ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পাড়া মহল্লার ইফতার আনন্দ

 প্রবীর বিশ্বাস, খুলনা

প্রকাশিত: ০১:৩৫, ৭ এপ্রিল ২০২৩

পাড়া মহল্লার ইফতার আনন্দ

আল্লাহর বান্দারা ঘুম থেকে ওঠেন, সেহেরি খান, রোজা রাখতে হবে, নামাজ পড়তে হবে

আল্লাহর বান্দারা ঘুম থেকে ওঠেন, সেহেরি খান, রোজা রাখতে হবে, নামাজ পড়তে হবে। অথবা সুরে সুরে বিভিন্ন ধরনের ইসলামি গান। আবার দৌড়াতে দৌড়াতে হই হইসহ নানা শব্দ। রমজান মাসজুড়ে গভীর রাতে এমন শব্দ শোনা যায় খালি গলায়, কখনো টিনের তৈরি চোঙ্গে কিংবা হ্যান্ডমাইকে (ম্যাগাফোন)। বছরের ১১ মাসের পরের ৩০ দিন প্রাকৃতিক দুর্যোগ (বিশেষ করে ঝড়-বৃষ্টি) ব্যতীত একটি দিনও বাদ যায় না। গ্রামে কিংবা শহরের একটু বয়সীরা জানেন পবিত্র রমজান মাসের এই জাগো পার্টির কথা। সংখ্যায় কম হলেও রমজান মাস জুড়ে পড়া-মহল্লায় এখনো ভোর রাতে দেখা মিলবে জাগো পার্টির সঙ্গে।

রোজাদারদের ঘুম ভাঙিয়ে সেহেরি খাওয়ার আহ্বান, অতপর রোজা রাখা ও ফজরের নামাজ আদায়। এই মহান দায়িত্ব যারা পালন করেন তাদের জাগোওয়ালা বা জাগো পার্টি বলা হয়। খুলনায় এদের কাফেলাও বলে থাকে। তবে প্রযুক্তির এই যুগে দিন দিন অনেকটাই ফিকে হয়ে যাচ্ছে শব্দটি। একজন আর একজনকে মুঠোফোনের মাধ্যমে ডেকে দেওয়া কিংবা ফোনে অ্যালারার্ম দিয়ে রাখা, ঘড়ি দেখার নানা ব্যবস্থাসহ রয়েছে বিভিন্ন উপায়। অপরদিকে খুলনার মোড়ে মোড়ে জমে উঠেছে ইফতারি বাজার। নানা ধরনের খাবারের পসরা সাজিয়ে রোজদারদের মন আকৃষ্ট করতে বিকাল থেকেই ব্যস্ত হয়ে পড়েন বিক্রেতারা। 
স্থানীয়রা জানান, পবিত্র রামজান মাসে মসজিদে তারাবীর নামাজ আদায়, কোরানের তফসির শোনা, সকলে মিলে মসজিদে অথবা বাড়িতে, বন্ধু-বান্ধব কিংবা আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে ইফতার করার আনন্দটাই আলাদা। তবে তারাবীর নামাজ শেষে রাতের খাবার গ্রহণের পর ঘুমিয়ে পড়া; তারপর সময়মতো ওঠা কখনো কষ্টদায়ক হয়ে পড়ে। কেউ আবার অচেতন হয়েই ঘুমিয়ে থাকেন। তাদেরই সময় মতো জাগিয়ে তোলেন জাগো পার্টি। আবার মা-বোনদের সময়মতো খাবার প্রস্তুত করতেও আহ্বান জানানো হয়। খুলনা নগরীর মাস্টারপাড়ায় দেখা হলো ১০ সদস্যের একটি দলের সাথে।

মাছের আড়তে কাজ করা দলের একজন মোঃ হৃদয় হাওলাদার (১৮)। তিনি জানান, রমজান মাস এলে রাত আড়াইটা থেকে সাড়ে তিনটা পর্যন্ত আমরা রাস্তায় থাকি। কি ধরনের গান করেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জাগো জাগোরে মুসলমান/ খাও সেহেরি রাখো রোজা, কমাও তোমার পাপের বোঝা/ আত্মা তোমার করো সুন্দর, হে মোমিন মুসলমান/ রোজা রাখো নামাজ পড়ো, আল্লাহ্ আল্লাহ্ জিকির করো/ রোজা হলো সঙ্গের সাথী, নামাজ হলো বেহেস্তের চাবি।’
নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাজমুল হাসান বলেন, আমাদের কাফেলা বলে।

আমি গত বছর থেকে কাফেলা হয়েছি। আবার জাগো পার্টি বা জাগোওয়ালাও বলে ডাকে। আমার মামারা রূপসা এলাকায় অনেক বছর ধরে ডাকাডাকি করেন। সেটা দেখে আমি অনুপ্রাণিত হয়েছি। আমরা বড় হুজুরের গলি, মেসের সড়ক ও মাস্টারপাড়া মেইন রোডসহ আশপাশের এলাকায় ডাকি। গানের পাশাপাশি বলি, রোজাদার ভাই ও বোনেরা সেহরির সময় চলে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠেন, লাইট জ্বালান ইত্যাদি। একটু দূরে পুলিশ ফাঁড়ি এলাকার দলে রয়েছে রাকিব খান, হাসিব, নাঈম, হাফিজুর ও সাগর। আমরা ওই এলাকার বাসিন্দাদের ঘুম ভাঙাই। এসব কথা বলেন কয়েক বছরের জাগো পার্টির অন্য সদস্য হামিদুল ইসলাম।

ঈদের আগে আমরা টাকা কালেকশন করি, অনেকে খুশি হয়ে বকশিস দেন। ভালো লাগে তাই করি। মহৎ কাজ মনে করি।
অপরদিকে পাড়া কিংবা মহল্লায় জমে উঠেছে ইফতার বাজার। পিঁয়াজু, ছোলা, বেগুনি, আলু-রসুন-সবজি-ডিমের চপ, জিলিপির দেখা মিলবে মোড়ের সব দোকানে। কোথাও কোথাও আবার হালিম ও ভাজা মাংসসহ নানা ধরনের খাবার প্রস্তুত করে পসরা সাজান দোকানিরা। 
দোকানিরা জানালেন, বিক্রি ভালো হচ্ছে, তবে লাভ কম। কেননা দ্রব্যমূল্য কিছুটা কম থাকলে লাভের পরিমাণটা একটু বেশি হতো। এরই মধ্যে সারা মাস জুড়ে বিভিন্ন এতিমখানা ও মাদ্রসার শিশুদের জন্য ইফতারি সরবরাহ করেন বিত্তবানরা।

এছাড়া মসজিদে মসজিদেও চলে মুসল্লিদের এক সঙ্গে ইফতারি করার ধুম। তবে খোলা, বাসি কিংবা নি¤œমানের খাবার না খাওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের। এ বিষয়ের গ্যাস্ট্রোএন্টোরজিস্ট ডা. দীপঙ্কর নাগ বলেন, তেলে ভাজা খাবার যত বেশী এড়িয়ে চলা যায় শরীরের পক্ষে ততই ভালো।     প্রবীর বিশ্বাস, খুলনা

×