
.
আধুনিক ফুটবলের জনক হিসেবেই পরিচিত ইংল্যান্ড। কিন্তু ফুটবল ইতিহাসে সাফল্যের বিচারে অনেক পেছনে থ্রি-লায়ন্সরা। পরিসংখ্যান ঘেটে দেখা যায় এযাবৎকালের ইতিহাসে কেবলমাত্র একটি বিশ্বকাপ ট্রফি-ই তাদের সম্বল! ১৯৬৬ সালে প্রথম ও শেষবারের মতো বিশ্বকাপের স্বাদ গ্রহণ করে ইংল্যান্ড। সেবার তারা ৪-২ গোলে হারায় পশ্চিম জার্মানি। এরপর কেটে গেছে দীর্ঘ সময়। কিন্তু দুর্ভাগ্য ইংলিশদের। গত ৫৮ বছরের মধ্যে যে কোনো শিরোপা-ই জিততে পারেনি থ্রি-লায়ন্সরা। আক্ষেপ-আর চরম হতাশায় দিন পার করেছে তাদের ভক্ত-অনুরাগীরা।
তবে সেই ইংল্যান্ডের সাম্প্রতিক সময়কালটা বেশ ভালো। কেননা, ২০১৮ বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলা দলটা জায়গা করে নেয় ২০২০ ইউরোর ফাইনালে। এরপর ২০২২ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালের টিকিট কাটা গ্যারেথ সাউথগেটের শিষ্যরা এবার জায়গা করে নিয়েছে ২০২৪ ইউরোর ফাইনালেও। অর্থাৎ উয়েফা ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে ব্যাক টু ব্যাক ফাইনালে উঠার নজির এখন থ্রি-লায়ন্সদের। যে কারণেই ফুটবলবোদ্ধাদের মনের মধ্যে প্রশ্ন উঠছে এবার কী তাহলে কেন-বেলিংহ্যামরা পারবে সেই ছেষট্টি বিশ্বকাপের স্মৃতি ফেরাতে? দুর্দান্ত ফর্মে থাকা গ্যারেথ সাউথ গেটের দল কী পারবে ৫৮ বছরের শিরোপা-খরা ঘুচাতে?
এই প্রশ্নের উত্তর অবশ্য সময়ের হাতে। আরও সুস্পষ্ট করে বললে এক ম্যাচ দূরে। আগামী রবিবার বার্লিনের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে ইউরোর ফাইনালে মাঠে নামবে ইংল্যান্ড। যেখানে তাদের প্রতিপক্ষ উড়তে থাকা স্পেন। সুপার সানডের সেই ম্যাচে জিতলেই ১৯৬৬ সালের পর আবারও উৎসবের জোয়ারে ভাসবে গোটা ইংলিশ শিবির। সর্বশেষ ২০২০ ইউরোতে ঘরের মাঠেই ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছিল গ্যারেথ সাউথগেটের এই দল। কিন্তু সেবার তাদের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দেয় ইতালি। ৫৫ বছর পর মেজর কোনো টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠলেও শিরোপা ছোঁয়া হয়নি হ্যারি কেনদের। লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে রোমাঞ্চকর টাইব্রেকারে তাদের জয় ছিনিয়ে নেয় ইতালি। ইংলিশদের স্বপ্নযাত্রা থামিয়ে সেবার ৫৩ বছর পর ইউরোর চ্যাম্পিয়ন হয় আজ্জুরিরা। ফাইনালে সেই হার থেকে শিক্ষা নিয়ে এবারের জার্মানিতেও হট ফেভারিটের ট্যাগ গায়ে মেখে মিশন শুরু করে ইংল্যান্ড।
বুধবার রাতে ডর্টমুন্ডে দ্বিতীয় সেমিফাইনালে নেদারল্যান্ডসকে ২-১ গোলে হারায় ইংলিশরা। তাতেই টানা দ্বিতীয়বারের মতো ইউরোর ফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করে গ্যারেথ সাউথগেটের দল। তবে এবারের আসরে স্পেন যতটা দাপুটে ফুটবল খেলে ফাইনালে উঠেছে, তার ধারেকাছে নেই ইংল্যান্ড। দুই দলের গোলের সংখ্যাই অবশ্য পার্থক্যটা বুঝিয়ে দিচ্ছে। গ্রুপ পর্বে সব ম্যাচ জিতেছে লা রোজারা। অন্যদিকে ইংল্যান্ড এক জয় ও দুই ড্র নিয়ে পরের রাউন্ডে উঠেছে। ৬ ম্যাচে স্পেন গোল করেছে ১৩টি, ইংল্যান্ড ৭টি। তবে ফুটবল এমনই এক খেলা যেখানে অনেক সময় আগের পরিসংখ্যান বিকায় না। ওই ম্যাচে সেরাটা দিতে পারলে প্রতিপক্ষকে টপকানো সম্ভব। ইংল্যান্ড হয়তো তেমন একটা দিনই চাইবে। আন্তর্জাতিক ফুটবলে দুই দেশ ২৭ বার মুখোমুখি হয়েছে। তবে সর্বাধিক ১৯ বার ফিফা প্রীতি ম্যাচে। বিশ্বকাপে দুইবার, ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপে ৪ বার ও ইউরোপা লিগে ২ বার।
জয়ের পাল্লা ভারি ইংল্যান্ডের। ১৪ ম্যাচ জিতেছে তারা, হেরেছে ১০টি। তিনটি ম্যাচ ড্র হয়েছে। ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপে চারবারের সাক্ষাতে একবারও হারেনি ইংল্যান্ড। এই টুর্নামেন্টে সর্বশেষ দেখা হয়েছিল ১৯৯৬ সালে। কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ড জিতেছিল টাইব্রেকারে। যে কোনো ফুটবলে সবশেষ দুই দল মুখোমুখি হয়েছিল ২০১৮ সালে উয়েফা নেশন্স লিগে। রহিম স্টার্লিংয়ের দুটি আর মার্কাস রাশফোর্ডের এক গোলে সেই ম্যাচে ইংল্যান্ড ৩-২ গোলে হারিয়েছিল স্পেনকে। গ্যারেথ সাউথগেটের দল কী এবারও পারবে ইউরো-বিশ্বকাপ-ইউরোজয়ী দলকে হারাতে?