ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ইউক্রেনের দুই সাঁতারু বোনের গল্প

স্পোর্টস রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:০০, ৩১ মে ২০২৩

ইউক্রেনের দুই সাঁতারু বোনের গল্প

ভ্লাদিস্লাভা ও মারিনা আলেক্সিভিয়া

ভ্লাদিস্লাভা ও মারিনা আলেক্সিভিয়া কেবল যমজ বোনই নন, তাদের চলাফেরা, ভালো লাগা, মন্দ লাগা, রুচিবোধ পর্যন্ত এক! সেই শৈশবে পুকুর থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজ হয়ে প্রফেশনাল পুলের নীল জল, সর্বত্র এগিয়েছেন একে অন্যের ছাঁয়া হয়ে। ২০১৮ থেকে ২০২২ ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে চার মৌসুমে নয় পদক, সঙ্গে ২০১৯ থেকে ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে দশ পদকের তিনটি স্বর্ণ। সেই বিচারে ২০২০ টোকিও অলিম্পিকের ‘আর্টিস্টিক’ সুইমিংয়ে ব্রোঞ্জ হয়তো বড় অর্জন নয়, তবে বয়সটাও তো খুব বেশি নয়। মাত্রই ২১।

দুই বোন মিলে স্বপ্ন দেখছিলেন ২০২৪ প্যারিস অলিম্পিকেই ইউক্রেনকে আরও বড় কিছু উপহার দেবেন। তার আগেই কঠিন পরীক্ষা হয়ে আসে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন। আরও অনেকের মতো  ভøাদিস্লাভা ও মারিনার পরিবার ইতালি পাড়ি জমায়। কিন্তু মন পড়ে থাকে জন্মস্থান খারকিভের অবলাস্টে।  সংবাদ সংস্থা এএফপিকে সেই অনুভূতিই জানিয়েছেন মারিনা।
ইতালিতেই তাদের অনুশীলন চলছে। দীর্ঘ প্রায় দেড় বছর ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের মধ্যে সম্প্রতি নিজেদের বাড়ি ঘর দেখতে পরিবারের সঙ্গে খারকিভে গিয়েছিলেন দুই বোন। ‘সত্যি বলতে রোম থেকে কিয়েভের (ইউক্রেনের রাজধানী) বিমানে ওঠার পর থেকেই বেশ নার্ভাস লাগছিল। বাড়ি ফেরার আনন্দের সঙ্গে ভয়ও কাজ করছিল। আমি ভøাদিস্লাভার হাত চেপে ধরছিলাম। যেমনটা আমরা সুইমিং পুলে কোনো প্রতিযোগিতায় নামার আগে ধরে থাকি।’ ধরা গলায় বলছিলেন মারিনা। যুদ্ধ শুরুর সময়ে দুই মেয়েকে রোমে পাঠিয়ে দিয়ে তাদের বাবা-মা আরও কিছুদিন দেশেই ছিলেন। খারকিভ এবং কিয়েভ দুই জায়গাতেই তাদের বাড়ি ছিল।

টোকিও অলিম্পিক থেকে ফিরে দিনকয়েক ছুটির পর মাত্রই তারা পুলের প্রস্তুতিতে ফিরেছিলেন। চারদিকে কেমন গুমোট পরিবেশ। ‘রুশ আগ্রাসনের শুরুর সপ্তাহেই সবাই বলাবালি করছিল ওরা সহসা কিয়েভে পৌঁছে যাবে। কী  ঘটতে যাচ্ছে, কী হবে, সবাই খুব চিন্তিত। একদিন আমাদের বাড়ির কাছেই সাইরেন বেঁজে উঠল। সবাইকে বাইরে বের হতে নিষেধ করা হলো। বাবা এসে আমাদের মাথায় হাত রেখে আশ্বস্ত করতে চাইছিলেন। কিন্তু পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ায় কিছুদিনের মধ্যেই আমাদের ইতালিতে পাঠিয়ে দিলেন। রোমে এসে আমরা তাদের জন্য টেনশনে থাকলাম।’
ঘোর যুদ্ধের সময়েও টানা দুই মৌসুম ইউরোপিয়ান ও ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য দুই বোনকে বিদেশে পাড়ি জমাতে হয়েছে। সেটি উল্লেখ করে মারিনা বলেন,‘বাবা-মা সবসময়ই আমাদের ক্যারিয়ারের বিষয়টি অগ্রাধিকার দিয়েছেন। সর্বোচ্চ সমর্থন দিয়ে আসছেন। প্রতিদান দিতে আমরা আগামি বছর প্যারিস অলিম্পিকে আরও ভালো কিছু করতে চাই। ইউক্রেনবাসীর জন্য বড় কিছু জিততে চাই।’ বলেন তিনি। যুদ্ধ শুরুর আগে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশপে অংশ নিতে যাওয়ার কথাও বিশেষভাবে উল্লেখ করেন মারিনা। বলেন, ‘মানুষ যুদ্ধ চায় না।

কি সুন্দর ছিল সেই দিনগুলো।’ ২০১৮ ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথম অংশ নিয়েই এক স্বর্ণসহ দুটি পদক জেতেন দুই বোন। ভিন্ন ভিন্ন ক্যাটাগরিতে ২০২০-২২ মৌসুমে জিতেছেন আরও আট স্বর্ণ। ২০১৭ থেকে ২০২২ পর্যন্ত ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়শিপে আটটি পদক এলেও প্রথম স্বর্ণ জেতেন ২০১৯Ñএ, গুওয়াং জুতে। গত বছর বুদাপোস্টে আসে আরও দুই স্বর্ণ।

×