কালোবাজারে টিকেট
ঈদ সামনে রেখে অগ্রিম টিকেট পেতে প্রচুর ভিড় হয়েছে চট্টগ্রাম রেল স্টেশনে। সোজাপথে টিকেট পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। বাড়িমুখী মানুষ পড়েছে চরম ভোগান্তিতে। রেলে অনিয়ম ও দুর্নীতি কোনভাবেই থামানো যাচ্ছে না। কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মীরা একের পর এক কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়ে দুর্নামের তকমা বাড়িয়ে চলেছেন। ঈদ-উল-আজহা উপলক্ষে ছুটি কাটাতে চাওয়া মানুষ অগ্রিম টিকেটের লাইনে দাঁড়িয়েও যে টিকেট পাচ্ছেন না, তা গত তিনদিন ধরেই দেখা যাচ্ছে।
এরমধ্যে কালোবাজারিতে টিকেট বিক্রির সময় চট্টগ্রাম রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর দুই সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৭। অথচ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক রেলওয়ে স্টেশন পরিদর্শনে এসে একদিন আগে বলেছিলেন, টিকেট কালোবাজারির কোন অভিযোগ নেই। কিন্তু অনলাইনে টিকেট না পাওয়ার ঘটনা তো আছেই। রবিবার রাতে চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালি থানার রেলওয়ে স্টেশনের জিআরপি থানার পাশে রেলওয়ে শ্রমিক লীগ অফিসের সামনে থেকে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) হাবিলদার রবিউল হোসেন ও সিপাহী ইমরান হোসেনকে সোনার বাংলার ৯টি টিকেটসহ গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে কালোবাজারিতে টিকেট বিক্রির ১০ হাজার ৩২০ টাকাও উদ্ধার করা হয়।
এ বিষয়ে র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম এ ইউসুফ জানান, ঈদের সময় রেলের টিকেটের অতিরিক্ত চাপ থাকে। এ কারণে এবার টিকেট বিক্রির পর থেকে র্যাব গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করে, যাতে কোন অবস্থাতেই টিকেট কালোবাজারে না যায়। এ প্রেক্ষিতে রবিবার রাতে সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে স্টেশন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে রেলওয়ের দুই নিরাপত্তাকর্মীকে কালোবাজারির টিকেট বিক্রির সময় হাতেনাতে গ্রেফতার করি। ৯টি টিকেট জব্দ করা হয়েছে। পরবর্তীতে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, তারা বিভিন্নভাবে এসব টিকেট সংগ্রহ করে সাধারণ যাত্রীর কাছে দ্বিগুণ দামে বিক্রি করে। আমরা চেষ্টা করছি এই চক্রের বাকিদের গ্রেফতার করার জন্য। অভিযান অব্যাহত থাকবে, যাতে করে ট্রেনের টিকেট কালোবাজারিতে বিক্রি না হয়।
রবিবার রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেন স্টেশনে অগ্রিম টিকেট দেয়ার কার্যক্রম পরিদর্শনে এলে গণমাধ্যমের কর্মীরা টিকেট কালোবাজারি হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি দাবি করেন, অগ্রিম টিকেট বিক্রি কার্যক্রম চলছে। কালোবাজারির কোন ঘটনা নেই। সোমবার এই কর্মকর্তাকে অসংখ্যবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। জানা গেছে, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে টিকেট কালোবাজারির বিষয়টি ওপেন। ভোরে এসে লাইনে দাঁড়িয়েও টিকেট পায় না বেশিরভাগ যাত্রী। শনিবার ও রবিবার দুদিন ভোরে এসে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকেট না পাওয়া মাদারবাড়ির সুমাইয়া সোমবারও এসেছিলেন স্টেশনে। তিনি ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, কাউন্টারে গেলেই জানানো হয় টিকেট নেই। অনলাইনেও তিনি চেষ্টা করে মহানগর গোধূলির টিকেট পাননি।
প্রতিদিন আয় ৩ থেকে ৪ লাখ ॥ জানা গেছে, প্রতিদিনই রেলওয়ে স্টেশনের অর্ধেক টিকেট কালোবাজারিতে চলে যায়। প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকার অবৈধ আয় হয় টিকেট কালোবাজারিতে। এদের আশ্রয়প্রশ্রয়ে রয়েছে আবার আলাদা সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটে জড়িত বাইরের কিছু লোক। যাদের ব্ল্যাকার বলা হয়। এই ব্ল্যাকাররা নির্দিষ্ট ফোন নম্বর ছাড়া কালোবাজারে টিকেট বিক্রি করে না। যার ফলে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ইশারা ও আশ্রয়ে এসব দুর্নীতি স্থায়ীভাবেই রয়ে গেছে রেলে।
কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যোগসাজশ ॥ চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন ও পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের সদর দফতরে কর্মরত একটি সিন্ডিকেট জড়িত কালোবাজারিতে। যা নিয়ে মাথাব্যথা নেই রেলওয়ের। টিকেট সংক্রান্ত সকল দুর্নীতি ও অনিয়মে যুক্ত এসব কর্মকর্তা বছরের পর বছর চাকরি করছেন অদৃশ্য ক্ষমতার জোরে। তারাই এসব টিকেট কালোবাজারে বিক্রিতে আশ্রয়প্রশ্রয় দিয়ে সাধারণ মানুষ থেকে অধিক টাকা হাতিয়ে নেয়।
হোটেল, বিদ্যুত অফিস ও রিয়াজউদ্দিন বাজারে ব্ল্যাকার ॥ রিয়াজউদ্দিন বাজারের বিদ্যুত বিতরণ অফিসে একাধিক লাইনম্যান, রিয়াজউদ্দিন বাজারের বিভিন্ন দোকান কর্মচারী ও খাবার হোটেলে পাওয়া যায় রেলের টিকেট। এমনটি তথ্য রয়েছে বিভিন্ন সংস্থার কাছে। টিকেট নেই বলতে কোন শব্দ নেই তাদের কাছে। সম্প্রতি সিলেটে ত্রাণ কার্যক্রমে যাওয়া এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মী জানান, তিনগুণ দামে টিকেট পাওয়া যায় রিয়াজউদ্দিন বাজারে। এছাড়া বিদ্যুত অফিসের অনেক লাইনম্যানের যোগসূত্র রয়েছে টিকেট কালোবাজারিতে। তারা বুকিং কাউন্টার ও টিকেট অপারেটরদের কাছ থেকে টিকেট নিয়ে বাড়তি দামে বিক্রি করে। তবে এসব বিষয়ে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।