ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে চট্টগ্রামে রিকশায় বসছে ডিজিটাল লাইসেন্স

নয়ন চক্রবর্ত্তী, চট্টগ্রাম অফিস 

প্রকাশিত: ২০:১৩, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে চট্টগ্রামে রিকশায় বসছে ডিজিটাল লাইসেন্স

রিকশা

বন্দরনগরী চট্টগ্রামে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে এবং যানজট কমাতে প্যাডেলচালিত রিকশায় কিউআর কোডযুক্ত ডিজিটাল লাইসেন্স দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। মূলত অবৈধ রিকশার দাপট কমাতে বারকোডসংযুক্ত রিকশার লাইসেন্স দিতে যাচ্ছে সংস্থাটি। 

চসিকের কর্মকর্তারা বলছেন, শহরে কতসংখ্যক রিকশা রয়েছে এর সঠিক পরিসংখ্যান নেই। আগের টিনের প্লেটে প্রিন্ট করা লাইসেন্স নকল করে প্রায় তিন লাখ রিকশা ও ভ্যান চলাচল করছে নগরীতে। বারকোড বসলে অবৈধ রিকশা দৌরাত্ম্য কমার পাশাপাশি সহনীয় হবে যানজট। 

জানা যায়, যানজট কমাতে দুই থেকে আড়াই বছর আগে এক বৈঠকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ ও চসিক বারকোড বসানোর সিদ্ধান্ত নেয়। করোনাসহ বিভিন্ন সমস্যার কারণে একাধিকবার এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। চসিক ও সিএমপি জানিয়েছে, চট্টগ্রামে প্রায় তিন লাখ রিকশা রয়েছে। 

যার মধ্যে প্রায় দুই লাখই অবৈধ। এসব অবৈধ রিকশার কারণে বন্দর নগরীর যত্রতত্র যানজট এবং সড়কে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। এসব অযান্ত্রিক বাহনকে ট্রাফিক বিভাগও আইনেরও আওতায় আনতে পারে না কোনোধরনের আইনী বাধ্যবাধকতা না থাকায়। 

এছাড়া মানবিক কারণেও রিকশা উচ্ছেদ করতে পারেনি চসিক ও সিএমপি। তবে মহানগরীর ভয়াবহ যানজটকে সহনীয় পর্যায়ে আনতে কিউআর কোড যুক্ত ডিজিটাল লাইসেন্স সংযুক্ত করার প্রক্রিয়ার বাস্তবায়ন হলে অবৈধ রিকশার সংখ্যা কমবে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

চসিক সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালে কেমিস্ট সিজিডি কনসোর্টিয়াম নামক প্রতিষ্ঠানকে ১ লাখ ৬ হাজার কিউআর কোড তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটিও তাদের কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন করেছে।

চসিকের রাজস্ব বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, মহানগরীতে ৭০ হাজার প্যাডেলচালিত রিকশার অনুমোদন থাকলেও শহরের অলিগলি ও মহাসড়কে চলছে অবৈধভাবে আরও দুই লাখ রিকশা । তাই সড়কের শৃঙ্খলা ফেরাতে এবং যানজট কমাতে অবৈধ অনুমোদনহীন রিকশাগুলোকে উচ্ছেদ করা হবে। আর লাইসেন্সযুক্ত রিকশাগুলোকে ডাটাবেইজের আওতায় আনা হবে। এজন্য ৭০ হাজার পুরাতন লাইসেন্সগুলোকে ডিজিটাল করার পাশাপাশি নতুন করে আরও ৩০ হাজার লাইসেন্স প্রস্তুত করা হয়েছে। এছাড়া ৬ হাজার ভ্যানগাড়ির জন্যও ডিজিটাল লাইসেন্স প্রস্তুত।

প্রসঙ্গত এসব লাইসেন্স বাবদ পরিশোধ করতে হবে রিকশা চালককে তিনশ টাকা। প্যাডেলচালিত চালিত হাজার হাজার রিকশাচালক এ বিষয়ে যদিও বা কিছুই জানেন না। আর বিভিন্ন মালিক সমিতি নামক কতিপয় সংগঠন এসব বিষয়ে জানলেও তাদের মন্তব্য ভিন্ন। তারা বলছেন, ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ করলে লাইসেন্স ফি দিতে অসুবিধা  নেই। তবে নগরীর অধিকাংশ রিকশাচালক ফি বিষয়ে ক্ষুব্ধ। তারা বলছেন, তিন বছরের বকেয়া ফিসহ লাইসেন্স নেওয়ার সক্ষমতা নেই রিকশা চালকদের। তারা তাই এ বিষয়ে অনাগ্রহ প্রকাশ 

তবে চসিকের কর্মকর্তারা জানান, চট্টগ্রাম শহরে রিকশার ঐতিহ্য আছে। এই শহরে লাখ লাখ মানুষের জীবিকা রিকশা ও ভ্যানের ওপর। তবে যানজট ও সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে এই উদ্যোগটি নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। একটি বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে লাইসেন্স ফি জমা নেওয়া হবে। 

এর মধ্যে ৩শ টাকা পাবে চসিক, বাকি ১৫০ পাবে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি। অ্যাপসের মাধ্যমে কিউ আর কোড স্ক্যান করে শনাক্ত করা হবে নগরীর বৈধ রিকশাগুলো। ফলে যেসব রিকশায় ডিজিটাল লাইসেন্স সংযুক্ত থাকবে না সেসব রিকশা সড়ক থেকে সিএমপি ও চসিক যৌথ অভিযানের মাধ্যমে উচ্ছেদ করবে। 
 

 

এসআর

×