গত কয়েক বছর ধারাবাহিকভাবে ভালো বোলিং করে বাংলাদেশকে ম্যাচে টিকিয়ে রাখছেন বোলাররা
২০০৯ সালেই বাংলাদেশের ক্রিকেটের দৃশ্যপটে বড় পরিবর্তন এসেছে। সেবার মাশরাফি বিন মর্তুজা অধিনায়ক হয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গেছেন। তবে সফরের শুরুতে দুই টেস্টের সিরিজই তার খেলা হয়নি। প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় দিন হাঁটুর ইনজুরি নিয়ে মাঠ ছাড়েন মাশরাফি এবং সেই ম্যাচটিতে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক হিসেবে সাকিব আল হাসান দায়িত্ব পালন করেন। ঐতিহাসিক জয় পায় বাংলাদেশ সেই ম্যাচে।
এরপর থেকে সাকিবের কাঁধেই নেতৃত্ব ওঠে। কারণ দীর্ঘ সময়ের জন্য মাঠের বাইরে চলে যান মাশরাফি। বাংলাদেশ ক্রিকেটে পালাবদল আর বড় পরিবর্তনের সাক্ষী সেন্ট ভিনসেন্টের কিংসটাউনে অবস্থিত আরনস ভেল গ্রাউন্ড। এই মাঠটিতে সাম্প্রতিক সময়ে খুবই কম ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। মাত্র ৩ টেস্ট, ২৩ ওয়ানডে ও ২ টি২০ অনুষ্ঠিত হয়েছে এই ভেন্যুতে। অথচ এবার সেটিই টি২০ বিশ^কাপের অন্যতম ভেন্যু। গ্রুপ পর্বের তিনটি ও সুপার এইটের দুটি- মোট ৫ ম্যাচ আয়োজনের সুযোগ পেয়েছে মাঠটি। নেদারল্যান্ডস ও নেপালের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ দুটি ম্যাচ এখানেই।
বাংলাদেশ দলের জন্য ঐতিহাসিক মাঠ হলেও মাত্র ২ ওয়ানডে ও ২ টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। ২০০৪ সালে এখানে দুই ওয়ানডে খেলে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হেরেছে। কিন্তু ২০০৯ সালে প্রথমবার টেস্ট খেলতে নেমেই জিতেছে। সেই ম্যাচে অধিনায়ক হিসেবে যাত্রা শুরু করা মাশরাফি টস করলেও টেস্টের দ্বিতীয় দিন যে ইনজুরিতে পড়েছেন সেটি তাকে আজীবনের জন্য টেস্ট ক্রিকেট থেকে ছিটকে দিয়েছে।
আর কখনো টেস্টে দেখা না গেলেও পরবর্তীতে ফিরে এসে ওয়ানডে ও টি২০ খেলেছেন এবং উভয় ফরম্যাটে দলকে নেতৃত্বও দিয়েছেন। কিন্তু সেদিন মাত্র ৬.৩ ওভার বোলিং করতে পেরেছিলেন প্রথমবার অধিনায়ক হিসেবে যাত্রা করেই। তখনই সাকিবের কাঁধে চলে গেছে নেতৃত্ব। পালাবদল ঘটেছে এবং টেস্ট জেতার কারণে অনেকটাই বদলে গেছে বাংলাদেশের ক্রিকেট। সাকিব ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক হিসেবে বাংলাদেশকে জিতিয়েছেন সেই ম্যাচ।
তামিম ইকবাল তার ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি এ ম্যাচেই করেছেন। দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি ১২৮ রান করেন। এটি ছিল মাহমুদুল্লাহর অভিষেক টেস্ট। ক্যারিয়ারের একমাত্র ৫ উইকেট এই ম্যাচেই নিয়েছিলেন তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় ইনিংসে। নিজেদের ইতিহাসে দেশের বাইরে সেটাই প্রথম টেস্ট জয় বাংলাদেশের। আর সেজন্য বাংলাদেশ দলের জন্য ঐতিহাসিক মাঠ হয়ে আছে সেন্ট ভিনসেন্ট। তবে এখানে ২০১৪ সালে টেস্ট খেলে হেরেছে বাংলাদেশ, ২০০৪ সালে দুই ওয়ানডে খেলেও হেরেছে।
বর্তমান স্কোয়াডে যারা আছেন তার মধ্যে সাকিব ২০০৯ সালের টেস্টটি এবং মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ২০০৯, ২০১৪ সালে টেস্ট খেলেছেন এখানে। ১০ বছর পর আবার এই ভেন্যুতে এবার টি২০ বিশ^কাপে নিজেদের দুই ম্যাচ খেলতে গেছে বাংলাদেশ দল। ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (সিপিএল) টি২০ আসরে আজ পর্যন্ত কোনো ম্যাচ হয়নি সেন্ট ভিনসেন্টে। আন্তর্জাতিক টি২০-ও হয়েছে এই ভেন্যুতে মাত্র দুটি।
সেটিও ১১ বছর আগে (২০১৩ সালে) সফরকারী পাকিস্তান দল খেলেছে উইন্ডিজের বিপক্ষে। ম্যাচ দুটিতে খুব বেশি রান হয়নি। ৩ টেস্টের দুটি বাংলাদেশ ও একটি শ্রীলঙ্কা খেলেছে (১৯৯৭) এখানে, ২৩ ওয়ানডে হলেও সর্বশেষটি হয়েছে ২০১২ সালে- খেলেছে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড, জিম্বাবুয়ে, ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মতো দল। যেহেতু টি২০ ম্যাচ খুব কম হয় সে কারণে এই ভেন্যু সম্পর্কে সব দলেরই তেমন জানা নেই।
এই ফরম্যাটে কতটা উপযুক্ত এই মাঠের উইকেট সেই পরীক্ষাটা হয়েছে বাংলাদেশ-নেদারল্যান্ডস ম্যাচ দিয়েই। খুব বেশি ম্যাচ হয় না, হলেও টি২০ যৎসামান্যই হয়েছে, টি২০ প্রতিযোগিতা সিপিএলের কোনো ম্যাচ হয় না এরপরও এই ভেন্য এবারের বিশ^কাপে ৫টি ম্যাচ পেয়েছে সেটাই বড় আশ্চর্যের।