ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঐতিহাসিক স্থানে পিকনিক

 মীর নাসির উদ্দিন উজ্জ্বল, মুন্সীগঞ্জ

প্রকাশিত: ০১:৫৭, ২৭ জানুয়ারি ২০২৩

ঐতিহাসিক স্থানে পিকনিক

মুন্সীগঞ্জ তথা বিক্রমপুরের পিকনিক স্পটগুলো সরব হয়ে উঠেছে

মুন্সীগঞ্জ তথা বিক্রমপুরের পিকনিক স্পটগুলো সরব হয়ে উঠেছে। রাজধানী ঢাকার কাছের এই জনপদের স্পটগুলোতে ভিড় বেড়েই চলেছে। আর স্বপ্নজয়ের পদ্মা সেতু ঘিরে যেন বিশেষ আকর্ষণ এখন। তাই পদ্মা সেতুর কাছাকাছি বা ঢাকা-মাওয়া বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ের আশপাশের স্পটগুলো গুরুত্ব পাচ্ছে বেশি। 
মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার রাঢ়ীখালের জগদ্বিখ্যাত বিজ্ঞানী স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুর স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটি পিকনিক স্পটগুলোর মধ্যে অন্যতম আকর্ষণ। এই বাড়ির এক পাশে এখন পিকনিক ¯পট হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছে। যেখানে কৌতূহলী নানা শিক্ষার্থী আর দেশী-বিদেশী শিক্ষার্থীদের আনাগোনায় মুখরিত। এই পিকনিক ¯পটটি দোহার সড়কের চলার পথে গাড়িতে বসে দেখা যায়। সেখানে এখন কৃত্রিমপাড়, লেক ও ঝর্ণাও তৈরি করা হচ্ছে। আর পিকনিক স্পটের সঙ্গেই রয়েছে প্রায় তিনশ’ বছরেরও বেশি পুরনো বিজ্ঞানীর স্মৃতিবিজড়িত ভবনটি। রয়েছে স্যার জগদীশের নানা স্মৃতির সংগ্রহশালা। নাম দেওয়া হয়েছে স্যার জগদীশ জাদুঘর। এই পিকনিক স্পট ও জাদুঘরে এখন ২০ টাকা টিকিট দিয়ে প্রবেশ করা যায়। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকছে। 
২৫ একরেরও বেশি জমির ওপর নির্মিত স্যার জেসি বোস ইনস্টিটিউশন। পুরো এলাকাটিই প্রকৃতির নৈসর্গিক মিলনমেলা। পুকুর আর গাছপালাগুলো মুগ্ধ করবে। এখানে প্রাকৃতিকভাবেই শোনা যাবে বিভিন্ন পাখির কলতান।  এর বড় অংশটিই এখন পিকনিক স্পট। রাজধানী থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে সুন্দর যোগাযোগ ব্যবস্থার এই স্পট ঘিরে তাই কৌতূহলী মানুষের ভিড়।  শ্রীনগর উপজেলার বালাশুরে জমিদার যদুনাথ রায়ের বাড়িতে বিক্রমপুর জাদুঘর। পাশেই বিশাল এলাকা।

এটিও পিকনিক স্পটে পরিণত হয়েছে।  জাদুঘরটি শীতকালে শনিবার থেকে বুধবার সকাল ৯টা থেকে ১টা এবং দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত খোলা থাকে। রাজধানী ঢাকা থেকে প্রাতিষ্ঠানিক পিকনিকে এসেছেছিলেন রাজধানীর বনানানীর বাসিন্দা মনোয়ারা আক্তার। তিনি বলেন, স্পট সৌন্দর্যের পাশাপাশি রাজধানীর কাছাকাছি আবার পদ্মা সেতু কাছে থাকায় এখানে আসা হয়েছে। আর বিজ্ঞানীর বাড়িতে এই পিকনিক স্পটে বাড়তি আনন্দ দিয়েছে।   
মাওয়া-শিমুলিয়ায় পদ্মা সেতু, ঢাকা-মাওয়া বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ে, পদ্মার ইলিশ, পদ্মা নদী ও পদ্মা তীরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ঘিরে তৈরি হয়েছে নতুন পিকনিক স্পটের হাব। অপার সম্ভাবনার এলাকাটিতে নানা রকম বৈচিত্রা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। স্বপ্নজয়ের পদ্মা সেতু পর্যটন শিল্পের যেন এক বিশাল সম্ভাবনার দুয়ার খুলে গেছে। সেতুর নিচে বিশাল পদ্মায় ছন্দময় ঢেউয়ের দাপাদাপি। আরও ওপরে নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলার ছোটাছুটি। আর দুই তীরে সবুজের সমারোহ।

আর মাঘের শীতের সকালে শিশিভেজা মেঠোপথ, সূর্যোদয়, খেজুরের রসসহ নানা রকমের আকর্ষণ। আর বিকেলে ঘুড়ি ওড়ানো, স্পিড বোটে বেড়ানো, সূর্যাস্তসহ  প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি।  ইট-পাথরের নগরজীবন থেকে সতেজ নিশ্বাস নিতে তাই ঢাকার কাছের এই জনপদটিতে ছুটে আসেন অনেকে। রাজধানী ঢাকা থেকে মাওয়ার দূরত্ব মাত্র ৩৫ কিলোমিটার। আসার এক্সপ্রেসওয়ে সড়কটিও অসাধারণ। পিকনিকে এসে অনেকেই বাঙালির মর্যাদার প্রতীক সেতু দেখার টার্গেট রাখছেন। সেতুর সঙ্গে পদ্মার জেলে, মাঝি মাল্লার ব্যস্ততা, আর পদ্মার ইলিশের কর্মযজ্ঞ বাড়তি আকর্ষণ।  

আর পদ্মাতীরের রেস্টুরেন্টে বসে বন্ধু-বান্ধব নিয়ে পছন্দের ইলিশ ভেজে গরম গরম স্বাদ গ্রহণ তো আছেই। এরই মধ্যে ভ্রমণ পিপাসু মানুষের পদচারণায় মুখর হয় শিমুলিয়া। ফেরি সার্ভিস বন্ধ হলেও এখন এক রকম পিকনিক স্পটে পরিণত হয়েছে এলাকাটি।  আর পুরনো মাওয়া ফেরিঘাটের পশ্চিম দিকে কান্দিপাড়া গ্রামের মাওয়া রিসোর্টটিও দেশের অন্যতম পিকনিক স্পটে পরিণত হয়েছে। নির্জন পরিবেশ আর সবুজে ঘেরা এলাকাটি অনেকের পছন্দের।
লৌহজং উপজেলা নির্বাহী অফিসার ডা. আব্দুল আউয়াল বলেন, পদ্মা সেতুর কারণে এখন আশপাশের পুরো পদ্মার পাড়ই পিকনিক স্পটে পরিণত হয়েছে। আর শিমুুলিয়ায় ফেরি বন্ধ হয়ে গেলেও পর্যটন শিল্প প্রসারিত হচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রশাসন সব রকম সহযোগিতা করছে বলেই হোটেল-রেস্তোরাঁ বেড়েছে। এসব বিষয়ে পর্যটন করপোরেশনের সঙ্গেও যোগাযোগ হচ্ছে।       মীর নাসির উদ্দিন উজ্জ্বল, মুন্সীগঞ্জ

×