ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

স্বল্প আয়ের মানুষদের কাছে কম দামে মাছ মাংস বিক্রি

স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম

প্রকাশিত: ১৭:৪৫, ৩০ মার্চ ২০২৩

স্বল্প আয়ের মানুষদের কাছে কম দামে মাছ মাংস বিক্রি

কম দামে মাছ, মাংস বিক্রি

সত্তরোর্ধ্ব দিন মজুর দেলোয়ার হোসেন। প্রায় তিন কিঃ মিঃ পথ পায়ে হেটে দুধকুমোর নদী পার হয়ে চর যাত্রাপুর গ্রাম থেকে এসেছেন যাত্রাপুর বাজারে। জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে স্বল্প মূল্যে দেয়া এক কেজি মাছ কিনতে।  রমজান মাসের এই এক সপ্তাহে মাত্র একদিন ১শত টাকা দিয়ে ছোট্ট বৈরালী মাছ কিনে পরিবারের ৭জন সদস্য খেয়েছিল। বাকী কয়েকদিন শাকসবজি দিয়ে খেয়ে রোজা রেখেছেন। আজ ভীষন খুশি মাত্র ৮০টাকায় এক কেজি মাছ কিনে পরিবারের মানুষদের মুখে একটু বড় মাছের স্বাদ তুলে দিতে পারবে। 

এজন্য জেলা প্রশাসনের এ উদ্যোগকে ধন্যবাদ দিয়েছেন তিনি। সাম্প্রতিক সময়ে বয়লার মুরগী ,মাছ,মাংস সহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষরা অসহায় হয়ে পড়েছে। মাছ ও মাংস কেনা অনেকের সাধ্যের বাহিরে চলে গেছে। 

বৃহষ্পতিবার দুপুরে জেলা প্রশাসক কর্তৃক মূল্য সমন্বয় পূর্বক নিম্ন আয়ের মানুষদের মধ্যে ৮০টাকা কেজি দরে কার্প মাছ ও ৬শ টাকা কেজি দরে গরুর মাংস বিক্রির কার্যক্রম উদ্বোধন করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোঃ মিনহাজুল ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রাসেদুল হাসান, কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি রাজু মোস্তাফিজ, সম্পাদক আবদুল খালেক ফারুক, উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা ইসমত আরা, যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল গফুর ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

যাত্রাপুর বাজারে এসেছেন নয়ানী পাড়া গ্রামের মোমেনা বেগম (৬৫) ,স্বামী মৃত সবুর আলী। তার পরিবারে ৫ জন সদস্য। একমাত্র পুত্র মনোয়ার ঢাকায় রং মিস্ত্রির কাজ করে। তিনি এক কেজি মাছ কিনেছেন। শুধু বললেন তার এলাকার মেম্বারের কাছে শুনে এসেছেন জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্বল্প আয়ের মানুষদের কাছে কম দামে মাছ ও গরুর মাংস বিক্রি করবে। শুধু তিনি নন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মোঃ মংগা হোসেন (৬৬), শহীদুল ইসলাম (৫৩), দিনমজুর আবুল হোসেন (৬০), দশম শ্রেনীর ছাত্র নুরনবী (১৫) সহ আরও অনেকে যাত্রাপুর ইনিয়নের কাজলদহ,গোয়ালপাড়া,নয়য়ানী পাড়া,গারুহারা সহ বিভিন্ন চর-দ্বীপচর গ্রাম থেকে এসেছে কয়েক শত মানুষ। 

কুড়িগ্রাম জেলার স্বল্প আয়ের মানুষরা যাতে এই রমজান মাসে একটু মাছ ও মাংস খেতে পারেন এ উদ্যোগ নিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহম্মদ সাইদুল আরীফ। জেলার প্রতিটি উপজেলায় প্রত্যন্ত এলাকায় স্বল্প আয়ের প্রায় কয়েকশ মানুষদের জন্য এই মাছ ও মাংসের বিক্রির ব্যবস্থা করেছেন পুরো রমজান মাস। প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বল্প আয়ের মানুষদের একটু স্বস্তির জন্য টিসিবি, ও এম এস সহ নানা উদ্যোগ নিয়েছেন। তিনি নির্দেশ দিয়েছেন শহরের পাশাপাশি প্রত্যতন্ত গ্রামের মানুষরাও যেন মাছ মাংস খেতে পারেন। তার এ নির্দেশনার কথা ভেবেই কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসন এ উদ্যোগ নিয়েছে। 

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার দুধকুমোর নদীর পারে যাত্রাপুর ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নে ব্রক্ষপুত্র,ধরলা,দুধকুমোর ও গঙ্গাধর নদ-নদী প্রবাহিত। ভগবতীপুর,পশ্চিম ঝুনকা,অষ্টআশিরচর, রলাকাটা, বৈলপুরী,পার্বতীপুর,কালীরআলগা,চরযাত্রাপুর, চর ঘনশ্যামপুর,চিড়া খাওয়ারচর  সহ প্রায় ১৫টি চর-দ্বীপচর রয়েছ। এখানকার অধিকাংশ মানুষ পুরোপুরি শ্রমের উপর নির্ভরশীল। এখানে প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ বসবাস করে। কাজের সন্ধানে তারা ঢাকা সহ সারা দেশে চলে যায়। বলাতিপাড়া গ্রামের (১ নং ওয়ার্ডের)  দিনমজুর মোঃ মাসুদ (৩৫) ৬শ টাকায় এক কেজি মাংস কিনেছে। দারুন খুশী সে। বাজারে ৭শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন গত এক বছর থেকে মাংস খাইনা। 

তার এক আত্মীয়র কাছে টাকা ধার করে এই মাংস কিনেছি। আজ একটু মাংস খেতে পারবে পরিবারে সদস্যরা। বাজারে গরু,বয়লার মুরগী মাছের দাম বেড়ে যাওয়ায় তারা আর নিয়মিত মাছ মাংস কিনতে পারে না। গোয়ালপাড়া গ্রামের রাসেদুল জানান জেলা প্রশাসনের  কম দামে মাছ মাংস বিক্রির এই কার্যক্রম দারুন সারা পড়েছে তাদের পুরো ইউনিয়নে। চর যুাত্রপুর গ্রামের জাহেরা খাতুন জানান  এক কেজি সিলভার কাপ  কিনেছেন মাত্র ৮০ টাকায়। অথচ বাজারে এসব মাছের দাম প্রতি কেজি ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে বাজারে আসা মানুষজন জানান শহরঞ্চলে এমন কমদামে সরকারের পক্ষে মাছ মাংস বিক্রির কথা শুনলেও প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলে এই প্রথম জেলা প্রশাসন বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে। তারা জেলা প্রশাসনের এ উদ্যোগকে ধন্যবাদ জানান। 

যাত্রাপুর বাজারের ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার (৬১) জানান নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য রমজান মাসে জেলা প্রশাসনের কম দামে মাছ মাংস বিক্রির  খুব ভালো উদ্যোগ। এই কম আয়ের মানুষরা তাদের পরিবার নিয়ে একটু মাছ মাংস খেতে পারবে। তিনি আরও ব্যপক আকারে করার জন্য জেলা প্রশাসককে অনুরোধ করেন।

যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল গফুর জানান রমজান মাস উপলক্ষ্যে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে গরীব ও অসহায় মানুষের মাঝে ৮০ টাকা কেজি দরে মাছ ও ৬শ টাকা দরে গরুর মাংস বিক্রির উদ্যোগকে তার এলাকার স্বল্প আয়ের মানুষরা দারুন খুশী। বর্তমানে দু’শ মানুষকে আগে আসলে আগে পাবেন এর ভিত্তিতে  দিলেও আগামীতে আরও বেশী মানুষকে দেয়ার দাবী করেন।

জেলা প্রশাসক মোহম্মদ সাইদুল আরীফ জানান কুড়িগ্রাম জেলার স্বল্প আয়ের মানুষরাও যেন রমজান মাসে একটু কম দামে মাছ মাংস ক্ষেতে পারে তার জন্য এ ব্যবস্থা। সব উপজেলায় পর্যায়ক্রমে স্বল্প দামে মাছ ও মাংসের বিক্রির ব্যবস্থা করা হবে।

এমএস

×