ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

৫ হাজার টাকা ঋণে ৫ লাখ টাকা সুদ, কৃষকের আত্মহত্যা

নিজস্ব সংবাদদাতা, মাদারীপুর ও কালকিনি  

প্রকাশিত: ২১:০১, ১০ ডিসেম্বর ২০২২; আপডেট: ২১:০৫, ১০ ডিসেম্বর ২০২২

৫ হাজার টাকা ঋণে ৫ লাখ টাকা সুদ, কৃষকের আত্মহত্যা

নিহত কৃষক বাবুল মল্লিক

তিন বছর আগে ৫ হাজার টাকা ধার দেন কৃষক। পরে সুধাসলে জোড় করে স্ট্যাম্পে লেখা হয় ৫ লাখ টাকা। এই টাকা দিতে না পারায় করা হয় মানসিক ও শারিরিক নির্যাতন। এমন কি চাষাবাদের ৫ বিঘা জমিও দখলে নেয় দাদন ব্যবসায়ীরা। 

শেষমেষ যন্ত্রনা সইতে না পেরে আত্মহত্যা করেন ওই কৃষক। মাদারীপুরে ডাসারের এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ স্বজন ও এলাকাবাসী। বিচার দাবী করেছেন তারা। অবশ্য পুলিশ বলছে, এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে ।

স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি আর ঘরে ফিরবে না এ শোক কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না তার স্ত্রী বুলবুলি মল্লিক। ছেলে তূর্য ও মেয়ে তন্নী। তারা শোকে পাথর হয়ে গেছে।

স্বজনদের অভিযোগ, তিন বছর আগে মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার দক্ষিন নবগ্রামের বাবুল মল্লিক (৫০), পাশের আলিশাকান্দি গ্রামের হাকিম আলী শিকদারের ছেলে লিটন শিকদারের কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা ধার নেন। এই টাকা দিতে না পারায় প্রায়ই বাবুলকে ডেকে নিয়ে মানসিক ও শারিরিক নির্যাতন করা হয়। 

এক পর্যায়ে জোড়পূর্বক সুদ-আসলে স্ট্যাম্পে ৫ লাখ টাকা লিখে চাপ প্রয়োগ করেন দাদন ব্যবসায়ী লিটন। এমনকি কৃষককের চাষাবাদের ৫ বিঘা জমিও দখলে নেয় সে। দিশেহারা হয়ে বাড়ির পাশের বাগানে শুক্রবার ভোররাতে আমগাছের সাথে গলায় রশি দিয়ে আত্মহত্যা করেন ওই কৃষক। 

স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরে দাদন ব্যবসায়ী লিটন, স্বপন, শওকত মিস্ত্রি ও আবুবক্কর শেখ সুদে টাকা দিয়ে মানুষের সাথে নানাভাবে প্রতারণা করে আসছে। এমন ঘটনায় অভিযুক্তদের বিচার দাবী করেছেন স্বজন ও এলাকাবাসী। 

নিহত বাবুল মল্লিকের স্ত্রী বুলবুলি মল্লিক বলেন, ‘প্রায়ই লিটন, স্বপন, আবু বক্কর শেখ ও শওকত মিস্ত্রি আমার স্বামীকে মোবাইলে ডেকে নিয়ে যেতো। মানসিক ও শারিরিকভাবে তারা নির্যাতন করেছে। 

তাদের এই অত্যাচারেই আমার স্বামী মারা গেছে। এই ঘটনার উপযুক্ত বিচার চাই।’ বাবুল মল্লিকের ছেলে তূর্য বলেন, ‘আমি এসএসসি পরীক্ষার্থী। বাবা ছিল সংসারে একমাত্র আয়ের উৎস। তার মৃত্যুতে পুরো পরিবার এখন অসহায়। 

কি করে সংসার চালাবো বুঝতেই পারছি না।’ স্থানীয় বাসিন্দা পিংকু মল্লিক বলেন, ময়না তদন্ত শেষে শুক্রবার রাতে নিহত বাবুলের শেষকার্য (দাহ) বাড়ির উঠানেই করা হয়। পরিবারে স্ত্রী ও এসএসসি পরীক্ষার্থী এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। এই পরিবারকে কে দেখে রাখবে। তারা তো এখন অসহায়।’

এদিকে এই ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত লিটন শিকদারের বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। ব্যবহৃত মোবাইলে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে তার মা আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘আমার সন্তান কেউই এমন ঘটনায় জড়িত না। বাবুল মল্লিকের পরিবারের লোকজন মিথ্যা কথা বলছে।’

ডাসার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. হাসানুজ্জামান জানান, ‘এ ব্যাপারে থানায় লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। দাদন ব্যবসায়ীদের এমন নানা সমস্যার বিষয়ে থানায় বেশ কয়েকবার মীমাংসাও করা হয়েছে। কিন্তু তাদের দৌড়াত্ম্য থামছেই না।’ 

 

এমএস

সম্পর্কিত বিষয়:

×