ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

চারদিনের কন্যা শিশু নিয়ে পরীক্ষা দিচ্ছেন তৃষা

নিজস্ব সংবাদদাতা, শেরপুর

প্রকাশিত: ২০:৩০, ৮ নভেম্বর ২০২২

চারদিনের কন্যা শিশু নিয়ে পরীক্ষা দিচ্ছেন তৃষা

পরীক্ষা দেন চার দিনের কন্যা শিশুর মা তৃষা। ছবি: জনকণ্ঠ

পরীক্ষার্থী নারজিনা আফরিন তৃষা। তিনি মাত্র ৪ দিন বয়সী কন্যা শিশুকে নিয়ে ২০২২ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় বসেছেন। শেরপুর সরকারি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী। সরকারি মহিলা কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি।  

জানা যায়, কলেজে পড়াবস্থায় ২০২১ সালের শেষের দিকে শ্রীবরদী উপজেলার গড়জরিপা এলাকার মৃত শিক্ষক রফিকুল ইসলাম আকন্দের মেয়ে নারজিনা আফরিন তৃষার বিয়ে হয় শেরপুর শহরের সজবরখিলা এলাকার মো. আনোয়ার হোসেনের ছেলে মেহরাব হাসান মুনের সঙ্গে। 

চলতি বছরের ২ নভেম্বর শেরপুর শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাদের একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। ৬ নভেম্বর রবিবার থেকে তৃষার এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হয়। তৃষা সিদ্ধান্ত নেন নবজাতক শিশুকে নিয়েই পরীক্ষায় অংশ নেবেন। গেল রবিবার বাংলা প্রথম পত্র পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি।

মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে শেরপুর সরকারি মহিলা কলেজ পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, তিনি বাংলা দ্বিতীয় পত্র লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। শিশু কন্যাকে নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্র চত্বরে অপেক্ষা করছেন তার শাশুড়ি মোছা. সুলতানা মোহসিনা। 

পরীক্ষা শেষে কথা হয় পরীক্ষার্থী তৃষার সঙ্গে। তিনি জানান, আমি পরীক্ষা ভালোই দিচ্ছি। এখানে স্যারদের সহযোগিতা পাচ্ছি। কিন্তু অনেকক্ষণ বসে থেকে পরীক্ষা দিতে হয় বলে শারীরিক কিছু সমস্যা হয়। 

আমার শাশুড়ি মা পরীক্ষার সময় আমার মেয়ের দেখ ভাল করছেন। আমার স্বামী ও পরিবার আমাকে বেশ উৎসাহ দেন। একই সঙ্গে আমার নিজেরও আগ্রহ ছিলো পড়াশোনা শেষ করার। এজন্যই পরীক্ষাটা দিতে পারছি। তা না হলে চারদিনের বাচ্চা নিয়ে পরীক্ষা দিতে আসতে পারতাম না।

তৃষার শাশুড়ি মোছা. সুলতানা মোহসিনা বলেন, আমার বউমা খুবই মেধাবী একজন শিক্ষার্থী। তার ইচ্ছে শক্তিও প্রচুর। এজন্য আমরা তাকে সাহস ও উৎসাহ দিচ্ছি সব সময়। শেষ পর্যন্ত পড়াশোনা করতে চায়। আমরা তার পাশে থাকবো। সে যখন পরীক্ষা দেয় তখন আমি পরীক্ষা কেন্দ্রের পাশেই নাতনিকে নিয়ে বসে থাকি। আমাকেও কেন্দ্রে আগত অন্যান্য অভিভাবক ও শিক্ষকরা সহযোগিতা করছেন।

এ বিষয়ে শেরপুর সরকারি মহিলা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও কেন্দ্র সচিব মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ওই পরীক্ষার্থী তার শ্বাশুড়ি মার কাছে বাচ্চা রেখে এই কেন্দ্রে পরীক্ষা দিচ্ছে। আমরা তাকে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা দিচ্ছি- যাতে সে নির্বিঘ্নে ও শান্তিপূর্ণভাবে পরীক্ষা দিতে পারে। 

তিনি আরও বলেন, এত ছোট বাচ্চা রেখে পরীক্ষার হলে বসা বিশাল ব্যাপার। তার মনের ইচ্ছা ছিল- বলেই এটি সম্ভব হয়েছে।

এসআর

সম্পর্কিত বিষয়:

×