ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

লাখো মানুষের শ্রদ্ধায় বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুনুর রশিদ খানের দাফন সম্পন্ন

স্টাফ রিপোর্টার, নরসিংদী 

প্রকাশিত: ১৮:১২, ১ জুন ২০২৩; আপডেট: ১৮:১৩, ১ জুন ২০২৩

লাখো মানুষের শ্রদ্ধায় বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুনুর রশিদ খানের দাফন সম্পন্ন

জানাজার একাংশ

নরসিংদী জেলার শিবপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুন অর রশিদ খানকে বৃহস্পতিবার (১ জুন) বিকেলে মজলিসপুরস্থ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। 

এর আগে রাজধানী ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে তার লাশ শিবপুরে নিয়ে আসা হলে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, মুক্তিযোদ্ধাসহ সর্বস্তরের লোকজন তাকে দেখতে ভিড় জমায়। তার লাশ দেখে অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। 

মজলিসপুরে জানাজার আগে বক্তব্য দেন পলাশ থেকে নির্বাচিত এমপি ডা. আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলীপ, শিবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মহসিন নাজির, সাধারণ সম্পাদক সামসুল আলম ভূইয়া রাখিল, মরহুম হারুনুর রশিদ খানের ছেলে আমিনুর রশিদ খান তাপস, মরহুম রবিউল আউয়াল কিরন খানের ছেলে ফজলে রাব্বি খান, তার ভাতিজা অমীত খান প্রমুখ। এর আগে শিবপুর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।

গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সকালে শিবপুরে তার নিজ বাসায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে আহত হয়ে ৪১ দিন পর চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় গত বুধবার (৩১ মে) বিকেল ৫টায় ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।  হৃদরোগ ও মূত্রনালিতে সংক্রমণসহ শ্বাসকষ্ট নিয়ে গত ৭ মে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ১৯ মে রাত ১০টার দিকে তার অবস্থার অবনতি হলে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায়  বুধবার বিকাল ৫টায় মারা যান তিনি 

উপজেলা চেয়ারম্যানকে গুলির ঘটনার ২৫ ফেব্রুয়ারি রাতেই নরসিংদী জেলা পুলিশ সন্দেহভাজন হিসেবে চারজনকে আটক করে। ঘটনার দুই দিন পর চেয়ারম্যানের ছেলে মো.জার একাংশ আমিনুর রশীদ খান তাপস বাদী হয়ে পুটিয়া এলাকার আরিফ সরকারকে প্রধান আসামি করে ছয়জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করে শিবপুর মডেল থানায় মামলা করেন। মামলার আসামিরা হলেন, পুটিয়া ইউনিয়নের কামারগাঁওয়ের আরিফ সরকার (৪০), একই এলাকাল ইরান মোল্লা (৩০) ও হুমায়ুন (৩২), পূর্ব সৈয়দনগর গ্রামের মো: মহসীন মিয়া (৪২), মুনসেফেরচর গ্রামের শাকিল (৩৫) ও নরসিংদী শহরের ভেলানগরের গাড়িচালক নূর মোহাম্মদ (৪৮)। তারা স্থানীয় এমপি জহিরুল হক ভূঞা মোহন ও তার ছোট ভাই জেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি জোনায়েদুল হক ভূঞা জুনুর ঘনিষ্ঠ বলে জানিয়েছে বাদীপক্ষ। 

মামলার পর পুলিশ এজাহারের ৬ নম্বর আসামি নূর মোহাম্মদ এবং ৪ নম্বর আসামি শাকিলকে গ্রেপ্তার করে। এ ঘটনায় আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন নূর মোহাম্মদ। ঘটনার পর থেকে প্রধান আসামি আরিফ সরকার, মহসীন, ইরান মোল্লা ও হুমায়ুন পলাতক রয়েছেন। তারা বর্তমানে দুবাইয়ে অবস্থান করছেন বলে দাবি পুলিশের।

এদিকে উপজেলা চেয়ারম্যানকে গুলির ঘটনায় গত ৭ মার্চ মো. ফরহাদ হোসেন ওরফে মোফাজ্জল হোসেন সরকার (৩৪) ও আরিফুল ইসলাম আরিফকে (২৮) মতিঝিল এলাকা থেকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার বিশেষ দল। তাদের কাছ থেকে হারুন খানকে গুলিকরার ঘটনায় ব্যবহৃত দুটি রিভলবার ও ছয় রাউন্ড গুলিও উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা পুলিশের কাছে তাদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছেন। গুলির ঘটনায় উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আসাদুজ্জামান আসাদ সম্পৃক্ত বলে তারা পুলিশের কাছে তথ্য দিয়েছেন।

শিবপুর মডেল থানার ওসি ফিরোজ তালুকদার বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যানকে গুলির ঘটনায় হওয়া মামলায় মোট ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে এজাহারভুক্ত দুজন। তাদের মধ্যে নূর মোহাম্মদ আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। আরেক এজাহারভুক্ত আসামি শাকিল কারাগারে রয়েছেন। আর প্রধান আসামিসহ চারজন দুবাইয়ে অবস্থান করছেন। তাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলসহ সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।

এছাড়া হারুনুর রশিদ খানের বড় ভাই সাবেক এমপি রবিউল আউয়াল খান কিরনকেও দুর্বৃত্তরা ১৯৮৬ সালের ২৮ এপ্রিল রাতে শিবপুরের লেটাবরে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী সভা শেষে বাড়ি ফিরার পথে খড়কমারা ব্রীজে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। 

এসআর

×