ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

বাগেরহাটে জীবিত মায়ের পূজা

স্টাফ রিপোর্টার, বাগেরহাট

প্রকাশিত: ২১:৩৭, ৪ অক্টোবর ২০২২

বাগেরহাটে জীবিত মায়ের পূজা

বাগেরহাটে মহানবমীতে জীবিত মায়ের পূজা করছেন সন্তানরা

জন্মদাত্রী মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা, মমতা ও ভালবাসা প্রদর্শনের মাধ্যমেই বিশ্বজননী মা দুর্গাকে আরাধনা করার প্রত্যয় নিয়ে বাগেরহাটের চিতলমারীতে শারদীয় দুর্গোৎসবের মহা নবমীতে জন্মদাত্রী জীবন্ত মায়ের পূজা করেছে সন্তানেরা। মঙ্গলবার সকাল ১০টায় উপজেলার পরানপুর গ্রামের সমাজসেবক মন্মথ নাথ ম-লের পরিচালনায় ও পরানপুর সার্বজনীন দুর্গা মন্দির কমিটি এবং স্থানীয় একতা ছাত্র সংঘের সহযোগিতায় মন্দির চত্বরে এ জীবন্ত মাতৃপূজা অনুষ্ঠিত হয়।
ব্যতিক্রমী এ পূজায় বিভিন্ন বয়সের ৪০ সন্তান পরম শ্রদ্ধায় তাদের নিজ হাতে জন্মদাত্রী নিজ নিজ মায়ের পা ধুয়ে মুছে দেয়। এরপর ধুপ-দীপ জ্বালিয়ে ফুল ও প্রসাদ সাজিয়ে মন্ত্র পাঠের মাধ্যমে মায়ের পূজা করেন। পূজা শেষে নিজের হাতে মায়েদের মুখে প্রসাদ তুলে দেন সন্তানেরা। মায়েরা তাদের সন্তানদের মাথায় হাত দিয়ে পরান ভরে আশীর্বাদ করে সন্তানের মুখে প্রসাদ তুলে দেন। এ সময় মা-সন্তানদের কান্নায় এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। ব্যতিক্রমী এ আয়োজনে এলাকার বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
স্থানীয় কলেজ শিক্ষক সুব্রত ম-ল বলেন, ব্যতিক্রমী এ ধরনের আয়োজনের মাধ্যমে মায়ের প্রতি সন্তানদের শ্রদ্ধা-ভক্তি ও ভালবাসা বৃদ্ধির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন হবে। জগত জননী মা দুর্গার পূজার পাশাপাশি এ ধরনের উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়।
জীবন্ত মাতৃপূজার অন্যতম উদ্যোক্তা ও পৃষ্ঠপোষক মন্মথ নাথ ম-ল জানান, বর্তমানের তথা-কথিত আধুনিকতার ছোয়ায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মা-বাবার প্রতি সন্তানের শ্রদ্ধা-ভক্তি ও ভালবাসার ঘাটতি দেখা দিয়েছে। শৈশব থেকেই যদি সন্তানদের নীতি শিক্ষার মাধ্যমে মা-বাবার প্রতি শ্রদ্ধা-ভক্তির শিক্ষা দেয়া যায় তবে ভবিষ্যতে আর কোন পিতা-মাতাকে বৃদ্ধ বয়সে অবহেলার পাত্র হবে না। এই চিন্তাবোধ থেকে তিনি পাঁচ বছর পূর্ব থেকে এই জীবন্ত মাতৃ পূজার আয়োজন করে আসছেন।  

মুন্সীগঞ্জে লক্ষাধিক মাটির পাত্রে মণ্ডপ
মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মুন্সীগঞ্জ থেকে জানান, মুন্সীগঞ্জ শহরের নয়াপাড়া ম-পের দুর্গোৎসব ঘিরে চারদিকে এখন সাজসাজ রব। শোনা যায় ঢাক ও কাশির আওয়াজ। পূজার প্যান্ডেল থেকে বাড়ির মন্দির পর্যন্ত নান্দনিকভাবে সাজানো হয়েছে মাটির ছোট এই পাত্র দিয়ে। প্রাচীন জনপদ মুন্সীগঞ্জ তথা বিক্রমপুরের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় উৎসবে তাই এই ম-প যুক্ত করেছে ভিন্ন মাত্রা। ১ লাখ ২ হাজার মাটির ছোট পাত্র মাসব্যাপী সাজসজ্জায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এই ম-প।
নয়াপাড়া পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি রনি গুপ্ত জানান, মুন্সীগঞ্জ তরুণ নবীন সংঘের সদস্যরা নিপুণ হাতে ম-পের পুরো সাজসজ্জা করেছেন। বিশেষ অর্ডার করে কুমার পল্লীতে তৈরি করা হয়েছে এই পাত্র। এমন সৃজনশীলতা দেখতে পূজারীদের পাশাপাশি ভিড় করছেন নানা অঞ্চলের মানুষ। জেলায় এবার ৩৩৬টি ম-পে জাঁকজমকভাবে দুর্গাপূজা হচ্ছে। সবখানেই সাজসজ্জা থাকলেও পরিবেশবান্ধব শিল্পকর্মের কারণে এই ম-প দৃষ্টি কেড়েছে সকলের।
জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসুল এবং পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমান আল মামুন একই সঙ্গে এই ম-প পরিদর্শনে এসে বিস্মিত হন। নিপুণভাবে তৈরি করার অভিজ্ঞতা শুনেন কর্মকর্তারা। জেলা প্রশাসক বলেন, এই ম-পে দেশজ পণ্যের ব্যবহার ছাড়াও নানা রকম মেসেজ রয়েছে। যা আমাদের নিজস্ব কৃষ্টিকে নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে সহায়ক হবে।

×