ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাসচালক বাচ্চু মিয়ার জীবনের গল্প

-

প্রকাশিত: ০১:১৮, ১ অক্টোবর ২০২২

বাসচালক বাচ্চু মিয়ার জীবনের গল্প

বাসচালক বাচ্চু মিয়া

বাসচালক বাচ্চু মিয়া। যশোর-চুয়াডাঙ্গা সড়কে স্বপ্না পরিবহনের বাস চালান ১৪ বছর ধরে। এক ছেলে এক মেয়ের জনক বাচ্চু মিয়ার বাড়ি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের মুন্দিয়া গ্রামে। সুখী সংসার। বাস চালাতে গিয়ে তার অভিজ্ঞতার ঝুলি অনেক বড় হয়েছে। তিনি বলেন, হাজারো মানুষের সঙ্গে প্রতিদিন কথা বলতে হয়। কেউ বাসে উঠে ভাড়া কম দিতে চায়। কেউ বলে ভাই টাকা নেই। কি করব? বাস থেকে তো আর নামিয়ে দেয়া যায় না।

আবার অনেক ভাল মানুষও বাসে ওঠেন। তারা আমাদের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করেন। কিন্তু বাস চালিয়ে সংসার আর আগের মতো চলতে চায় না। জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে। টিপ শেষে জ্বালানি তেল কিনে, পথ খরচ বাদ দিয়ে মালিকের হাতে এক দুই হাজার টাকা দিই। এবার বলুন, মালিক আমাদের স্টাফদের কত দেবে? বাচ্চু মিয়া বলেন, যাত্রীদের কথা বলি এবার শুনুন। একদিন যশোর থেকে সকালে যাত্রী নিয়ে রওনা হয়েছি চুয়াডাঙ্গার উদ্দেশ্যে। সকাল সাতটা তাই যাত্রী কম। বারোবাজার বাসস্ট্যান্ডে বাস দাঁড় করিয়ে পাশের দোকানে গেছি। ২ মিনিট পর বাসে এসে দেখি এক যাত্রী তার সিটে বসেই সামনের সিট পোড়াচ্ছে।

তার পাশের লোকটা চুপচাপ এই দৃশ্য দেখছে। আমি ভাবলাম, লোকটা এখনই প্রতিবাদ করবে। কিন্তু তিনি তা না করে জানালা দিয়ে উদাস হয়ে বাইরে তাকিয়ে রইল। আর একবার কালীগঞ্জ থেকে এক মধ্য বয়সী লোক বাসে উঠল, যাবেন যশোর। তো বাস ছাড়ার কিছুক্ষণ পর লোকটি বিড়ির আগুন দিয়ে আমার সিট পুড়িয়ে দিল। তার ভাবসাব দেখে মনে হলো, সিট বানানোই হয়েছে বিড়ির আগুন দিয়ে পোড়ানোর জন্য! 

বাসচালক বাচ্চু মিয়া বেশ রসিক লোক মনে হচ্ছে। সব যাত্রীকে তিনি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেন। বললেন, ভাই কিছু যাত্রী আছেন বিশ^প্রেমিক।  সিটের মধ্যে নিজেদের মোবাইল নম্বর লিখে যায়। তা দেখে মনে মনে বলি, ‘আরে বেটা তোর চেহারা আয়নায় একবার দেখছস? গরু-ছাগলেও তোরে ফোন দেবে না কোনদিন!’ তারপরও কিছু বলতে পারি না। একবার রাগ সহ্য করতে না পেরে ওই যাত্রীকে জিজ্ঞাসা করলাম-‘ভাই এটা কি করছেন? বাসের সিট তো নষ্ট হয়ে যাবে। ওই যাত্রী মুচকি হাসি দিয়ে পরবর্তী স্টপেজ-এ নেমে গেলেন।

‘আমি বাস চালানোর সময় লাইনে চলা অন্য বাসের সঙ্গে পাল্লা-পাল্লি দিই না। পথে চলতে যদি একটি ব্যাঙ, পাখি, কিংবা কুকুরও পড়ে, আমি তাদের বাঁচানোর চেষ্টা করি। কারণ তাদের প্রাণ আছে। বাঁচার অধিকার আছে। একটি প্রাণকে হত্যা করা মানে একটি স্বপ্নের মৃত্যু। স্টিয়ারিং হাতে নিয়ে বাস স্টার্ট দেয়ার পর কলেমা পড়ে যাত্রা শুরু করি। আর গন্তব্যে পৌঁছে স্টার্ট বন্ধ করে কলেমা পড়ি। এভাবেই চলছে আমার জীবন। ‘কানা, খোঁড়া, ভিক্ষুক’দের কাছে আমরা কখনও ভাড়া নিই না-’ বলছিলেন বাচ্চু মিয়া। জানিয়ে দিলেন এটা বাস মালিকের নিষেধ রয়েছে। বললেন, আমার মালিক অনেক ভাল।’
সাজেদ রহমান, যশোর

×