কোরবানি পশু
চট্টগ্রামে কোরবানির পশুর হাটগুলো জমে উঠছে, ধীরে ধীরে বাড়ছে বিকিকিনিও। তবে হাতে ক’দিন সময় থাকায় ক্রেতারা দর কষাকষি আর বিভিন্ন বাজার যাচাইয়েও ব্যস্ত। এবার ছোট ও মাঝারি গরুর চাহিদা বেশি। দাম নিয়ে রয়েছে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য। ক্রেতারা বলছেন দাম বেশি। অপরদিকে বেপারিরা পশু খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধি এবং গত বছরের লোকসানের কথা তুলে ধরছেন। ঈদ-উল-আজহার বাকি মাত্র ৫ দিন। শেষদিকে জমে উঠছে পশুর হাট। বেপারিদের হাঁকডাক ও ক্রেতাদের আনাগোনাও বেড়েছে। পশু বিক্রি একটু একটু করে বাড়ছে। তবে নগরীর বাসিন্দাদের কোরবানি পশু রাখার জায়গার সঙ্কটের কারণে শেষদিকে বিক্রি বাড়বে আশা করছেন ইজারদার ও বেপারিরা।
নগরীর ছয়টি হাট ছাড়াও এলাকা এবং বিভিন্ন খামারে কোরবানি পশু বিক্রি চলছে। এর বাইরে অনলাইনেও বিভিন্ন খামারিও কোরবানির পশু বিক্রি করছেন। মহানগরীর সকল হাটেই সমাগম গত দু’য়েকদিনের চাইতে বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। ক্রেতারা বাজার ও দর যাচাই এবং পশু কেনার প্রস্তুতিও নিচ্ছেন।
ছোট গরুর দাম বেশি ॥ নগরীর কোরবানি পশুর হাটগুলোতে পর্যাপ্ত গরু রয়েছে। তবে ছোট গরুর সংখ্যা কম। তাই বেশিরভাগ হাটেই ৫০ হাজার টাকার নিচে কোরবানির পশুর সংখ্যা অপ্রতুল। কুষ্টিয়া, নাটোর, রাজশাহী ও ফরিদপুর থেকে আনা বেশিরভাগ পশুই মাঝারি ও বড়। তবে চট্টগ্রামের স্থানীয় বেপারিরা যেসব ছোট গরু বাজারে এনেছেন তার দাম বাড়তি। চট্টগ্রাম মহানগরীর হাটগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গরু বিক্রি হয় সাগরিকা বাজারে। এই পশুর হাটটি আয়তনে বড় এবং যোগাযোগ সুবিধার কারণে সেখানে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বেপারিরা তাদের খামারের গরু নিয়ে আসে। জানা গেছে, এবারও অন্যান্যহাটের চেয়ে বড় এবং মাঝারি গরু বেশি ওই বাজারে। বিক্রিও ভাল। অপরদিকে মইজ্জ্যারটেক বাজার বাঁশখালী, আনোয়ারা, সাতকানিয়া গরুতে ঠাসা। রয়েছে বিভিন্ন আকারের মহিষও। তবে দাম ছাড়তে রাজি নয় স্থানীয় বেপারিরা।
নীলফামারীতে মাঝারি
গরুর চাহিদা বেশি
স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী থেকে জানান, কোরবানির ঈদ সামনে রেখে নীলফামারীর বিভিন্ন এলাকায় জমে উঠেছে পশুর হাট। বড় সাইজের গরুর দিকে ক্রেতাদের দৃষ্টি নেই। সকলে ছুটছে মাঝারি সাইজের গরুর দিকে।
রবিবার জেলা সদরের পশুর হাট কালিতলায় গিয়ে দেখা যায় প্রচুর গরু ছাগলের আমদানি হলেও বিক্রি হচ্ছে কম। সামনের বুধবার আরেকটি হাট পাবে ক্রেতারা।
বিক্রেতারা জানান, ভিড় বাড়লেও খুব একটা ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। অল্প সংখ্যক বিক্রি হলেও মাঝারি সাইজের গরু নিচ্ছেন ক্রেতারা। বড় গরুর কেউ কিনতে চাইছেন না। তাই বিক্রিও হচ্ছে না। ক্রেতারা জানান, ঈদের এখনও ৬ দিন বাকি। এখন গরু কিনলে বাড়িতে রেখে লালন-পালন কষ্টসাধ্য। তবে, গতবারের চেয়ে গরুর দাম বেশি। দেখা যায় সিংহভাগ গরু দেশী। মাঝারি সাইজের গরু কিনছেন বেশিরভাগ ক্রেতাই। ফলে হাটে প্রকারভেদে গরু বেচাকেনা হচ্ছে ৩৬ হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত।
নওগাঁয় বাড়তি টোল আদায়ের অভিযোগ
নিজস্ব সংবাদদাতা, নওগাঁ থেকে জানান, জেলার কোরবানির হাটগুলোতে ইজারাদারদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত টোল আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। হাটগুলো হলো, মান্দা উপজেলার চৌবাড়িয়া হাট, সতীহাট, মহাদেবপুর সদর হাট, মাতাজী হাট ও চকগৌড়ি হাট, নিয়ামত পুরের ছাতড়া হাট, পতœীতলা হাট, বদলগাছীর কোলার হাট, রানীনগরের আবাদপুকুর হাট ও ত্রিমোহানী হাট, আত্রাইয়ের আহসানগঞ্জ হাট। এসব হাটে সরকার নির্ধারিত টোলের কোন তালিকা ঝুলানো হয়নি। সুযোগ বুঝে ইজারাদাররা নিজেদের খেয়াল খুশিমতো গরু ছাগলের টোল আদায় করে চলেছে। কোরবানির পশু গরু ছাগল বেচা-কেনায় ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের নিকট থেকে অতিরিক্ত টোল আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এক্ষেত্রে জেলার প্রতিটি হাটে ঈদের আগ পর্যন্ত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। সরকারীভাবে টোল রেট বৃদ্ধি করা হলো ৪শ’ টাকা। এরপর অতিরিক্ত খাজনা নেয়া হতো ৫শ’ টাকা। নতুন টোল গরুপ্রতি ১শ’ টাকা বৃদ্ধি করে ৫শ’ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা চলমান বাংলা সন অর্থাৎ ১ বৈশাখ ১৪২৯ হতে কার্যকর। যতবার সরকারীভাবে টোল রেট বাড়ানো হয়েছে যা অতিরিক্ত টোল রেটের সমান। এখন অতিরিক্ত টোল আদায় করা হচ্ছে সাড়ে ৫শ’ থেকে ৬শ’ টাকা।
নাটোরে জমজমাট
নিজস্ব সংবাদদাতা, নাটোর থেকে জানান, শেষ সময়ে বেচাকেনায় মুখর নাটোরের কোরবানির পশুর হাটগুলো। রবিবার দিনভর নাটোর শহরের তেবাড়িয়া হাটে কোরবানির পশুর জমজমাট বেচাকেনা হয়েছে। ঈদের আগে এটিই শেষ হাট। ফলে এই হাটে বেশিরভাগ ক্রেতা তাদের পছন্দ ও সামর্থ্য অনুযায়ী পশু কিনেছেন। স্থানীয়ভাবে প্রস্তুতকৃত গরু এই হাটে সরবরাহ করা হয়েছে। বাইরে থেকে কোরবানির পশু তেমন আমদানি না হওয়ায় এই হাটে তুলনামূলক বেশি দামে কোরবানির পশু ক্রয় বিক্রয় হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ ছাড়া জেলার বিভিন্ন এলাকায় খামারগুলোতে শেষ সময়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন খামারিরা। এসব খামারগুলোতে দেশীয় জাতের পশুর পাশাপাশি নেপালী, হরিয়ানা, সিন্ধি, জাতের গরু মোটাতাজাকরণ করা হয়েছে। নাটোর জেলায় এ বছর প্রায় ১৯ হাজার খামারে সাড়ে ৩ লাখ কোরবানির পশু প্রস্তুত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ।
বাগেরহাটে ২৫ মণের ‘টিয়া’র দাম ১০ লাখ
স্টাফ রিপোর্টার, বাগেরহাট থেকে জানান, কচুয়া উপজেলার দরিচড় মালিপটন এলাকার বিশ্বজিত বৈরাগীর ষাঁড় ‘টিয়া’ দেখতে প্রতিদিন উৎসুক মানুষ ভিড় করছে। ব্রাহামা জাতের ষাঁড় টিয়াকে দেশীয় পদ্ধতিতে লালন-পালন করছেন। ৯ ফুট লম্বা ও ৬ ফুট উচ্চতার এই ষাঁড়ের ওজন তিন বছরে ২৫ মণ হয়েছে। কালো ও বাদামি রংয়ের বিশালাকৃতির এই ‘টিয়া’ ঈদ-উল-আজহায় ১০ লাখ টাকায় বিক্রি হবে বলে তিনি আশা করছেন। বিশ্বজিত জানান, তিন বছর ধরে শুধু কাঁচা ঘাস, খড়, ভুসি খাইয়ে লালন-পালন করেছেন আদরের ‘টিয়া’কে। বাগেরহাট জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ লুৎফার রহমান বলেন, ঈদ-উল-আজহা উপলক্ষে খামারি ও পারিবারিক পর্যায়ে প্রায় ৪০ হাজার গরু পালিত হয়। এরমধ্যে কচুয়ার বিশ্বজিত বৈরাগীর ‘টিয়া’ অনেক বড় গরু। গরুটিকে পালন করতে কোন প্রকার হরমোন ও স্টেরয়েড ব্যবহার করা হয়নি।