ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

পাবনা-৫

স্বস্তিতে আওয়ামী লীগ বিএনপিতে অস্থিরতা

কৃষ্ণ ভৌমিক, পাবনা

প্রকাশিত: ০০:২৬, ২২ মার্চ ২০২৩

স্বস্তিতে আওয়ামী লীগ বিএনপিতে অস্থিরতা

১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে পাবনা-৫ (সদর) আসন

১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে পাবনা-৫ (সদর) আসন। সারাদেশের মতো এই আসনেও বইছে আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের মৃদুমন্দ হাওয়া। রাজনৈতিক দলগুলোর সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরা নির্বাচনী এলাকায় সামাজিক-সাংস্কৃতিক-ধর্মীয় অনুষ্ঠানসহ নানা কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করছেন। 
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আসনটিতে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। এই আসনে টানা গত তিনটি নির্বাচনেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। বর্তমান সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্স চতুর্থবারের মতো নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তিনি এখনো দৃশ্যত আসনটিতে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী।

বিপরীতে, কোন্দল-দ্বন্দ্বে বিএনপির অবস্থা বেশ নাজুক, জামায়াতও আসনটিতে ভাগ বসাতে গোপনে কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছে। ১৯৭৩ সালের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুল মমিন তালুকদার এই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ’৭৫ পরবর্তী সময়ে ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে এই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বাংলাদেশ মুসলিম লীগের এম এ মতিন। ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী রফিকুল ইসলাম বকুল  নৌকা প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. ইকবাল হোসেন সংসদ সদস্য নির্বচিত হন।
১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী মাওলানা আব্দুস সুবহান আওয়ামী লীগ প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুলকে হারিয়ে সংসদ সদস্য হন। এরপর অভ্যন্তরীণ কোন্দলে রফিকুল ইসলাম বকুল দলত্যাগ করে বিএনপিতে যোগ দেন। ১৯৯৬ সালে বিএনপি প্রার্থী হিসেবে রফিকুল ইসলাম বকুল আওয়ামী লীগ প্রার্থী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব) একে খন্দকারকে হারিয়ে বিজয়ী হন। 
২০০১ সালে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ওয়াজিউদ্দিন খানকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য হন জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী মাওলানা আব্দুস সুবহান। ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর দুর্গ ভেঙে মাওলানা আব্দুস সুবহানকে পরাজিত করে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের তৎকালীন তরুণ প্রার্থী গোলাম ফারুক খোন্দকার প্রিন্স। এরপর ২০১৪ সালের নির্বাচন এবং সর্বশেষ ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে টানা তিনবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এই আসন থেকে বর্তমান সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্স মনোনয়ন পাচ্ছেন বলে তার সমর্থকদের দাবি। এ আসনটিতে আওয়ামী লীগের একমাত্র প্রার্থী হিসেবে তিনি বেশ সুবিধাজনক অবস্থানেই রয়েছেন। পাবনার কৃতী সন্তান মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ায় এ আসনে গোলাম ফারুক প্রিন্সের মনোনয়নে কোনো ঝুঁকি নেই বলে মনে করছেন দলীয় নেতাকর্মী, সমর্থকরা।
কারণ হিসেবে তাদের বক্তব্য হচ্ছে- পাবনা-১ (সদর) আসন থেকে মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন প্রার্থী হচ্ছেন বলে কিছুদিন ধরে জোরেশোরেই শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু তিনি দেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ায় টানা তিনবারের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্সের এখন তেমন কোনো শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। সদর আসনটি অতীতে বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীর ঘাঁটি হিসেবে পরিচিতি পেলেও টানা তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে আসনটির রাজনৈতিক দৃশ্যপটই তিনি পাল্টে দিয়েছেন। এখন আসনটি এখন আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি হিসেবেই পরিচিত। 
সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্স সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। বিনা পয়সায় অনেক ছেলে মেয়েকে চাকরি দেয়া ছাড়া ও যে কেউ তার সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি ধৈর্য্য ধরে সবার কথা শোনেন ও প্রতিকারের ব্যবস্থা করেন। সবকিছু মিলিয়ে তিনি আওয়ামী লীগের শক্তিশালী প্রার্থী।
অন্যদিকে, এ আসনে বিএনপিতে অভ্যন্তরীণ-কোন্দল দৃশ্যমান। কিছুদিন পূর্বে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হলেও বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী পরিবহন শ্রমিক নেতা শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসকে পাশ কাটিয়ে তার গ্রুপের নেতাকর্মীদের বাদ দেয়া হয়েছে। এনিয়ে বিএনপিতে তীব্র অসন্তোষ বিরাজ করছে। আন্দোলনের মাঠেও রয়েছেন শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের  সমর্থক নেতাকর্মীরা। এ আসনে তিনি বিএনপির একজন  শক্তিশালী প্রার্থী।
বিএনপির অন্য সম্ভাব্য প্রার্থীরা হচ্ছেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুর মোহাম্মদ মাসুম বগা। এখানে দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির কোনো প্রার্থী না দেয়ায় নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। জোটভুক্ত নির্বাচন হলে এ আসনটি বিএনপি শরিক জামায়াতকে ছেড়ে দেয়ায় বিএনপি কর্মীদের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হয়েছে। গত নির্বাচনে শামসুর রহমান শিমুল বিশ^াস দলীয় মনোনয়ন পেলেও ঐক্যজোটের প্রার্থী হিসেবে জামায়াতে ইসলামী নেতা অধ্যক্ষ মাওলানা ইকবাল হোসাইনকে ধানের শীষ প্রতীক দেয়া হয়।

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় তথা ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী জামায়াতে ইসলামীর নেতা অধ্যক্ষ মাওলানা ইকবাল হোসাইনকে দলীয় প্রতীক দেওয়ায় বিএনপি এটা ভালো চোখে যেমন দেখেনি, তেমনি জামায়াত সমর্থকরাও তা ভালোভাবে নেননি। যদিও আগেই জামায়াত পাবনা-৫ আসনটিতে অধ্যক্ষ মাওলানা ইকবাল হোসাইনকে তাদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে।
জোটভুক্ত নির্বাচন হলে জামায়াত এ আসনটি কিছুতেই ছাড়বেন না এটা বিএনপি কর্মী সমর্থকরাও ভালো করেই জানেন। এ নিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের প্রার্থী হতে পাবেন জেলার সহ-সভাপতি বিশিষ্ট লেখক-গবেষক আমিরুল ইসলাম রাঙা। বাংলাদেশের ওয়াকার্স পার্টির মনোনয়নপ্রত্যাশী হতে পারেন একুশে বই মেলা উদযাপন পরিষদের সভাপতি কমরেড জাকির হোসেন। এছাড়া সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির প্রার্থী হতে পারেন আব্দুল কাদের খান কদর।

ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের প্রার্থী হতে পারেন প্রভাষক বাকীবিল্লাহ। এলাকার সচেতন ভোটার ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপি তাদের দলের মধ্যে সৃষ্ট কোন্দল মিটিয়ে ফেলতে পারলে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যেই মূল লড়াই হবে। তবে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের দৃশ্যত কোনো কোন্দল-দ্বন্দ্ব না থাকায় আগামী নির্বাচনে নৌকার টানা চতুর্থবারের বিজয়ের ক্ষেত্রে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে।

×