ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এক গুচ্ছ উন্নয়ন প্রকল্পে বদলে যাচ্ছে বন্দরনগরী

দ. এশিয়ার অর্থনৈতিক হাব হচ্ছে চট্টগ্রাম

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস

প্রকাশিত: ২৩:৪৬, ৩ ডিসেম্বর ২০২২; আপডেট: ০৯:২৬, ৪ ডিসেম্বর ২০২২

দ. এশিয়ার অর্থনৈতিক হাব হচ্ছে চট্টগ্রাম

দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম অর্থনৈতিক হাব হিসেবে গড়ে উঠছে চট্টগ্রাম

দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম অর্থনৈতিক হাব হিসেবে গড়ে উঠছে চট্টগ্রাম। ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করার পর থেকেই ধারাবাহিক উন্নয়নে পাল্টে গেছে চট্টগ্রাম। পলোগ্রাউন্ডে প্রধানমন্ত্রীর জনসভা আগামী নির্বাচন বিষয়ে একটা বার্তাও দেবে।
নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নে বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে গড়ে তুলতে বদ্ধপরিকর শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার। বিভিন্ন মেগাপ্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে চট্টগ্রাম দক্ষিণ এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ শহর হিসেবে গড়ে উঠেছে। এই সরকারের আমলে মীরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর, কর্ণফুলীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল, চট্টগ্রাম বন্দরের কারিগরি সহায়তা প্রকল্প, কর্ণফুলীর সদরঘাট থেকে বাকলিয়া পর্যন্ত ড্রেজিং, বন্দরের ইয়ার্ডের জন্য বিভিন্ন সরঞ্জাম ক্রয়, মহেশখালীর মাতারবাড়ি সমুদ্র বন্দর নির্মাণ প্রকল্প, বে-টার্মিনাল, সড়ক, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, দোহাজারী-কক্সবাজার রেল লাইনের কাজ এবং ওয়াসার স্যুয়ারেজসহ এক গুচ্ছ উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে বদলে যাচ্ছে চট্টগ্রাম।
বিগত জোট সরকারের আমলে কাক্সিক্ষত উন্নয়ন হয়নি চট্টগ্রামের। ফলে অর্থনৈতিক ও সামগ্রিক উন্নয়ন হয়নি। প্রাকৃতিক ও ভৌগোলিকভাবে সুবিধাজনক অবস্থানের কারণে চট্টগ্রামের উন্নয়নের সুযোগ অনেক বেশি। কিন্তু প্রকল্প বলতে কিছুই ছিল না। যার ফলে উন্নয়নবঞ্চিত চট্টগ্রামের চেহারা পাল্টে দিয়ে জনগণের হৃদয়ে স্থান নেয় আওয়ামী লীগ।
সংসদের হুইপ ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, মীরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে সরাসরি ১৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। পরোক্ষে ৫০ লাখ মানুষের কাজের সুযোগ হবে। সারাদেশ  থেকে মেধাবী সন্তানরা কাজ করতে চট্টগ্রামে আসবে। টানেল চালু হলে মাতারবাড়ি পর্যন্ত শিল্প এলাকা গড়ে উঠবে। ১০ বছর পর এই মহাউন্নয়নের সুফল দেখবেন।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সংসদ সদস্য মোছলেম উদ্দিন আহমদ বলেন, ২০০৮ সালে নির্বাচনী সভায় আমাদের নেত্রী চট্টগ্রামের উন্নয়নের দায়িত্ব নিজে নেন। আজ যে অভূতপূর্ব উন্নয়ন, তা উনার অবদান। তার প্রতি আমাদের অল্প ঋণ পরিশোধের সুযোগ এসেছে এ জনসভার মাধ্যমে। বঙ্গবন্ধু এই চট্টগ্রামকে ভালোবাসতেন। জননেত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামকে অনেক ভালোবাসেন। তাই প্রধানমন্ত্রী নিজে চট্টগ্রামের দায়িত্ব নিয়েছেন।

দেশের অন্যতম মেগাপ্রকল্প বঙ্গবন্ধু টানেল। দেশের একমাত্র মেরিন বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামে হচ্ছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেন করেছেন। বন্দরে বে-টার্মিনাল করা হচ্ছে। কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারণ হচ্ছে। মীরসরাইতে শিল্প নগরে ১৫ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে। তাই চট্টগ্রাবাসী সন্তুষ্ট।
মীরসরাই ইকোনমিক জোন ॥ প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত ভিশন-৪১ বাস্তবায়ন এবং টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে চট্টগ্রাম। এরই অংশ হিসেবে মীরসরাইয়ে দেশের বৃহত্তম ইকোনমিক জোন বঙ্গবন্ধু শিল্প নগর গড়ে তুলছে সরকার। সেখানে ২২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। ১৩৩ জন বিনিয়োগকারীকে প্রায় সাত হাজার একর জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ১৫টি শিল্প প্রতিষ্ঠান নির্মাণাধীন রয়েছে। সেখান থেকে ২৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যমানের পণ্য রপ্তানি হবে।
আনোয়ারায় বিশেষ অর্থনৈতিক জোন ॥ আনোয়ারার গহিরায় ৭৭৪ একর জমি নিয়ে বিশেষ অর্থনৈতিক জোন করতে ব্যয় করা হবে ১৬ হাজার কোটি টাকা। শিল্পায়ন, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ সৃষ্টির জন্য আনোয়ারার গহিরায় এই বিশেষ অর্থনৈতিক জোন করা হবে।
কর্ণফুলী বঙ্গবন্ধু টানেল ॥ কর্ণফুলীর নদীর তলদেশে নির্মিত হয়েছে উপমহাদেশের প্রথম টানেল। প্রধানমন্ত্রীর ফার্স্টট্র্যাকভুক্ত এই প্রকল্পটির সুফল আগামী বছরের শুরু থেকে পাবে জনগণ। তিন দশমিক ৩২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এই টানেলের সঙ্গে আনোয়ারা এবং পতেঙ্গা প্রান্তে পাঁচ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়কের কাজ চলমান রয়েছে। আনোয়ারা প্রান্তে রয়েছে দীর্ঘ ৭২৭ মিটারের উড়াল সেতু। ওয়ান সিটি টু টাউন হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে এ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করছে সরকার, যার ফলে বাড়বে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি।
চট্টগ্রাম বন্দরে কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ॥ চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দেশের প্রবৃদ্ধির স্বর্ণদ্বার। এটির সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নে ৮৫৯ দশমিক ৯৯ লাখ টাকা ব্যয়ে বন্দরের কৌশলগত উন্নয়নের জন্য ৩০ বছর মেয়াদি একটি কারিগরি সহায়তা প্রকল্প প্রণয়ন করা হয়েছে।
মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর ॥ বাংলাদেশের কার্গো হ্যান্ডলিং সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে জাইকার অর্থায়নে ১৬ কিলোমিটার গভীরতা এবং আট হাজার টিইইউএস ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন (২০ ফুট দৈর্ঘ্যরে কন্টেনার) জাহাজ প্রবেশ সুবিধা বৃদ্ধির জন্য কক্সবাজার জেলার মাতারবাড়ি ও ধলঘাট এলাকায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
বে-টার্মিনাল ॥ আট থেকে নয় মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়তে পারে বর্তমানে জোয়ারের সময় চট্টগ্রাম বন্দরে। কিন্তু বে-টার্মিনাল প্রকল্পের কাজ শেষ হলে ২৪ ঘণ্টায় ১৪ মিটার গভীরতার জাহাজও ভিড়তে পারবে এবং বছরে ৪৫ লাখ কন্টেনার হ্যান্ডলিং করা যাবে। এর মাধ্যমে বছরে ৪শ’ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হবে।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ॥ লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত ১৬ দশমিক পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ চলমান রয়েছে। ৫৪ কিলোমিটার দীর্ঘ তিনটি রুটে মেট্রোরেল নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া চার লেনের মেরিন ড্রাইভ সড়ক, আউটার রিং রোড, চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি রোড সম্প্রসারণ, জেলার বিভিন্ন উপজেলায় পিসি গার্ডার সেতু এবং বারৈয়ারহাট হোঁয়াকো রামগড় সড়ক প্রকল্পের কারণে জেলার গুরুত্ব বাড়ছে।
সরকার একই সঙ্গে উন্নয়ন প্রকল্প নিয়েছে রেলে। বর্তমান সরকারের আরেকটি অগ্রাধিকারভুক্ত প্রকল্প দোহাজারী কক্সবাজার রেললাইন, যা আওয়ামী লীগ সরকারের সবচেয়ে বড় প্রকল্প। এটি বাস্তবায়ন শেষ হলে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার যাওয়া যাবে দ্রুত।
বিদ্যুতে আলোকিত চট্টগ্রাম ॥ উত্তরের উপজেলা সন্দ্বীপে সাগরের তলদেশের মাধ্যমে সাবমেরিন ক্যাবেলের মাধ্যমে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয় আওয়ামী লীগ সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ সালে ৩শ’ মেগাওয়াট আনোয়ারা পাওয়ার প্লান্ট, ১০০ মেগাওয়াট শিকলবাহা ও ৫৪ মেগাওয়াট পটিয়ার পাওয়ার প্লান্ট উদ্বোধন করবেন।
ওয়াসার স্যুয়ারেজ প্রকল্প ॥ আধুনিক শহর গড়তে চট্টগ্রামের বাসিন্দাদের পয়োবর্জ্যরে সঠিক ব্যবস্থাপনার গড়ে তুলতে এবং কর্ণফুলী রক্ষায় স্যুয়ারেজ প্রকল্পের কাজ চলমান। অপরদিকে রাঙ্গুনিয়ার পোমরা থেকে ‘শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার-২’ এর মাধ্যমে পানি পরিশোধন করে দিনে ১৪ কোটি ৩০ লাখ লিটার সুপেয় পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।  
জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রকল্প ॥ পাঁচ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেয় সরকার। এই প্রকল্প শেষ হলে নগরী হবে জলাবদ্ধতামুক্ত হবে। এ ছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে আরও তিন হাজার ৫শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজ চলমান।
শিক্ষায় উন্নয়ন ॥ চট্টগ্রামে শিক্ষা বিস্তারে কাজ করছে আওয়ামী লীগ সরকার। এর মধ্যে ৫৭২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ, ২০টি শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন, এক হাজার ৬৩৪টি মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন, ৩৯৫ কোটি টাকার উপবৃত্তি প্রদান, বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঁচ হাজার ৯০৫ জন শিক্ষ নিয়োগ করা হয়েছে।

×