ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

দাউদকান্দিতে পাল্টে গেছে গৃহহীনদের জীবন 

শামীম রায়হান, দাউদকান্দি, কুমিল্লা

প্রকাশিত: ১৪:৫০, ২৮ এপ্রিল ২০২৩; আপডেট: ১৪:৫৬, ২৮ এপ্রিল ২০২৩

দাউদকান্দিতে পাল্টে গেছে গৃহহীনদের জীবন 

প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর

কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলায় বতর্মান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের ঘর পাল্টে দিয়েছে ভূমিহীন - গৃহহীনদের জীবন যাত্রার গল্প। আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর অনেকেরই জীবন পরিবর্তনের অনুপ্রেরণা হিসাবে কাজ করছে। গৃহহীনদের জীবনের বেশী ভাগ সময় কেটেছে ভাসমান অবস্থায়, তাদের ছিলনা কোন স্থায়ী ঠিকানা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরসহ জমির মালিকানা পেয়ে খুজেঁ পেয়েছেন তাদের আসল ঠিকানা। 

বর্তমানে তারা নতুন করে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখছেন ভূমিহীন, গৃহহীন ও নিন্ম আয়ের মানুষ গুলো৷ প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়ে আনন্দে আত্মহারা গৃহহীন পরিবারের সদস্যরা। অসহায় ছিন্নমূল উপকার ভোগী পরিবার পরিজনরা  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু ও সুস্থতা কামনা করেন। 

৫৫ বছর বয়সী বিধবা মাসুদা বেগম বলেন,সংসারে অসুস্থ প্রতিবন্ধী সন্তান নিয়ে কোন মতে দিন কাটে তার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে ঘর পেয়ে জীবন সায়াহ্নে এসে আবার নতুন করে সংসার পেতেছেন এই পরিবারটি। বেশিরভাগ সময় মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ঝিয়ের কাজ করে অসুস্থ সন্তানের ঔষধ সহ সংসার চালাতে গিয়ে অনেক ব্যাক পেতে হয় তাকে । 

শুধু মাকসুদা বেগম নন তার মতো আরো অনেকের নাম জেসমিন, কামাল, আবুল উপহারের ঘর পাওয়া নিন্ম আয়ের সবারই স্বপ্ন ও জীবন যাপনে পরিবর্তন এসেছে।  হঠাৎ এমন পরিবর্তনে এক দিকে যেমন উচ্ছাসিত তারা। অপর দিকে নতুন করে বাঁচার তাগিদ তাদের মনে। শুধু নিজের ঘর নয় পুরো প্রকল্প এলাকাই তাদের যত্ন ও আবেগে সেজেছে সবুজ সমারোহে৷ 

প্রধানমন্ত্রীর উপহারের বাড়ি পাওয়া প্রমিলা রানী কর্মকার বলেন, ৩০ বছর আগে আমাকে বিয়ে করে ভাড়া করা বাসায় তোলেন স্বামী রঞ্জিত কর্মকার। মানুষের বাড়িতে কাজ করে তিন মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। মেয়ের জামাইরা আসলে বসার জায়গা দিতে পারিনি। এখন অন্তত মাথা গোঁজার ঠাঁই হওয়ায় আমি শেখের বেডির (শেখ হাসিনা) প্রতি অনেক খুশি।

৪২ বছর বয়সী আরেফিনের সঙ্গে কথা হচ্ছিলো তার দাউদকান্দি পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের দোনারচর গ্রামে আশ্রয়ণ প্রকল্পের নতুন ঘরের বারান্দায়।ঘর পাওয়ার পর এক মুহূর্তের জন্যও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অন্য কোথাও যায়নি। চোখে অশ্রু ভেজা কন্ঠে বলেন, নিজের স্থায়ী দুই শতাংশ জমিসহ ঘর হবে কখনো কল্পনা ও করেননি তিনি। ঘর পেয়ে সাজিয়েছেন নিজের মনের মতো করে। ঘরের চারদিকে শাক সবজি,ফল গাছ লাগিয়ে সবুজের সমারোহ করে নজর কেড়েছেন দেখতে আসা অনেকেরই৷ উপহারের ঘরের এক পাশে দোকান করে একমাত্র মেয়ে ও মাকে নিয়ে সংসার চলে তার। 

এদিকে দাউদকান্দি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মেজর অব. মোহাম্মদ আলী সুমনের সঙ্গে আলাপকালে জনকন্ঠকে তিনি বলেন,প্রত্যেক মানুষের মৌলিক অধিকার আছে তাদের বাসস্থানের সুযোগ পাওয়া৷আওয়ামী লীগ তথা বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানুষের মৌলিক অধিকার বাস্তবায়ন করেছেন প্রতিনিয়ত । প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতেই এই প্রিয় লাল সবুজের দেশকে মানবিক কল্যাণকর রাষ্ট্রে পরিণতি করার মহতী বেশ কিছু কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছেন। 

এই মানবিক কর্মসূচি মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ঠিকানা বিহীন আশ্রয়নহীন ও  গৃহহীন মানুষের জন্য গৃহীত প্রকল্প। গৃহীত প্রকল্প এলাকায় তাদের কর্মসংস্থানে শাক-সবজি,ফল ফলাদী চাষ ও গবাদিপশু পালনসহ তাদের সন্তানদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য স্কুল, মসজিদ ও মাদ্রাসার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার এই কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সমাজের অবহেলিত নিগৃহীত বেদে, তৃতীয় লিঙ্গ, চা শ্রমিক, কুষ্ঠ রোগীসহ সুবিধা বঞ্চিত মানুষকে সুন্দর জীবন উপহার দিয়েছেন৷এই মহতী উদ্যোগে আমি আন্তরিকভাবে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে দাউদকান্দিবাসীর পক্ষ থেকে ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

এ ব্যাপারে দাউদকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মহিনুল হাসান জনকন্ঠকে জানান, মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছিলেন বাংলাদেশের কোন মানুষ ভূমিহীন ও গৃহহীন থাকবেনা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্পের-২ এর আওতায় সারা দেশের ন্যায় দাউদকান্দি উপজেলায় ইতোমধ্যে  ৪৮৭টি গৃহহীনদের তালিকা করা হয়েছে এবং উপকারভোগীদের মাঝে ৩০০টি গৃহ ইতিমধ্যেই হস্তান্তর করা হয়েছে। অবশিষ্ট ১৮৭টি গৃহ আগামী জুন মাসে বুঝিয়ে দেওয়া হবে। 

তিনি আরো বলেন,দুই শতাংশ জায়গাসহ সেমিপাকা একটি ঘর করে দেয়া হচ্ছে সঙ্গে আছে রান্নাঘর, টয়লেট, আর্সেনিক মুক্ত পানি, বিদ্যুৎ সংযোগ স্কুলসহ আঙিনায় হাঁস মুরগি পালন ও শাক সবজি চাষের ও সুব্যবস্থা রয়েছে। এর ফলে আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসরত পরিবার গুলোর জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন হবে বলে আমি মনে করি।

এসআর

×