ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

স্তর নেমে গেছে ৩৫ ফুট

যশোরে তীব্র পানি সংকট

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস

প্রকাশিত: ২১:৪০, ১৪ মার্চ ২০২৩

যশোরে তীব্র পানি সংকট

দূর থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করছেন সদর উপজেলার বীরনারায়ণপুর এলাকার জনগণ

গ্রীষ্মের আগেই পানি সংকটে পড়েছে যশোর। বিশেষ করে খাবার পানি সংগ্রহ করতে তাদের ছুটতে হচ্ছে দূর-দূরন্তে। পানির স্তর নেমে যাওয়ায় অধিকাংশ নলকূপ অকেজো। সেচ যন্ত্রগুলোও রয়েছে বিপৎসীমায়। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, পানির স্তর ২০ ফুট নিচে নামলেই সাধারণ নলকূপে পানি উঠতে সমস্যা হয়। বর্তমানে যশোর সদর উপজেলার অধিকাংশ অঞ্চলে পানির স্তর ৩৫ ফুট নিচে রয়েছে। বর্ষায় তুলনামূলক কম বৃষ্টিপাত, শীত ও বসন্তেও বৃষ্টিহীন হওয়ায় এ অবস্থা হয়েছে বলে মনে করছেন পানি বিশেষজ্ঞরা।

সদর ছাড়াও মনিরামপুর উপজেলায় বিভিন্ন গ্রামে পানির অভাব দেখা দিয়েছে। খাবার পানি সংগ্রহ করতে দূরে দূরে যেতে দেখা যাচ্ছে। সচল নলকূপগুলোতে পানি সরবরাহে পড়ছে দীর্ঘ লাইন। কলস, বালতি ভর্তি করে ভ্যানে পানি নিচ্ছে যশোর সদরের বীর নরায়নপুর গ্রামের বাসিন্দারা। কৃষকরা বলছেন এ বছর বোরো ধানে সেচ সংকট তৈরি হতে পারে। যেসব সেচযন্ত্রে পানি কম উঠছে সেসব মাঠের সেচ খরচ দ্বিগুণ হয়ে গেছে।
যশোর বিএডিসি সেচ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, পানি স্তর ২৬ ফুট নিচে থাকা মানেই সেচযন্ত্রের জন্য বিপদ সংকেত। গভীর নলকূপেও পানি উত্তোলনের হার কমে যায়। চাঁচড়ার পানিস্তর পরিমাপক যন্ত্রে পানির স্তর দেখাচ্ছে (৭.৮ মিটার) ২৫.৬৫ ফুট নিচে। সেচের ক্ষেত্রে পানির স্তর বর্ডার লাইনে রয়েছে। বিএডিসি কর্মকর্তারা জানান, বিএডিসি সেচ প্রকল্প আওতায় যশোরে গভীর নলকূপ রয়েছে ১১৮টি এবং এলএলপির মাধ্যমে ১১৮টি সেচযন্ত্র দিয়ে যশোরের বিভিন্ন নদী থেকে পানি উত্তোলন করে কৃষি ক্ষেতে সেচ দেওয়া হয়। কিন্তু এ বছর নদীতেই নেই পানি। স্বাভাবিকভাবেই এলএলপির মাধ্যমে সেচ ব্যাহত হচ্ছে। 
সদরের আব্দুলপুর গ্রামের কৃষক সেলিম হোসেন জানান, ‘আমি শ্যালোতে চাষ করি। বর্তমানে অধিকাংশ শ্যালোতে পানি কম উঠছে। যা উঠছে তা একদম কম। বীর নারায়ণপুর গ্রামের মামুন হোসেন জানান, টিউবওয়েলে চেপে চেপে কোনো প্রকার পানি উঠানো সম্ভব হচ্ছে না। যশোর সদর উপজেলার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী নুর ইসলাম বলেন, যশোরের অনেক জায়গায় ভূগর্ভের পানির লেয়ার ৩০-৩৫ ফুট নিচেই রয়েছে। যশোর পৌরসভায় সমস্যাটা একটু বেশি দেখা দিয়েছে।

আমাদের কাছে অভিযোগ আসছে। যেখানে বেশি সংকট সেখানে নতুন করে টিউবওয়েল স্থান ছাড়া কোনো উপায় নেই। কৃষি অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) আবু তালহা বলেন, ‘পানি সংকটের বিষয় কৃষকরা এখনো লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তবে পানি তুলনামূলক কম উঠছে। কারণ পানির লেয়ার এখন ২৬ থেকে ৩৫ ফুট নিচে চলে গেছে। গত বছর বৃষ্টির পরিমাণ একদমই  ছিল না। এ বছর খাল-বিলে তো পানিই নেই। আমরা যে খাল বিল থেকে দেশী মাছ পাই সেটা তো এখন পানি না থাকার কারণে বিলীন হয়ে গেছে।’

বিএডিসি সেচ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী মাযহারুল ইসলাম বলেন, পানি যে স্তরে আছে তাতে সমস্যা দেখা দেয়নি। আমাদের নিকট পানি সংকটের কোনো অভিযোগ আসেনি। তবে এই পানির স্তর যদি ৩০ ফুট নিচেই চলে যায় তা হলে অধিকাংশ সেচযন্ত্রে পানি উঠবে না। গত বছরে বৃষ্টির পরিমাণ অনেক কম ছিল। যার কারণে এ বছর পানির লেয়ার আরও নেমে যেতে পারে। এ সময় যদি বৃষ্টি না হয় তা হলে সমস্যা আরও প্রকট হতে পারে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদ পারভেজ বলেন, পৌরসভার বাইরে সদর উপজেলায় ৩০-৩৫ ফুট নিচে পানির লেয়ার নেমে গেছে। ব্যক্তিগতভাবে বসানো বেশিরভাগ টিউবওয়েল অকেজো হয়ে পড়েছে।

×