ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চড়ুইভাতির মৌসুম

ফারুক হোসাইন, সোনারগাঁ

প্রকাশিত: ০১:৫৪, ২৭ জানুয়ারি ২০২৩

চড়ুইভাতির মৌসুম

প্রাচীন বাংলার প্রথম রাজধানী নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ

প্রাচীন বাংলার প্রথম রাজধানী নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ। এ সোনারগাঁকে ঘিরে রয়েছে প্রাচীন ইতিহাস ও ঐতিহ্য। এখানে রয়েছে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন (জাদুঘর) ও পানাম নগরী খাসনগর দিঘি, গিয়াস উদ্দিন আজম শাহের মাজার ও মেঘনা নদসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান। এসব দর্শনীয় স্থানের পাশেই খাসনগর দিঘির পার এলাকায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার শেখ সাইদুর রহমান নামের এক ব্যবসায়ী পর্যটকদের জন্য ১৬ বিঘা জমির উপর প্রায় শত কোটি টাকা ব্যয়ে চার তারকা মানের রয়েল রিসোর্ট নামের একটি বিলাসবহুল হোটেল নির্মাণ করেছেন।

২০১৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয় রয়েল রিসোর্ট। এ রিসোর্টের চারপাশে সবুজ প্রাকৃতিক মনোরম পরিবেশ আর রাজধানী ঢাকা একেবারে কাছে হওয়াতে দেশ ও বিদেশের পর্যটকসহ অনেকেই খাওয়া-দাওয়া ও রাত্রিযাপন করতে পছন্দ করেন এই রিসোর্টে।
জানা যায়, সোনারগাঁ উপজেলায় কয়েকটি ইকোনমিক জোন ও একাধিক পাওয়ার প্লান্টসহ বিভিন্ন কোম্পানির ছোট-বড় শতাধিক কারখানা রয়েছে। এসব কারখানায় কর্মরত দেশ-বিদেশের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের থাকাÑখাওয়ার জন্য ভালো মানের হোটেল না থাকায় অনেকেই বেছে নিয়েছে রয়েল রিসোর্ট। রিসোর্টের আবাসিক ভবনগুলোর নির্মাণশৈলী আলাদাভাবে নজর কাড়ে পর্যটকদের। তাই দেশের পর্যটক থেকে বেশি বিদেশীরা এ রিসোর্টে খাবার-দাবারসহ রাত্রিযাপন করেন।
কি কি সুবিধা রয়েছে  ॥ রয়েল রিসোর্টে বিদেশীদের থাকার জন্য রয়েছে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ভালো মানের পাঁচ ধরনের রুম, আলাদা খাবার  রেস্টুরেন্ট, বার, সুইমিংপুল, বিলিয়ার্ড ও অন্যান্য ইনডোর গেমের ব্যবস্থা, গাইড এবং ড্রাইভারদের জন্য রয়েছে আলাদা থাকার রুমসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা। তা ছাড়া দেশের পর্যটকদের জন্য খাবার রেস্টুরেন্ট, কনফারেন্স রুম, অডিটোরিয়াম, হল রুম, শিশু পার্ক, সুইমিংপুল, বিলিয়ার্ড ও অন্যান্য ইনডোর গেমের ব্যবস্থা, বারবিকিউ করার ব্যবস্থা, গাড়ি পার্কিংসহ বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধাতো থাকছেই এ রিসোর্টে।    
রুমের সংখ্যা, রুমের ধরন ও ভাড়া ॥ এই রিসোর্টে বিভিন্ন মানের ১২০টি রুম রয়েছে এবং সকল রুম শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। প্রতি রুমের সঙ্গে আলাদা বাথরুম ও বারান্দা। বিনোদনের জন্য রয়েছে টেলিভিশন ও জরুরি প্রয়োজনে প্রতিটি রুমে টেলিফোনের ব্যবস্থা। রুমের কেটাগরি অনুযায়ী এক রাতে সর্বনি¤œ ভ্যাটসহ ৮ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা ভাড়া পরিশোধ করতে হবে। 
খাবার ব্যবস্থা ॥ হোটেলটিতে অবস্থানরত বোর্ডারদের সুবিধার্থে এখানে দুটি রেস্টুরেন্ট রয়েছে। একটি দেশের পর্যটকদের জন্য অন্যটি বিদেশীদের জন্য আলাদাভাবে রেস্টুরেন্ট  ও বার রয়েছে। এখানে দেশী-বিদেশীদের জন্য আলাদাভাবে বাংলা, ইন্ডিয়ান, চাইনিজ ও ইংলিশসহ বিভিন্ন ধরনের খাবার পাওয়া যায়। তা ছাড়া বুফে খাওয়ার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। খাবারের মূল্য মেনু অনুযায়ী নির্ধারিত হয়ে থাকে।
অগ্রিম বুকিং ব্যবস্থা ॥ এ রিসোর্টে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে রুম, কনফারেন্স রুম, অডিটোরিয়াম, হলরুম, পার্ক ভাড়া নেওয়ার ক্ষেত্রে সরাসরি, ফোন, ফ্যাক্স, ই-মেলের মাধ্যমে অগ্রিম রুম বুকিং-এর ব্যবস্থা রয়েছে। এক্ষেত্রে ন্যূনতম ২ থেকে ৩ দিন আগে যোগাযোগ করতে হবে এবং সেইসঙ্গে রুমের এক রাতের ভাড়া অগ্রিম পরিশোধ করতে হবে। 
হলরুম, পার্টি সেন্টার বা অডিটরিয়াম ॥ ১ থেকে ২ হাজার লোকের ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন হলরুম রয়েছে। এ হলরুমটি বিভিন্ন ধরনের পার্টি, রাজনৈতিক, সামাজিক, পিকনিক অনুষ্ঠানের জন্য ভাড়া দেওয়া হয়। বুকিং-এর ক্ষেত্রে অনুসন্ধান ডেস্কে সরাসরি যোগাযোগ বা তাদের ওয়েবসাইট এর হটলাইন নম্বরে যোগাযোগ করে ভাড়া করা যায়। ভাড়ার হার খাবারের মেনু ও লোকসংখ্যার ওপর ভিত্তি করে খরচ নির্ধারণ করা হয়।
বিল পরিশোধ করার পদ্ধতি ॥ এই হোটেলটির সকল প্রকার বিল নগদ টাকায়, বিকাশ, নগদ, রকেট, ইউকেশসহ বিভিন্নভাবে পরিশোধ করার সুযোগ রয়েছে এবং ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বিল পরিশোধ করা যায়।
কীভাবে রয়েল রিসোর্টে আসা যায় এবং যোগাযোগ ॥ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মোগরাপাড়া চৌরাস্তা বাসস্ট্যান্ড নেমে সিএনজি বা অটোরিক্সা যোগে লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের (জাদুঘর) পাশেই রয়েল রিসোর্ট। ঢাকার গুলিস্তান থেকে প্রতিদিন দোয়েল ও স্বদেশ পরিবহন নামের কয়েকটি কোম্পানির বাস ছেড়ে আসে সোনারগাঁয়ে। রয়েল রিসোর্টে এর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম মোবাইল-০১৭০৯৩৭১৬৮০, ০১৭০৯৩৭১৬৮১। ওয়েবসাইট যঃঃঢ়://ংড়হধৎমধড়হৎড়ুধষৎবংড়ৎঃ.পড়স.
রয়েল রিসোর্টের কর্মকর্তা মশিউর রহমান চৌধুরী রনি বলেন, আমি দেড় বছর যাবৎ এখানে কাজ করছি। এর আগেও পাঁচ তারকা মানের হোটেলেও কাজ করেছি। কিন্তু অন্য হোটেলের তুলনায় রয়েল রিসোর্ট অনেক পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন। তাই বিদেশীরা এখানে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।
রয়েল রিসোর্টের সহকারী ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ বলেন, আমাদের রিসোর্টে যে কোনো দেশের খাবার পরিবেশন করা হয়। সবসময় ফ্রেশ খাবার পরিবেশন করে থাকি। বিদেশীদের জন্য আলাদা রেস্টুরেন্ট রয়েছে।
রয়েল রিসোর্টের সহকারী সাধারণ পরিচালক খায়রুল কবির লাল বলেন, দেশের চেয়ে বিদেশী লোকজন বেশি থাকেন রিসোর্টে। তাদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। বিশেষ করে ইন্ডিয়া,  কোরিয়ান, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়ান, তুরস্ক, ফিলিপাইন, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশের মানুষ বিভিন্ন কোম্পানিতে কাজ করেন, তাই রাতে এখানে থাকেন। বর্তমানে বিভিন্ন দেশের বিদেশী ফরেনার রয়েছে। তাদের জন্য সকল প্রকার সুযোগ- সুবিধা রিসোর্টে রয়েছে।
    
    -ফারুক হোসাইন, সোনারগাঁ

×