ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

বেহাল দশা মাঝের চর আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের

রাজু মোস্তাফিজ, কুড়িগ্রাম 

প্রকাশিত: ১৮:৪৭, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

বেহাল দশা মাঝের চর আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের

সরকারি বিদ্যালয়

একটি চালা ঘর। নেই কোনো বেড়া-দরজা-জানালা। দূর থেকে মনে হয় যেনো টঙঘর। বেঞ্চদুইটি ও তিন শ্রেণির তিন শিক্ষার্থী নিয়ে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। বাস্তবে আছে শুধু পতাকা, সাইন বোর্ড আর শিক্ষক। নেই কোনো সড়ক পথ। যেখানে যেতে হয় জমির আইল দিয়ে। এটি  উত্তর মাঝের চর আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। জরাজীর্ণ এই বিদ্যালয়টি কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার মোগলবাসা ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামে। 

সরেজমিনে দেখা যায়, চারদিকে কৃষি জমি থাকায় ধান রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন এখানকার কৃষকরা। জমির মাঝখানে চোখে পড়ে একটি টিনের চাল। শুধুমাত্র টিনের চালার সামনে বাঁশের মধ্যে লাগানো জাতীয় পতাকা উড়ছে। এর সামনে একটি সাইন বোর্ডে লেখা ‘উত্তর মাঝের চর আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’। 

দুটি ভাঙা ব্রেঞ্চ আর কয়েকটি প্লাস্টিকের চেয়ার। একটি মাত্র টেবিলের উপর শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর হাজিরা খাতা। শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৮০ জন থাকলেও সেখানে ৩য় শ্রেণির একজন, ৪র্থ শ্রেণির একজন ও ৫ম শ্রেণির একজন শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকসহ বসে আছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। নেই কোন শিক্ষার্থীর কোলাহল কিংবা শিক্ষকদের পাঠদানের জন্য ব্যস্ততা। বিদ্যালয়টি শুধু মাত্র কাগজ কলমে।শিক্ষার্থী না থাকলেও কর্মরত ৫ জন শিক্ষক। 

অনুসন্ধানে জানা যায়,কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার মোগলবাসা ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর মৌজায় ২০০৪ সালে বেসরকারিভাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে উত্তর মাঝের চরআদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয়। কিন্তু নিচু স্থান হওয়ায় বন্যার পানিতে ডুবে থাকে বছরের অধিকাংশ সময়। তাই ২০১১ সালে পাশেই উত্তর মাঝের চর গ্রামে উঁচু স্থানে স্থানান্তরিত করা হয় বিদ্যালয়টি। সেখানে থাকাকালীন ২০১৮ সালে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ হয়। 

গত বছরের বন্যায় ধরলা নদীর ভাঙনে একই ইউনিয়নের পাশ্ববর্তী গ্রামের চর কৃষ্ণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভেঙে যায়। এরপর সেই বিদ্যালয়টিও স্থানান্তরিত করা হয় উত্তর মাঝের চর গ্রামেই। 

পাশাপাশি দুইটি বিদ্যালয়ের অবস্থান হওয়ায় উত্তর মাঝের চর আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে ভূমি জটিলতা থাকার কারণে আগের স্থানে স্থানান্তর করার নির্দেশ দেয় উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। এরপর থেকেই বিদ্যালয়ের এমন চিত্র হলেও কর্তৃপক্ষের ভ্রুক্ষেপ নেই। বিদ্যালয়ের পরিবেশ না থাকায় সন্তানদের ভর্তি করাচ্ছেন না অভিভাবকরা। 

উত্তর মাঝের চর আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক আশরাফিয়া বিনতে আকতার বলেন, বিদ্যালয়ে আসার কোন পথ নেই। জমির আইল দিয়ে আসা-যাওয়া করতে হয়। পানি ও স্যানিটেশনেরও কোনো ব্যবস্থা নেই। এজন্য বাচ্চারা বিদ্যালয়ে আসে না। বিদ্যালয়ের শিশু শ্রেণি হতে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ৮০জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এর মধ্যে ১০/১৫ জন শিক্ষার্থী আসে অনিয়মিত। জমির আইল ভেজা থাকায় প্রায় সময় পিছলে পরে আহত এবং পোশাক নষ্ট হয় শিক্ষার্থীদের। 

অভিভাবক কাজলি বেগম বলেন, স্কুলের ঘর নেই , শুধু পতাকা,সাইন বোর্ড আছে। এটা নামেমাত্র এটি স্কুল। 

অভিভাবক লাইলী বেগম বলেন, সরকারি স্কুল হলেও এখানে ঘর,ব্রেঞ্চ, টিউবওয়েল, ল্যাট্রিন এমন কি স্কুলে আসার রাস্তাও নেই। এমন পরিবেশে কোন অভিভাবক কি তার সন্তান দিতে পারে?

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলতাফ হোসেন বলেন, বিদ্যালয় স্থানান্তর আর জমি সংক্রান্ত জটিলতার কারণে এমন করুণ চিত্র। দানকৃত জমিতে দাগ নাম্বারের সমস্যার কারণে নতুন ভবন হচ্ছে না। বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের জন্য বরাদ্দ আসলেও অর্থ ছাড় হচ্ছে না জমি জটিলতার কারণে। 

জমিদাতা ও ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন,আমি এক বিঘা জমি দান করেছি বিদ্যালয়ের নামে। প্রায় দুই বছর থেকে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি না থাকা এবং বিদ্যালয়ের উন্নয়ন না হবার জন্য সংশ্লিট কর্তৃপক্ষকে দায়ী করেন তিনি। 

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা কানিজ আখতার জানান, বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী না থাকায় প্রধান শিক্ষক এবং সহকারি শিক্ষকদের কাছে লিখিত ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। 

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফর রহমান জানান, জমি সংক্রান্ত সমস্যা থাকায় ভবন করা যাচ্ছে না। সদর এসিল্যান্ড (ভূমি কর্মকর্তা) সহ বিদ্যালয়ের স্থান পরিদর্শন করা হয়েছে। এবং জমি সংক্রান্ত জটিল দূর করতে প্রধান শিক্ষককে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। 
 

 

এসআর

×