ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শিশু আয়াত হত্যা ॥ গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের খোঁজে পিবিআই

আবীরের মা-বাবা ও বোন গ্রেপ্তার, তিন দিনের রিমান্ড

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস

প্রকাশিত: ২৩:৪৭, ২৯ নভেম্বর ২০২২

আবীরের মা-বাবা ও বোন গ্রেপ্তার, তিন দিনের রিমান্ড

আলীনা ইসলাম আয়াত

মুক্তিপণের জন্য অপহরণ করা চট্টগ্রামের পাঁচ বছরের শিশু আলীনা ইসলাম আয়াত হত্যার ঘটনায় আবীর আলীর বাবা, মা এবং বোনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের খোঁজে সংস্থাটির কর্মকর্তারা এখনো মাঠে। যাচাই করছেন বিভিন্ন তথ্য ও ক্লু। এজন্য তাদের গ্রেপ্তারের পর আদালতে হাজির করে রিমান্ড চাওয়া হয়।

আদালতের আদেশে এই তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ডে পেয়েছে পিবিআই। তবে আবীরের বোনের বয়স বিবেচনায় সমাজসেবা অফিসারের উপস্থিতিতে জিজ্ঞাসাবাদ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম অলি উল্লাহ এ আদেশ দেন। এর আগে সকালে আবীরের বাবা আজাহারুল ইসলাম, মা মোছাম্মৎ আলো বেগম এবং ১৫ বছর বয়সী বোনকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই, চট্টমেট্রো।  
এ বিষয়ে আয়াত হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর পরিদর্শক মনোজ দে জনকণ্ঠকে বলেন, তাদের তিনজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে আদালত তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তবে আবীরের ছোট বোনের বয়স বিবেচনায় তাকে পুলিশের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখা হয়েছে। সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রবেশন অফিসারের উপস্থিতিতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দিয়েছেন আদালত। অনেক তথ্য পাওয়া গেছে, এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। আবীরের পরিবারের তিন সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আরও নতুন তথ্য পাওয়া যেতে পারে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, ছয় টুকরা করে লাশ ভাসিয়ে দেয়ার ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে কন্যা সন্তানটিকে এমন নৃশংসভাবে হত্যার বিষয়টি কোনোভাবেই মানতে পারছে না কেউ। স্বভাবতই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছেও বিষয়টি চাঞ্চল্যকর মামলা হিসেবে গণ্য হয়েছে। তদন্ত সংস্থা এবং পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকেও এ বিষয়ে জোর তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনার জন্য স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন।

আদৌ কী কারণে নৃশংসভাবে পাঁচ বছরের শিশুটিকে কেটে টুকরা করা হয়েছে এ বিষয়টি যাতে নিখুঁত তদন্তের মাধ্যমে উঠে আসে। এজন্য তৎপর আইনশৃঙ্খলাবাহিনী।
পিবিআই সূত্রে জানা গেছে, আবীর আলী এমন কিছু তথ্য দিয়েছে যা যাচাই বাছাইয়ে তার পরিবারের সদস্যদের প্রয়োজন। আর এই হত্যাকাণ্ডে তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয় ভবিষ্যতে জানানো হবে। তদন্তের স্বার্থে স্পষ্ট করে এখন কিছু বলা সম্ভব নয়। তাই কর্মকর্তারা কিছু বিষয় ডিসক্লোজ রেখেছে। আবীরের মা বাবা এবং বোনের কাছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য রয়েছে। এসব বিষয় জানতেই তাদের গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। এটি গুরুত্বপূর্ণ এজন্য পিবিআই মঙ্গলবার সকালে তাদের গ্রেপ্তার করে।
প্রসঙ্গত, চলতি মাসের ১৫ নভেম্বর বিকেলে নগরীর ইপিজেড থানার দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডের নয়ারহাট এলাকার বাসিন্দা সোহেল রানার মেয়ে আলীনা ইসলাম আয়াত নিখোঁজ হন। তার ১০ দিন পর ২৪ নভেম্বর পিবিআই আবীর আলীকে গ্রেপ্তার করে। পরবর্তীতে তারা জানায় শ্বাসরোধে হত্যা করে লাশ টুকরা করে ছয় টুকরা করে ভাসিয়ে দেয়া হয়। এরপর আবীরকে নিয়ে দুই দফায় ঘটনাস্থলে যায় পিবিআই। মুক্তিপণ আদায়ের জন্য আয়াতকে অপহরণ করে আবীর এমন ভাষ্য পিবিআইয়ের।

উল্লেখ্য, আবীরকে আয়াত চাচ্চু বলেও ডাকত। কেননা দুই পরিবারের সঙ্গেই পারিবারিক সম্পর্ক ছিল ঘনিষ্ঠ। পিবিআই দাবি করে ১৫ নভেম্বর বিকেলে বাসার সামনে থেকে আয়াতকে কোলে তুলে নিয়ে আদর করতে করতে আবীর তার বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে লাশ ব্যাগে ভরে নিয়ে যায় আকমল আলী রোডে। মায়ের সঙ্গেই থাকত আবীর আলী। আবীরের মায়ের বাসায় নিয়েই মূলত আয়াতের লাশ কেটে ছয় টুকরা করা হয় পরে ভাসিয়ে দেয়া হয় সাগরে।

পিবিআইয়ের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য জানিয়েছে আবীর। আয়াত ইপিজেড থানার নয়ারহাট ওয়াছমুন্সী বাড়ি এলাকার সোহেল রানার মেয়ে। গত সোমবার আসামি আবীরকে ফের ৭ দিনের রিমান্ড পায় পিবিআই। এর আগে দুদিনের রিমান্ডে ছিল আবীর। জিজ্ঞাসাবাদে সে বেশ কিছু তথ্য দিয়েছে। সেসব তথ্য যাচাই-বাছাই করছে বলে জানিয়েছে তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই।

তবে সোমবার আবীরকে আদালতে নেয়া হলে উপস্থিত জনতা তাকে গণপিটুনি দিতে উদ্যত হয়। অতিরিক্ত পুলিশ ফোর্সের উপস্থিতির কারণে সেই যাত্রায় বেঁচে যায় আবীর। আবীর পিবিআইয়ের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে আয়াতকে ছয় টুকরা করে সাগরে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে। মূলত তাকে মুক্তিপণের জন্য অপহরণ করা হয়েছিল।

×