঝিমিয়ে পড়া সংগঠনে প্রাণ সঞ্চারিত হতে থাকে। দলের ক্রান্তিলগ্নে ইকবাল হোসেন অপু দলীয় কর্মকা-ে শক্ত ভূমিকা রাখায় শরীয়তপুরে আওয়ামী রাজনীতিতে সাংগঠনিক গতি ফিরে আসে। 
জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সামিনা ইয়াসমিন, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মো. গোলাম মোস্তফা, শরীয়তপুর জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নুহুন মাদবর, শরীয়তপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র বাচ্চু বেপারীসহ অসংখ্য নেতাকর্মী জানিয়েছেন, ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর থেকে সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন অপু এলাকার উন্নয়নে ব্যাপক কাজ করে যাচ্ছেন। ইকবাল হোসেন অপু এমপি তাঁর নিজ নির্বাচনী এলাকায় দলীয় তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এলাকার ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করে এলাকাবাসীর প্রশংসা কুড়িয়েছেন এবং বর্তমান সরকারের বিভিন্ন সফলতার কথা গণসংযোগ ও সভা-সমাবেশ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে তুলে ধরছেন।  
সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন অপু শরীয়তপুর জেলাবাসীর কাছে পদ্মা সেতুর সুফল পৌঁছে দিতে পদ্মা সেতুর টোল প্লাজা থেকে শরীয়তপুর জেলা শহর পর্যন্ত চার লেন সড়ক নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নে জোরালো ভূমিকা পালন করেন। নির্বাচনী এলাকার মানুষ সংসদ সদস্য অপুকে তাদের সার্বক্ষণিক প্রয়োজনে কাছে পাচ্ছেন। তিনি গত চার বছরে নির্বাচনী এলাকার প্রতিটি হাটে বাজারে, গ্রামে মহল্লায় ঘুরে ঘুরে সাধারণ মানুষের খোঁজ নিয়েছেন। বিগত করোনাকালে নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে দলীয় কর্মীদের মাধ্যমে স্বেচ্ছাসেবী টিম গঠন করে ইকবাল হোসেন অপু মানুষকে খাদ্য ও চিকিৎসা সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন।

করোনার ভয়ে অনেক নেতাকর্মী ঘর থেকে বের হতে ভয় পেলেও ইকবাল হোসেন অপু নিজে কখনো কখনো হাঁটু পানিতে নেমে মানুষের বাড়ি-বাড়ি ঘুরে মানুষকে স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতন করেছেন। করোনাকালে পালং ও জাজিরায় প্রায় এক লাখ কর্মহীন মানুষের কাছে খাদ্যদ্রব্য পৌঁছে দিয়েছেন। তাই আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রকৃত নেতাকর্মীরা ইকবাল হোসেন অপুকে প্রার্থী হিসেবে পেতে চান। 
এদিকে, স্কুলজীবন থেকেই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য বিএম মোজাম্মেল হক। তৃণমূল থেকে শুরু করে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদকের পদ পেয়েছিলেন তিনি। এরপর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-দপ্তর সম্পাদকের পদ গ্রহণ করেন। ১/১১ এর রাজনৈতিক দুর্যোগকালে সন্তোষজনক ভূমিকা রাখায় দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা ২০০৮ সালে ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাঁকে শরীয়তপুর-১ আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন প্রদান করেন। ২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচনেও তাকে মনোনয়ন দিলে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। 
তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগের ত্যাগী ও পরীক্ষিত অনেক নেতা-কর্মীর অভিযোগ, টানা দুই মেয়াদের সাবেক সংসদ সদস্য বিএম মোজাম্মেল হক ২০১৮ সালে মনোনয়ন দৌড়ে হেরে গিয়ে দীর্ঘ প্রায় সাড়ে চার বছর পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকার মাটিতে পা রাখেননি। তিনি কোনো দলীয় কর্মসূচিতে, সামাজিক অনুষ্ঠানে, করোনাসহ অন্যান্য দুর্যোগেও এলাকার মানুষের পাশে সার্বক্ষণিক দাঁড়াননি। তবে তাঁর ভক্ত-অনুসারীরা আশা করছেন, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোজাম্মেল হক মনোনয়ন পেতে পারেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী মোবারক আলী সিকদার ২০০১ সালে এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নপ্রাপ্ত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হেমায়েত উল্লাহ আওরঙ্গজেবের সঙ্গে পরাজিত হন। এরপর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর শুরু হয় আওরঙ্গ বাহিনীর ভয়াবহ জুলুম-নির্যাতন। শরীয়তপুর জেলা আওয়ামী লীগের এমন একটি দুঃসময়ে দলীয় নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়ান মোবারক আলী সিকদার। ২০০৮ সালে ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে পরাজিত হন। বর্তমানে তিনি দলীয় মনোনয়নে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে জাজিরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। 
শরীয়তপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী মোবারক আলী সিকদার বলেন, গত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে আওয়ামী লীগ দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর যখন হামলা, মামলা দিয়ে জুলুম-নির্যাতন চালানো হয়েছিল তখন তিনি তাদের পাশে থেকে যে কোনো সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেছেন। দলের দুর্দিনে অর্থ ব্যয় করে নির্যাতিত নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। এবার তিনি দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার আশাবাদী। 
শরীয়তপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র রফিকুল ইসলাম কোতোয়াল স্কুলজীবন থেকে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। ১৯৮৯ সালে সংগঠনের দুঃসময়ে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। বর্তমানে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। তিনি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শরীয়তপুর-১ আসনে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে ব্যাপকভাবে গণসংযোগ করছেন। দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার প্রত্যাশায় বিভিন্ন প্রচার চালিয়ে কাজ করছেন শরীয়তপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র, সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতা রফিকুল ইসলাম কোতোয়াল। স্থানীয় সুশীল সমাজে গ্রহণযোগ্য এই নেতা ইতোমধ্যেই পৌর মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করে শহরবাসীর কাছে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। 
আব্দুল আলীম বেপারী জাজিরা উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নের সন্তান। ১৯৮৭ সালে নবম শ্রেণির ছাত্রাবস্থায় তিনি জয়নগর জুলমত আলী উচ্চ বিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, ১৯৮৯ সালে ঢাকা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হল শাখায় ১৯৯১ সালে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, ১৯৯৩ সালে সাধারণ সম্পাদক, ১৯৯৪ সালে সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, প্রচার সম্পাদক এবং সহ-সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আব্দুল আলীম বেপারী একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি এ আসনে আওয়ামী লীগের একজন মনোনয়নপ্রত্যাশী।
এদিকে, বিএনপির একমাত্র মনোনয়নপ্রত্যাশী একাধিকবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য সরদার একেএম নাসির উদ্দিন কালুর রয়েছে এক বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক পরিচিতি। তিনি ১৯৬৮ সালে তৎকালীন মাদারীপুর মহকুমা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালে কালু সরদার মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং ২ নং সেক্টরে যুদ্ধ করেন। ১৯৭৯ সালে বিএনপিতে যোগদান করে দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে শরীয়তপুর-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। 
১৯৮৫ সালে কালু সরদার স্বতন্ত্র নির্বাচন করে উপজেলা পরিষদের প্রথম নির্বাচনে শরীয়তপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৮৬ সালে এরশাদের জাতীয় পার্টিতে যোগদান করে তৃতীয় ও ১৯৮৮ সালে ৪র্থ সংসদ নির্বাচনে শরীয়তপুর-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮৯ সালে তিনি শরীয়তপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মনোনীত হন। এরশাদ সরকারের পতন হলে কালু সরদার পুনরায় বিএনপিতে যোগদান করেন এবং ’৯১ ও ২০১৮ সালে বিএনপির টিকিটে এই আসন থেকে নির্বাচন করে পরাজিত হন। বর্তমানে তিনি পঞ্চম মেয়াদে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। তার দল বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে তিনি দলের মনোনয়ন চাইবেন।

×