দুই অধিনায়ক নাইমুর রহমান ও সৌরভ গাঙ্গুলী
২৪ বছর পেরিয়ে গেছে টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ দল যাত্রা শুরু করেছে। ২০০০ সালের এইদিনে (১০ নভেম্বর) বিশে^র দশম টেস্ট খেলুড়ে দেশ হিসেবে নিজেদের মাঠের লড়াই শুরু করে বাংলাদেশ। ভারতের বিপক্ষে ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ঐতিহাসিক টেস্ট খেলতে নামে টাইগাররা। টেস্ট ইতিহাসে প্রথমবার দুই বাঙালি অধিনায়ক টস করেন। ভারতের সৌরভ গাঙ্গুলী আর বাংলাদেশের নাঈমুর রহমান দুর্জয়। সেই টেস্টে চমকপ্রদ কিছু ঘটনার জন্ম দেয় বাংলাদেশ দল যা ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ হয়েছে।
বাংলাদেশ দলের ৪০০ রান, আমিনুল ইসলাম বুলবুলের সেঞ্চুরি ও দুর্জয়ের ৬ উইকেট তার মধ্যে অন্যতম। তবে সেই ম্যাচও হেরে যায় বাংলাদেশ। কিন্তু নিজেদের প্রথম টেস্টেই দুর্দান্ত কিছু পারফর্ম্যান্স দেখিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বিশ^কে নিজেদের আগমনী বার্তাটা ভালোভাবেই দিয়েছে। এরপর গুটিকয়েক জয় আসলেও ২৪ বছরে টেস্ট ক্রিকেটে খুব বেশি উন্নতি আসেনি বাংলাদেশ দলের। বিষয়টি নিয়ে কয়েকদিন আগেই বাংলাদেশের প্রথম টেস্টের সেঞ্চুরিয়ান বুলবুল আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন।
টেস্টে আজই বাংলাদেশের ২৪ বছর শেষ। ২০০০ সালের এদিন ভারতের বিপক্ষে প্রথমবার টেস্ট খেলতে নেমে বাংলাদেশ টস জিতে আগে ব্যাটিং নিয়ে প্রথম ইনিংসে ৪০০ রান করে সবাইকে চমকে দেয়। বুলবুল ১৪৫ রানের অবিশ^াস্য একটি ইনিংস উপহার দেন এবং হাবিবুল বাশার সুমন করেন ৭১ রান। জহির খান, জাভাগাল শ্রীনাথ, অজিত আগারকার ও সুনিল যোশীরা ছিলেন বোলার। এরপর শচীন টেন্ডুলকর, গাঙ্গুলী, রাহুল দ্রাবিড়দের নিয়ে গড়া ব্যাটিং লাইনআপকে ৪২৯ রানের বেশি করতে দেননি বাংলাদেশের দুর্জয়, মোহাম্মদ রফিক, হাসিবুল হোসেন শান্তরা। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে অনভিজ্ঞ বাংলাদেশের ব্যাটিং ব্যর্থতা শেষ পর্যন্ত সেই টেস্টের চতুর্থ দিনই পরাজয় ডেকে আনে।
পথচলাটা এরপরও প্রশংসিত হয়েছে। কিন্তু প্রথম জয় পেতে প্রায় ৫ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। ২০০৫ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট জয় পায় বাংলাদেশ দল। আরেকটি টেস্ট জিততে লেগেছে আরও চার বছর। কখনো কখনো হুট করে বাংলাদেশ খুব ভালো খেলেছে, কখনো আবার চরম ব্যর্থতা দেখিয়েছে। তাই ২৪ বছর পেরিয়েও এখন পর্যন্ত আইসিসির টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে ৯ নম্বরে বাংলাদেশের অবস্থান। এখনো টেস্টে উন্নতির জন্য কি পরিকল্পনা নিতে হবে আলোচনা সেখানেই থেমে আছে।
এই দীর্ঘ সময় টেস্ট ক্রিকেটে যাত্রা করা বাংলাদেশ দল নির্দিষ্ট ১৩টি বছর আছে যেগুলোয় কোনো টেস্ট জিততে পারেনি। সেদিক থেকে ২০২৩ সালটাই সবচেয়ে ভালো গেছে। গত বছর ৪ টেস্ট খেলে ৩টিতেই জিতেছে বাংলাদেশ, হার মাত্র ১টি। জয়ের হার ৭৫ শতাংশ। এর চেয়ে বেশি সাফল্যের হার বাংলাদেশের ২৪ বছরের টেস্ট ইতিহাসে কখনোই ছিল না। ঐতিহাসিক কিছু জয়ও পেয়েছে বাংলাদেশ। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয়- দেশের বাইরে প্রথম টেস্ট জয় সেবারই।
২০১৬ সালে ক্রিকেটের জন্মদাতা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মিরপুরে অবিস্মরণীয় জয়, ২০১৭ সালে কলম্বোয় নিজেদের শততম টেস্ট জয় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে, একই বছর মিরপুরে শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয়। এরপর ২০২২ সালে নিউজিল্যান্ড সফরে স্বাগতিকদের বিপক্ষে মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে জয় এবং তাদেরই বিপক্ষে সিলেটে গত বছর টেস্ট জয়। সর্বশেষ গত আগস্টে পাকিস্তান সফরে তাদের বিপক্ষে ২ টেস্টে জয় অবিস্মরণীয় সাফল্য। বড় দলগুলোর মধ্যে শুধু ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেই জিততে পারেনি বাংলাদেশ। সবমিলিয়ে ১৪৮ টেস্ট খেলে মাত্র ২১ জয়, ১০৯টি হার ও ১৮ ড্র বাংলাদেশের টেস্ট পরিসংখ্যান। দলীয় সর্বোচ্চ রান ৬৩৮, গলে ২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। মাত্র ১২টি ৫ শতাধিক রানের সংগ্রহ আছে বাংলাদেশের।
কোনো বছরই খুব বেশি টেস্ট খেলেনি বাংলাদেশ। ২০২২ সালে সর্বোচ্চ ১০টি এবং এ বছর ১০ টেস্ট খেলার সুযোগ পেয়েছে। এটিকেও অনেকে এই ফরম্যাটে উন্নতির অন্তরায় হিসেবে দেখেন। এ বিষয়ে বুলবুল আক্ষেপ নিয়ে বলেছেন, ‘১০ নভেম্বর বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটে ২৪ বছর পূর্ণ হচ্ছে। এই দীর্ঘ সময়ে আমরা তেমন ম্যাচ জিততে পারিনি। গেল কয়েকটি র্যাঙ্কিং ও দ্বিপক্ষীয় সিরিজ দেখলে বোঝা যায় আমরা তেমন ভালো করতে পারিনি। এর অন্যতম কারণ আমাদের যে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট রআছে এখনো সেটি বনভোজনের মতো হয়।
স্টেডিয়ামগুলো নতুনভাবে ব্র্যান্ডিং করা উচিত। প্রথম শ্রেণির পারিশ্রমিক ৩ গুণ করে দেওয়া উচিত। বিপিএল যেভাবে প্রচার-প্রসার করি, সেভাবে এই ক্রিকেটকে করতে পারলে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ভালো হয়ে যেত। তাতে টেস্ট ক্রিকেটও স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভালো হয়ে যেত।’ গত ২৩ বছর ধরে এই কথাগুলোই বারবার বলা হলেও বাস্তবে তা রূপ নেয়নি বলেই এখনো টেস্টে বাংলাদেশ পিছিয়েই আছে।