ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

মাকুর শব্দে মুখরিত সিরাজগঞ্জের তাঁতপল্লী

​​​​​​​বাবু ইসলাম, সিরাজগঞ্জ

প্রকাশিত: ২১:৩৭, ৩১ মার্চ ২০২৩

মাকুর শব্দে মুখরিত  সিরাজগঞ্জের  তাঁতপল্লী

তাঁতে কাপড় বুনতে ব্যস্ত কারিগররা

পহেলা বৈশাখ ঈদ সামনে নিয়ে তাঁত বুননের খটখট শব্দে গর্জে উঠেছে সিরাজগঞ্জের তাঁতপল্লী। ভোর থেকে শুরু করে মধ্যরাত পর্যন্ত তাঁতের মাকুর আকার টাকুর শব্দে মুখরিত এখন সিরাজগঞ্জ জেলার প্রতিটি তাঁত এলাকা। এই তাঁতে তৈরি হয় ছোট-বড় বিভিন্ন সাইজের গামছা, লুঙ্গি শাড়ি। তাঁতপল্লীতে বেনারসি, সিল্ক, রেশমী, কটন, জামদানি কাতান শাড়িতে নিপুণ হাতে আধুনিক শৈল্পিক কারুকার্যে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে বাহারি নকশা। বৈশাখের আবহে শাড়িতে ঢাক-ঢোল, একতারা-দোতারা, কলসি, ঘুড়ি, নৌকা, হাতপাখা, ইলিশ মাছ, মাছ ধরার পলো প্রভৃতি ছবি ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে। তবে তাঁত মালিকরা বলছেন ক্রমাগত কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় কাপড়ের বাজার চাঙ্গা হয়নি। উৎপাদন খরচের সঙ্গে তুলনা করে বাজারজাত করতে পারছেন না। রং সুতার বাজার নিয়ন্ত্রণ করা গেলে আবারও ঘুরে দাঁড়াবে জেলার ঐতিহ্যবাহী এই তাঁতশিল্প।

সরকারিভাবে জেলা পরিচিত তাঁতকুঞ্জ হিসেবে। জেলায় তাঁতের সংখ্যা প্রায় লাখ। প্রতিবছর পহেলা বৈশাখ, ঈদ পূজা-পার্বণে তাঁতের কাপড়ের চাহিদা বাড়ে। তাঁতপল্লীতে কাজের চাপ বেড়ে যায় দ্বিগুণ, রাতদিন দম ফেলার সময় থাকে না শ্রমিকদের। আর তাই বছর পহেলা বৈশাখ ঈদকে সামনে রেখে ভোর থেকে শুরু করে মধ্যরাত পর্যন্ত তাঁত বুননের খটখট শব্দে মুখরিত এখন  তাঁতপল্লী। জেলার সদর, বেলকুচি, শাহজাদপুর, উল্লাপাড়াসহ উপজেলার প্রতিটি তাঁত পল্লীতে মালিক-শ্রমিক একাকার হয়ে কাজে নেমেছেন। সেইসঙ্গে ফড়িয়া ব্যবসায়ীদের আনাগোনাও বেড়েছে। তৈরি হচ্ছে বাহারি নামের আর নতুন নতুন ডিজাইনের আধুনিক মানের জামদানি, সুতি জামদানি, সুতি কাতান, বেনারসি বিভিন্ন ধরনের লুঙ্গি। কাপড় তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তাঁতিরা। শৈল্পিক কারুকার্যে তাঁতবস্ত্রকে বাজারজাত করা হচ্ছে। কিন্তু ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে উৎপাদন কিছুটা ব্যাহত হলেও জেলার তাঁত পল্লীগুলো আবারও কর্মমুখর হয়ে ওঠায় খুশি তাঁত শ্রমিকরা।

সরেজমিন কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ জায়গাতেই সবাই ব্যস্ত ঈদ বৈশাখের শাড়ি তৈরির কাজে। বৈশাখের আবহে শাড়িতে ঢাক-ঢোল, একতারা-দোতারা, কলসি, ঘুড়ি, নৌকা, হাতপাখা, ইলিশ মাছ, মাছ ধরার পলো প্রভৃতি ছবি ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে। কাজে তাঁত শ্রমিক কর্মচারীদের পাশাপাশি বাড়ির বউ, ছেলে-মেয়েরাও বসে নেই। কাপড় তৈরিতে ব্যস্ততম সময়ে তারাও সাধ্যানুযায়ী সহায়তা করছেন। সয়দাবাদের বৈশাখী শাড়ি তৈরির ব্যবসায়ীরা জানান, শাড়ি তৈরির জন্য তারা নরসিংদীর বাবুরহাট এলাকা থেকে গজ হিসেবে সাদা কাপড় কিনে আনেন। পরে ওই কাপড়ে প্রিন্টিংয়ের কাজ করে বাজারে তোলেন। শাড়িতে চাহিদা অনুযায়ী ডুগি-তবলা, ঢোল, একতারা-দোতারা, মাছ ধরার পলো, ইলিশ মাছ, কাঁঠাল, শাপলা ফুলসহ নানা চিত্র নক্সা ফুটিয়ে তোলা হয়। আব্দুল্লাহ খান বললেন, তাঁত শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে অনিয়ন্ত্রিত রং সুতার বাজার ব্যবস্থা মনিটরিং-এর পাশাপাশি সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতার দাবি জানান এই তাঁত মালিক। পাওয়ারলুম হ্যান্ডলুম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এমএ বাকী বললেন, সিরাজগঞ্জ জেলায় শিল্পে পাওয়ারলুম হ্যান্ডলুম রয়েছে প্রায় লাখ। আর এই শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে জড়িত প্রায় ১০ লাখ মানুষ। সরকার কৃষি উৎপাদনসহ বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি দিচ্ছে। কিন্তু বস্ত্র উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত শিল্পের জন্য ভর্তুকির কোনো ব্যবস্থা নেই। দেশের আর্থিক খাতের জোগানদাতা বস্ত্র খাতে ভর্তুকির ব্যবস্থা থাকলে তাঁতশিল্পকে আরও গতিশীল করা সম্ভব।

×