ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভবদহে এবার বোরো আবাদ

​​​​​​​স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস

প্রকাশিত: ২১:৩৪, ১৭ মার্চ ২০২৩

ভবদহে এবার বোরো আবাদ

ভবদহের দুই বিলে এবার বোরো চাষ হয়েছে

দীর্ঘ পাঁচ বছর পর ভবদহ অঞ্চলের দুটি বিলে সোনালি ফসলের হাতছানি দিচ্ছে। চলতি বোরো মৌসুমে ভবদহের বিল কেদারিয়া বিল কপালিয়ায় বোরো আবাদ হয়েছে। বিল দুটিতে দিগন্তজোড়া মাঠে কেবল বোরো ধানের সবুজের সমারোহ। ভবদহের যাঁতাকলে পিষ্ট বিল কেদারিয়া বিল কপালিয়ার কৃষকদের উদ্যোগে বিল হতে পানি নিষ্কাশনের কারণে এই সবুজ বিপ্লবের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। এই দুই বিলের কৃষকরা নিজেরা সংগঠিত হয়ে বিলের পানি নিষ্কাশন করে এই সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছেন বলে দাবি তাদের।

স্থানীয় চাষীরা জানান, ভবদহে জলাবদ্ধতায় ডুবে থাকা বিল কেদারিয়া বিল কপালিয়ার পোড় খাওয়া কৃষকরা নিজ উদ্যোগে সংগঠিত হন। তাদের সংগৃহীত প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে পাউবোর (পানি উন্নয়ন বোর্ড) বেড়িবাঁধ সংস্কার করে বিএডিসির (বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন) সহায়তায় সেচ পাম্প দিয়ে বিলের পানি নিষ্কাশন করেন। এরপর এই বিলে চলতি বোরো মৌসুমে শতকরা প্রায় ৮৬ ভাগ জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। যা হাজারো পরিবারের স্বপ্ন সবুজ ধানের দোলায় দুলছে। সূত্র জানায়, ২০২০ সালের শুরুতে বিল কপালিয়া হতে পানি সরাতে স্থানীয় তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান মাস্টার মশিয়ূর রহমান, কালিপদ ন্ড, পরিতোষ বিশ্বাসসহ আরও অনেকে বিলপাড়ের কৃষকদের সংগঠিত করেন। তাদের উদ্যোগে কৃষকদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে সেচ পাম্প স্থাপন করে বিল থেকে পানি নিষ্কাশন কার্যক্রম শুরু হয়। শুরুতে ভাল ফল না হলেও পরে সুফল আসতে শুরু করে।

প্রতি বছর বিল কপালিয়ায় বোরো আবাদ বাড়তে থাকে। এরপর পাউবো এই ধারণা নিয়ে বিএডিসির (বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন) কাছে সেচ পাম্প কার্যক্রম গ্রহণের জন্য আবেদন করে। বিএডিসি আবেদনের প্রেক্ষিতে ভবদহ স্লুইস গেট দিয়ে পানি নিষ্কাশনে ৩০ এইসপির (হর্সপাওয়ার) ২০টি পাম্প সরবরাহ করে। পরে পাউবো উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন আরও ৪টি পাম্প সংযুক্ত করে। আরও পাম্প কিনতে প্রায় ৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ের একটি প্রস্তাবনা অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

এরপর বিল কেদারিয়ায় বোরো আবাদ করতে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এসএম ফারুক হুসাইনের নেতৃত্বে কৃষকরা সংগঠিত হন। প্রতি কৃষক দুই হাজার টাকা দিয়ে ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে লখাইডাঙ্গা হতে টেকারঘাট ব্রিজ পর্যন্ত পাউবোর বেড়িবাঁধ সংস্কার করেন। এতে বিলের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া টেকা নদী হতে নোনা পানি উত্তোলন বন্ধ হয়। এরপর বিএডিসির সহায়তায় অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন পাম্প দিয়ে সেচ কার্যক্রম শুরু করা হয়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে যার সুফল এবার পেতে যাচ্ছেন তারা।

বিল কেদারিয়ায় পানি নিষ্কাশনে ১০ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন হয়। তাদের তত্ত্বাবধায়নে চলে পাউবোর বাঁধ সংস্কার কাজ। কমিটির অন্যতম নেতা টিটো জানান, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এসএম ফারুক হুসাইন তখন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হননি। তারপরও তার নেতৃত্বে এই সেচ কার্যক্রম চলে। কমিটির আরেক সদস্য ইছহাক আলী গাজী বলেন, বিলের মাঝের ২০ হেক্টর জমি ছাড়া প্রায় সব জমিতে দীর্ঘ পাঁচ বছর পর ধানের আবাদ হয়েছে। বিষয়ে পাউবো নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহীদুল ইসলাম বলেন, তাদের সেচ কার্যক্রমের কারণেই এবার ভবদহ এলাকায় বোরো আবাদ বেড়েছে। চাষিরা সরকার গৃহীত পদক্ষেপের সুফল পাচ্ছে।

×