
চট্টগ্রামে অনুশীলন চলাকালীন কোচ হাতুরুসিংহে ও সাকিব আল হাসানের মধ
সাগরিকায় আরেকটি নতুন লড়াই শুরু বাংলাদেশ দলের। কিছুদিন আগে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে টি২০ সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করার পর আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে টাইগারদের। সেই অবিস্মরণীয় কীর্তির শুরুটা হয়েছে সাগরিকায়। বন্দর নগরী চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে এবার পুরো সিরিজটাই অনুষ্ঠিত হবে সফরকারী আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে। আজ দুপুর ২টায় প্রথম টি২০ মাঠে গড়াবে এখানে। ফুরফুরে মেজাজে থাকা বাংলাদেশ দলের লক্ষ্য এই সিরিজেও প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করার। তাই আজ জয় দিয়েই শুরু করতে উন্মুখ সাকিব আল হাসানের দল।
তবে টি২০ ফরম্যাট বলেই আইরিশদের খুব সহজভাবে নেওয়া যাচ্ছে না। ওয়ানডে সিরিজে অসহায় আত্মসমর্পণ করলেও এই ফরম্যাটে সব সব সময়ই দুর্দান্ত একটি দল আইরিশরা। তবে চট্টগ্রামে কখনোই আগে কোনো ম্যাচ না খেলা আয়ারল্যান্ড দলের জন্য মানিয়ে নেওয়ার চ্যালেঞ্জটাই কঠিন। সেজন্য অবশ্য ওয়ানডে সিরিজে বিপর্যস্ত পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠে টি২০ সিরিজের জন্য প্রস্তুত হতে তিনদিন সময় পেয়েছে তারা। এবার টি২০ সিরিজে স্বাগতিকদের চমকে দিতে চায় সফরকারী দল। আর বাংলাদেশ আরো কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার দিকে মনোযোগী হলেও সিরিজ জেতার জন্যই নামবে।
দুই দলের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ এবার মাত্র দ্বিতীয়টি। এই ফরম্যাটের আইসিসি র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশ ৯ আর আয়ারল্যান্ড ১২ নম্বরে। তবে দুই দলের মধ্যে টি২০ ফরম্যাটে সাক্ষাৎ হয়েছে অনেক কম। সর্বশেষ ২০১২ সালে পরস্পরের মধ্যে টি২০ লড়াই হয়েছে। অর্থাৎ গত ১১ বছরে আর টি২০-তে দু’দলের সাক্ষাৎ হয়নি এই ফরম্যাটে। অবশ্য ২০১৬ টি২০ বিশ্বকাপে ধর্মশালায় প্রাথমিক রাউন্ডে মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড। কিন্তু সেই ম্যাচে বাংলাদেশ ৮ ওভারে ২ উইকেটে ৯৪ রান তোলার পর বৃষ্টিতে পন্ড হয়ে যায় ম্যাচটি। বৈশ্বিক আসর কিংবা কোনো টুর্নামেন্টে লড়াইয়ে নামার পরিসংখ্যান এটি। আর দ্বিপক্ষীয় সিরিজেও দুই দলের মধ্যে সর্বশেষ ২০১২ সালে সাক্ষাৎ।
সে বছর আয়ারল্যান্ড সফরে গিয়ে ৩-০ ব্যবধানে স্বাগতিকদের হোয়াইটওয়াশ করে দেশে ফিরে আসে বাংলাদেশ। সব মিলিয়ে দুই দলের মধ্যে মাত্র ৫ টি২০ ম্যাচে একটি পরিত্যক্ত হয়েছে এবং ৩টি জিতেছে বাংলাদেশ ও একটি হেরেছে। ২০০৯ সালের টি২০ বিশ্বকাপে প্রথম দেখাতেই বাংলাদেশকে ৬ উইকেটে হারিয়েছে আইরিশরা নটিংহ্যামে। এরপর টানা ৩ ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ। এই পরিসংখ্যান থেকে সুস্পষ্টভাবেই এগিয়ে টাইগাররা। আর ওয়ানডে সিরিজে স্বাগতিকদের মোকাবিলা করেই সফরকারী দল বুঝতে পেরেছে পার্থক্যটা। কিন্তু ক্ষুদ্র ফরম্যাট টি২০ সিরিজে তারা বেশ আত্মবিশ্বাসী ভালো করতে। কারণ এই ফরম্যাটে বাংলাদেশের চেয়ে খুব বেশি পিছিয়ে নেই। বরং ম্যাচ খেলার দিক থেকে এবং ফল অনুসারে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে আইরিশরা। এখন পর্যন্ত এই ফরম্যাটে ১৪৪ ম্যাচ খেলেছে আয়ারল্যান্ড দল। ৫৯ জয় আছে তাদের এবং বিপরীতে হার মাত্র ৭৬টি। ২টি টাই ম্যাচ এবং ৭টি পরিত্যক্ত। বাংলাদেশ দল মাত্র ৩ ম্যাচ বেশি খেলেছে। ১৪৭ ম্যাচে বাংলাদেশের জয় মাত্র ৫২টি আর পরাজয় ৯২টি। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক টি২০-তে জয় পরাজয়ের পরিসংখ্যানে এগিয়ে আইরিশরা।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সর্বশেষ সিরিজে বিশ্বকাপ স্কোয়াডের ৫ জনকে বাদ দিয়েও সফল হয়েছে বাংলাদেশ দল। এবার সেই দল থেকেও কয়েকজন বাদ পড়েছেন। ইংলিশদের বিপক্ষে শেষ ম্যাচ না খেলা আফিফ হোসেন ধ্রুব পুরোপুরি ছিটকে গেছেন স্কোয়াড থেকে। এ ছাড়া অভিষেক হওয়া বাঁহাতি স্পিনার তানভীর ইসলাম, ডানহাতি পেসার রেজাউর রহমান রাজা, উইকেটরক্ষক ব্যাটার নুরুল হাসান সোহান ছিটকে গেছেন। নতুন মুখ হিসেবে আসা লেগস্পিনার রিশাদ হোসেন ও উইকেটরক্ষক ব্যাটার জাকের আলী অনিকের পরীক্ষা হবে এই সিরিজে। যদিও চট্টগ্রামের উইকেটে আগের সিরিজেই পেসাররা ভালো করেছেন এবং ধারাবাহিকভাবেই প্রতিপক্ষকে নাজেহাল করে যাচ্ছেন বাংলাদেশী পেসাররা।
সে ক্ষেত্রে রিশাদের একাদশে সুযোগ পাওয়া বেশ কঠিন। তা ছাড়া ঘরোয়া ক্রিকেট কিংবা আইরিশদের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচেও আহামরি কিছু করতে পারেননি তিনি। কোচ চান্দিকা হাতুরুসিংহে মূলত তাকে সামনাসামনি দেখে পরখ করতেই এনেছেন। গত কয়েক দিনের অনুশীলনে এবং সিরিজ চলাকালীন নেটে যদি নজর কাড়তে পারেন, সে ক্ষেত্রে এবারই অভিষেক হতে পারে তার। তবে ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত দুর্দান্ত ব্যাটিং করা জাকের আলীর অভিষেক ক্যাপ পাওয়া প্রায় নিশ্চিত। এ ছাড়া দলে ফেরা বাঁহাতি পেসার শরিফুল ইসলামও সুযোগ পাবেন ম্যাচ খেলার। সব মিলিয়ে আরেকটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার সিরিজ শুরু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।