ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে জমি অধিগ্রহণ

কলাপাড়ায় দেড় শতাধিক কৃষক-জেলে পরিবার বিপাকে

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, পটুয়াখালী

প্রকাশিত: ১৫:৫২, ২৪ মার্চ ২০২৩

কলাপাড়ায় দেড় শতাধিক কৃষক-জেলে পরিবার বিপাকে

ভাঙা হচ্ছে বাড়ি-ঘর

চম্পাপুর ইউনিয়নের উত্তরদেবপুর গ্রামের বাসিন্দা হারুণ হাওলাদার। ষাটোর্ধ বয়সের এই মানুষটি প্রায় ৬০ বছরের পুরনো বাড়িঘর ছেড়ে মালামাল স্ত্রী সন্তান নিয়ে এখন ভাইগ্নার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। ক্ষতিপূরণের একটি টাকাও পায়নি হারুন হাওলাদার। 

আশুগঞ্জ পাওয়ার প্লান্টের লোকজনকে অনেক অনুরোধ করেছেন, আর কয়টা দিন সময় চেয়েছিলেন। কিন্তু তারা কোন কথা শুনতে চান না। উল্টো পুলিশ নিয়ে ভয় দেখিয়েছেন। কৃষি কাজসহ মৌসুমি ব্যবসা করা এ মানুষটি এখন দাঁড়িয়ে থাকা ঘরটি সরানোর চেষ্টা করছেন বলে জানালেন। মানুষটি মনের কষ্টে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। সখের বসতি বাড়িঘর ছাড়তে হচ্ছে কোন ক্ষতিপূরণ ছাড়াই। শনিবারের মধ্যে তার ঘর ছাড়ার শেষ আল্টিমেটাম।

একই গ্রামের আরেক বাসিন্দা শাহজালাল মোল্লা জানান, তার ঘর গাছ গাছালি কোন ধরনের নোটিস ছাড়াই ভাংতে ছিল। দশ মিনিটের মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের মতো বেকু মেশিন দিয়ে ভেঙে দেয়। এক ছেলে অনুরোধ করছিল কয়েকদিন সময় চেয়ে। উল্টো পুলিশ এনে মিথ্য অভিযোগে মামলার ভয় দেখানো হয়। যা হবার তাই হয়েছে। 
এখন সেমিপাকা ঘরের দেয়াল দাঁড়িয়ে আছে। স্ত্রী আছিয়া বেগমকে নিয়ে চারজনের সংসার নিয়ে মানুষটি এখন একই গ্রামে নিজের অন্য জমিতে একটি ছাপড়া দিয়ে অবস্থান করছেন। ৫১ শতক জমিতে করা এক যুগের বসতিভিটা হারাতে হলো তাকে। জানালেন শাহজালাল এক বছর আগে ঘরের ক্ষতিপূরণ বাবদ ২০ লাখ টাকা পেয়েছেন। গাছপালার কোন ক্ষতিপূরণ জোটেনি। কৃষি জমির বাবদ এক পয়সাও পায়নি।

সুলতান হাওলাদার জানান, এই স্থানের ৩২টি পরিবারের ঘরবাড়ি এই মুহুর্তে ছাড়ার জন্য পুলিশসহ হুমকি দেয়া হয়েছে। তাই সবাই এখন যে যার মতো ঘর ভেঙে নিচ্ছেন। এর মধ্যে আটটি দরিদ্র পরিবার ক্ষতিপূরণ বাবদ কোন টাকা-পয়সা পায়নি। তাদের দুরবস্থার শেষ নেই। এমন দুরবস্থায় পড়েছেন কৃষক নুরআলম হাওলাদার, জেলে জসিম মৃধা, কৃষক নাসির হাওলাদার, কালাম হাওলাদার, আব্দুল হক হাওলাদার, আবু কালাম হাওলাদার, হারুন হাওলাদার ও বিধবা রওশন আরা। এদের অনেকে কোন উপায় না পেয়ে বেড়িবাঁধের ওপর আশ্রয় নিয়েছেন। 

এভাবে দেবপুর ও চালিতাবুনিয়া গ্রামের অন্তত দেড় শতাধিক পরিবারে বাড়িঘর ছাড়ার আতংকে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। একদিকে রোজার মাস। এদের কাছে আসন্ন ঈদের উদযাপন অনিশ্চয়তায় রয়েছে। এসব দরিদ্র পরিবারের দাবি আগে পুনর্বাসন করে পরে উচ্ছেদ করা হোক। নইলে সামনের বর্ষা মৌসুমে পরিবার পরিজন নিয়ে কোথায় যাবেন তাও জানে না এসব মানুষ। বর্তমানে গ্রামটিতে এক ধরনের উচ্ছেদ আতঙ্ক বিরাজ করছে। 

কারণ আশুগঞ্জ পাওয়ার কোম্পানির ভূমি উন্নয়ন কাজ করার জন্য আজ এবং আগামীকালের মধ্যে অধিগ্রহণকৃত বাউন্ডারির মধ্যেও সকল বাড়িঘর ছাড়ার জন্য হুমকি দেয়া হয়েছে। না ছাড়লে হামলা-মামলা করা হবে বলেও অভিযোগ উঠেছে। দরিদ্র ভুক্তভোগী এসব মানুষের অভিযোগ ওই ঠিকাদারের সঙ্গে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ একশ্রেণির মধ্যস্বত্তভোগী দালালও রয়েছে। বসতভিটা ও জমিহারা মানুষগুলোর দাবি এই বিদ্যুৎ কোম্পানির আবাসন প্রকল্পের কাজ এই বর্ষায়ও শেষ হবে না। তাইলে তারা কোথায় গিয়ে থাকবেন। 

১৩২০ মেগাওয়াট আশুগঞ্জ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে ধানখালী, দেবপুর, পাঁচজুনিয়া ও চালিতাবুনিয়া মৌজা থেকে মোট ৯২৫ একর কৃষি জমি অধিগ্রহণের আওতায় নেয়া হয়েছে। যার মধ্যে ক্ষতির শিকার হয়েছে ১৮০টি পরিবার। যাদের পুনর্বাসনের জন্য ধানখালী ইউনিয়নের ধানখালী মৌজায় ১৫ একর ৩৭ শতক জমি অধিগ্রহণের আওতায় নেয়া হয়েছে।

এসআর

×