ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দক্ষিণে পদ্মা সেতুয় আমূল পরিবর্তন

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল

প্রকাশিত: ০০:৫৬, ১ অক্টোবর ২০২২; আপডেট: ১৩:১৪, ১ অক্টোবর ২০২২

দক্ষিণে পদ্মা সেতুয় আমূল পরিবর্তন

বরিশালের বিসিক শিল্পনগরী

দক্ষিণাঞ্চলবাসীর স্বপ্ন ও গৌরবের পদ্মা সেতু চালুর মাত্র তিন মাসের মধ্যেই বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলে আমূল পরিবর্তন এসেছে। দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে পদ্মা সেতুর সুফল।
যোগাযোগের মাইলফলক হিসেবে বরিশাল নগরীর বিসিকে গড়ে উঠেছে প্রথম পোশাক তৈরির কারখানা, বোতলজাত পানি পরিশোধনাগার ও কমফোর্টারের কারখানা। মাছের রাজা ইলিশ শুধু সারাদেশেই নয়, একদিনের মধ্যে চলে যাচ্ছে কলকাতাতেও।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সব ক্ষেত্রে ইতিবাচক ব্যাপক পরিবর্তন আসতে শুরু করায় এক সময়ের অবহেলিত দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতি চাঙ্গা হতে শুরু করেছে। অতীতের ফেরিঘাটে ভোগান্তিবিহীন সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হওয়ায় প্রথম পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে যাতায়াত ব্যবস্থায়। বিলাসবহুল বাসগুলো দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক। পদ্মা সেতু চালুর পর দেশের নামী-দামী প্রায় ২৫টি কোম্পানির তিন শতাধিক বিলাসবহুল পরিবহন সরাসরি যাত্রী পরিবহন করছে। বরিশাল থেকে ঢাকায় পৌঁছতে এখন সময় লাগছে মাত্র আড়াই ঘণ্টা। তবে ভাঙ্গা থেকে বরিশাল হয়ে পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটা পর্যন্ত মহাসড়ক ফোরলেনে উন্নীত করার কাজ দ্রুত সম্পন্ন হলে পদ্মা সেতুর শতভাগ সুফল পাবেন দক্ষিণাঞ্চলবাসী।
বরিশাল বাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কিশোর কুমার দে বলেন, পদ্মা সেতুর কারণে সড়কপথে যাত্রী বেড়েছে। গ্রীন লাইন, শ্যামলী পরিবহনসহ বিভিন্ন বিলাসবহুল বাস কোম্পানি এখন বরিশালে তাদের শাখা খুলেছে। আরামদায়ক ভ্রমণ ও যাতায়াত দ্রুত হওয়ায় আগের চেয়ে কয়েকগুণ যাত্রী বেড়েছে, যে কারণে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে বেকার যুবকদের। শিল্প উদ্যোক্তা এসএম জাকির হোসেন বলেন, পদ্মা সেতু আমাদের জন্য আশীর্বাদ।

বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলে মাত্র তিন মাসের মধ্যে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো ইতোমধ্যে বরিশালে তাদের ব্যবসা স্থাপন করতে শুরু করেছে। আমাদের মতো ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বরিশালমুখী হবে।
বরিশাল চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, বরিশালে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নতুন করে গড়ে উঠতে শুরু করেছে। অনেকেই জমি কিনছেন। ইতোমধ্যে বিসিকে গার্মেন্টসসহ তিনটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়েছে।
বরিশাল চেম্বার অব কমার্স সবসময় ব্যবসায়ীদের পাশে আছে। যে কোন প্রয়োজনে ব্যবসায়ীদের সহায়তা করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে দেশের জিডিপিতে দক্ষিণাঞ্চল অবদান রাখবে জানিয়ে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট তালুকদার মোঃ ইউনুস বলেন, পদ্মা সেতুর কারণে দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতি নতুন করে চাঙ্গা হচ্ছে। দেশের জিডিপিতে পর্যায়ক্রমে বড় আকারে ভূমিকা রাখবেন এ অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া এখানকার বেকারত্বও দূর হবে। বরিশালে পড়াশোনা করে বরিশালেই চাকরি বা ব্যবসা করতে পারবে এ অঞ্চলের যুবসমাজ।
বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মোঃ আমিন উল আহসান বলেন, গত ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর মাত্র তিন মাসের মধ্যে বিদ্যুতগতিতে দক্ষিণাঞ্চলে আমূল পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে। তিনি আরও বলেন, ব্যবসায়িক খাতকে বেগবান করতে বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসন থেকে ব্যবসায়ীদের সব ধরনের সহায়তা করা হবে।
প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন পূরণে কাজ করছে বিসিক ॥ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সুখী, সমৃদ্ধ ও উন্নত সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল উদ্দেশ্য। আর এ উদ্দেশ্য পূরণে নিরলসভাবে কাজ করছেন প্রধানমন্ত্রী। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত, শিল্প-সমৃদ্ধ দেশ গড়ার লক্ষ্যে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নতুন নতুন শিল্পোদ্যোক্তা সৃষ্টির ওপর তিনি (প্রধানমন্ত্রী) জোর দিয়েছেন।
তারই ধারাবাহিকতায় সরকারের বিভিন্ন দফতরের পাশাপাশি বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) বরিশালে কাজ করে যাচ্ছে। শহর ও গ্রামাঞ্চলের বিনিয়োগে আগ্রহী বেকার এবং শিক্ষিত যুবক ও নারীদের সম্ভাবনাময় বিনিয়োগ-সংক্রান্ত ধারণা প্রদান এবং প্রচলিত আইন, পদ্ধতি, বিধিনিষেধ, নিয়ম-কানুন ও মূলধনের সংস্থান ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে।

যার মাধ্যমে দক্ষ উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে বছরব্যাপী প্রশিক্ষণ ও ঋণ বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে বরিশাল বিসিক ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ অর্থবছরে ৮৬৫ জন উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। পাশাপাশি তাদেরকে স্বাবলম্বী করে তুলতে ৩৬ জন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাকে ৯০ লাখ টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে।
এ ছাড়া বিসিকের নিজস্ব তহবিল থেকে ২০২০-২১ অর্থবছরে ২৬ জন শিল্পোদ্যোক্তাকে ৫৩ লাখ টাকা এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে ২৪ জন শিল্পোদ্যোক্তাকে ৫২ লাখ টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়। অপরদিকে, সরকারের প্রণোদনা ঋণের আওতায় ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩৮ জন শিল্পোদ্যোক্তাকে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে ৪৮ জন শিল্প উদ্যোক্তাকে ১ কোটি ৪০ লাখ টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়েছে।
বিসিকের বরিশাল অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণের মধ্যে রয়েছে-কম্পিউটার অফিস প্যাকেজ ও ইন্টারনেট ব্রাউজিং প্রশিক্ষণ, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ফুড প্রসেসিং, কার্টিং ও সেলাই প্রশিক্ষণ এবং মৌমাছি পালন প্রশিক্ষণ।
সূত্রে আরও জানা গেছে, বরিশাল বিসিকের উদ্যোগে ‘উদ্যোক্তা পরিবার’ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে বিসিক থেকে বিভিন্ন ট্রেড এবং শিল্পোদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ নিয়ে অনেক নারী উদ্যোক্তা বিভিন্ন ক্ষুদ্র ব্যবসা চালু করেছেন। এ ছাড়া বর্তমান ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে বিসিকের উদ্যোগে অনলাইন শপিং মেলার আয়োজন করায় অনেক উদ্যোক্তাই তাদের পণ্য প্রদর্শনীর সুযোগ পাচ্ছেন।
বরিশাল ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের উপ-মহাব্যবস্থাপক জালিস মাহমুদ বলেন, তথ্য প্রযুক্তিভিত্তিক আধুনিক ব্যবসা উন্নয়ন সেবাসমূহ প্রবর্তনের মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের আর উন্নত সেবা প্রদান, নতুন শিল্পোদ্যোগকে সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন করা এবং প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা প্রদান করছে বরিশাল বিসিক।

যার ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি তাদেরকে স্বাবলম্বী করে তুলতে উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের তরুণ প্রজন্মের উদ্যোক্তা হওয়ার মতো মেধা, উৎকর্ষতা, প্রশিক্ষণ এবং ঝুঁকি নেয়ার মতো অদম্য সাহস রয়েছে। যে কারণে স্বল্প সময়ে বরিশালের অসংখ্য বেকার যুবক-যুবতী ও শিল্পোদ্যোগতারা আজ স্বাবলম্বী হয়েছেন।

×