ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভদ্রা-সালতা এখন গোচারণ ভূমি

অপরিকল্পিত খননে জলে গেল ৪৬ কোটি টাকা

প্রবীর বিশ্বাস, খুলনা অফিস

প্রকাশিত: ২২:৫৮, ১৪ মার্চ ২০২৩

অপরিকল্পিত খননে জলে গেল ৪৬ কোটি টাকা

খনন করার পর আবার পলি পড়ে ভরে গেছে ডুমুরিয়ার ভদ্রা নদী

ডুমুরিয়ার বুকচিরে বয়ে চলা ভদ্রা ও সালতা নদীর অপরিকল্পিত খননে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ৪৬ কোটি টাকাই জলে গেল। খননের সময়ে নদীর জোয়ার ভাটার প্রতিবন্ধকতা অপসারণ না করায় মাত্র দেড় বছরের মাথায় নদী দুটি ভরাট হতে শুরু করে। বর্তমানে যার অধিকাংশ স্থান মরা খালে পরিণত হয়েছে। কোথাও আবার রীতিমতো চাষাবাদ হচ্ছে। বিলের চেয়ে নদীর তলদেশ উঁচু হওয়ায় বিলের পানি নিষ্কাশনের সুযোগ কমে গেছে।

ফলে নতুন করে দুর্ভোগে পড়েছে এলাকাবাসী। শঙ্কা রয়েছে আগামীতে ভয়াবহ জলাবদ্ধতার। পাউবো সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ৩ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুলনার সার্কিট হাউস মাঠে এক জনসভায় ডিজিটাল পদ্ধতিতে জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার ভদ্রা নদী খনন কাজের উদ্বোধন করেন। যা পানি উন্নয়ন বোর্ড ২০১৯ সালের ৩০ জুন ভদ্রা-সালতা খনন প্রকল্প নামের ওই প্রকল্পের মাধ্যমে ভদ্রা নদীর ২১ কিলোমিটার ও সালতা নদীর নয় কিলোমিটার খননকাজ শেষ করে।

৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রকল্পে কথা ছিল নদী ১২০ ফুট চওড়া আর ১৬ ফুট গভীর করা হবে। এতে করে জলাবদ্ধতা নিরসন ও সেচ কাজের সুবিধার স্বপ্ন দেখেছিলেন সদর, শোভনা, খর্ণিয়া, রঘুনাথপুর, রুদাঘরা ও রংপুর ইউনিয়নের ৫৫টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ।
গ্রামবাসীর অভিযোগ, কোনো নিয়মনীতি অনুসরণ না করে নদী খনন করা হয়েছিল। নদী থেকে মাটি উত্তোলন করে দুই পাড়ে রেখে দেওয়ায় বর্ষা মৌসুমে মাটি ধুয়ে আবার তা নদীতে গিয়ে পড়ে। ফলে এক বছরের মধ্যে জোয়ার-ভাটায় নদী পুনরায় ভরাট হয়ে গেলে ভেস্তে গেছে সব স্বপ্ন। স্থানীয়রা জানায়, পাউবো ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের হঠকারী সিদ্ধান্ত ও পরিকল্পনার অভাব ছিল।

পাউবো-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রহমান তাসকিয়া জানান, নদী দুটির নাব্য ফিরে পেতে খননের ব্যয় ছাড়াও ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি স্লুইসগেট নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হলেও পরে তা বাতিল হয়ে যায়। অতিদ্রুত নদী দুটি প্রায় আগের অবস্থানে ফিরে এসেছে। তিনি বলেন, খুলনা জেলা ও তৎসংলগ্ন এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে ভৈরব, আতাই, রূপসা, ভদ্রা, হামকুড়া ও গ্যাংরাইল নদী সিস্টেম পুনঃখনন/ ড্রেজিংসহ বিভিন্ন নদী ভাঙনকবলিত স্থানে নদীতীর প্রতিরক্ষা নামের প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে ২০২০ সালের ১৫ মে দাখিল করা হয়েছে। ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার সাতশ’ কোটি টাকা। আশা করছি প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এলাকাবাসীর সমস্যার সমাধান হবে।

এ বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেন, ভদ্রা ও সালতা নদী খনন করার সময় জোয়ার ভাটার পানি প্রবাহের কথা মাথায় রাখা হয়নি। গাবতলা এলাকায় নদীর মধ্যে বাঁধ রেখে নদী খনন করা হয়। এটাই ছিল কাল। সেকারণে সেখানে একটি সেতু তৈরি হলে এই অবস্থা হতো না। এ ছাড়া নদী খননের জন্য সার্বক্ষণিক একটা ড্রেজার মেশিন রাখতে বলা হয়েছিল সেটাও কর্তৃপক্ষ রাখে নাই।

×