ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজ জয়ের ম্যাচে হাসান মাহমুদের ৫, তাসকিন আহমেদ ৩ ও এবাদত হোসেনের ২ উইকেট

টাইগার পেসত্রয়ীর দাপটে বিপর্যস্ত আইরিশরা

মো. মামুন রশীদ

প্রকাশিত: ২৩:৫৫, ২৩ মার্চ ২০২৩

টাইগার পেসত্রয়ীর দাপটে বিপর্যস্ত আইরিশরা

উইকেট শিকারের উল্লাস তাসকিন আহমেদের

এবার হাসান মাহমুদকে কি বলবেন পেস বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ড? একদিন আগেই সিলেট থেকে উঠে আসা ডানহাতি পেসার এবাদত হোসেন চৌধুরীকে তার ক্রমোন্নতি দেখে ‘সিলেট রকেট’ বলেছেন। তবে বৃহস্পতিবার লোকাল বয় এবাদতের মাঠ সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে নায়ক তরুণ ডানহাতি পেসার হাসান মাহমুদ। ২৩ বছরের এই তরুণ পেশাদার ক্রিকেটে নিজের সেরা বোলিং নৈপুণ্যে ৩২ রানে ৫ উইকেট নেন। তবে এবাদত কম যাননি। তিনি ৬ ওভারে ২৯ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন।

আর ২ বছর আগে ইনজুরি কাটিয়ে ফেরার পর থেকেই ক্রমান্বয়ে ভয়ংকর হতে থাকা আরেক ডানহাতি পেসার তাসকিন আহমেদ ২৬ রানে ৩ উইকেট শিকার করেছেন। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে পূর্ণ ১০ ওভার বোলিং করে সবচেয়ে কিপটে বোলিং এটি তার। ডানহাতি এই পেসারত্রয়ী এমন এক দলের বিপক্ষে সব উইকেট তুলে নিয়েছেন যারা নিয়মিতই পেসবান্ধব উইকেটে খেলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।

ফলে বাংলাদেশের বিপক্ষে নিজেদের সর্বনি¤œ ১০১ রানে গুটিয়ে গেছে আয়ারল্যান্ড ২৮.১ ওভারে। প্রথমবার ওয়ানডেতে প্রতিপক্ষের ১০ উইকেটই বাংলাদেশের পেসাররা তুলে নিয়েছেন। তাই প্রথমবার ১০ উইকেটের জয় এসেছে। বাংলাদেশ জিতেছে ১৩.১ ওভারে বিনা উইকেটে ১০২ রান তুলে। ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতেছে টাইগাররা।
বাংলাদেশ দলের পেসারদের নিয়ে বছর দুয়েক ধরেই বেশ আলোচনা হচ্ছে। এক ঝাঁক পেসার অনবরত দুর্দান্ত উন্নতি দেখিয়ে যাচ্ছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। নিয়মিতই দলের সাফল্যও এনে দিচ্ছেন পেসাররা। সেটি দেশে হোক কিংবা বিদেশে। অথচ বাংলাদেশ দলের বোলিং আক্রমণটা মূলত স্পিন নির্ভর। সেই নির্ভরতা কাটিয়ে এমনকি দেশের মাটিতেও এখন পেসারদের ওপর আস্থা ও নির্ভরতা রাখতে শুরু করেছে টাইগাররা।

‘সাদা বিদ্যুৎ’ খ্যাত দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক পেসার ডোনাল্ড দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই যেন ভিন্নমাত্রা পেতে শুরু করেছে বাংলাদেশের পেস বোলিং। তার অধীনে মুস্তাফিজুর রহমান, এবাদত, তাসকিন, সৈয়দ খালেদ আহমেদ, হাসান, শরিফুল ইসলাম ও রেজাউর রহমান রাজারা শুধু উন্নতির দিকেই এগিয়ে গেছেন। একের পর এক পেসারদের কাছ থেকে আসা সাফল্য থেকেই তার প্রতিফলন দেখা গেছে। এবার সফরকারী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পেসাররা দুর্দান্ত পারফর্ম করেছেন।

এরর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষেও প্রথম ওয়ানডেতে ৩ পেসার ভালো করেছেন। অপরিহার্য মুস্তাফিজকে বাদ দিয়ে ৩ ডানহাতি- তাসকিন, এবাদত ও হাসানকে নিয়ে একাদশ সাজায় বাংলাদেশ দ্বিতীয় ওয়ানডেতেই। কিন্তু বৃষ্টিতে ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়ে গেলে তাদের দেখার সুযোগ পাননি ডোনাল্ড। তাই বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। টস জিতে এদিন আগে ব্যাটিংয়ে নামে আইরিশরা। সিরিজ হার ঠেকাতে জয়ের কোনো বিকল্পই ছিল না তাদের। 
আগের দুই ম্যাচে আগে ব্যাট করে এই মাঠে রানের রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ। প্রায় সাড়ে ৩ শতাধিক রান করে স্বাগতিকরা। তবে ম্যাচের শুরুতে ব্যাট করা বেশ দুরুহ। সেটি বাংলাদেশী ব্যাটাররা আগের দুই ম্যাচে সতর্ক থেকে উতরে গেলেও আইরিশ ব্যাটাররা পারেনি। শুরু থেকেই সিলেটের পেস ও বাউন্স সমৃদ্ধ উইকেটে দারুণ লাইনে বোলিং করে হাসান-তাসনি চেপে ধরেছেন আইরিশ ওপেনারদের। রান তুলতে হিমশিম খেয়েছেন তারা।

ইনিংসের পঞ্চম ওভারে স্টিফেনকে (৮) এবং নবম ওভারে পল স্টার্লিং (৭) ও হ্যারি টেক্টরকে (০) সাজঘরে ফিরিয়ে বিপর্যয়ে ঠেলে দেন হাসান। দশম ওভারে তাসকিনও প্রথম সাফল্য পান অধিনায়ক অ্যান্ডি বালবির্নিকে (৬) শিকার করে। মাত্র ২৬ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে বিপর্যস্ত আইরিশদের টেনে তোলার চেষ্টা করেন লোরকান টাকার ও কার্টিস ক্যাম্ফার। তারা পঞ্চম উইকেটে ৪২ রান যোগ করেন। কিন্তু ওই সময় আঘাত হানেন এবাদত।

১৯তম ওভারের পঞ্চম বলে ৩১ বলে ৪টি চারে ২৮ রান করা টাকারকে এলবিডব্লিউ এবং ষষ্ঠ বলে জর্জ ডকরেলকে (০) বোল্ড করে ধসিয়ে দেন আইরিশ প্রতিরোধ। এরপর ক্যাম্ফার একাই লড়াই চালিয়েছেন বাংলাদেশী পেসত্রয়ীর দাপটের সামনে। কিন্তু ২২তম ওভারে জোড়া আঘাত হেনে আইরিশ ব্যাটিং লাইনের মেরুদ- ভেঙে দিয়েছেন তাসকিন। অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইন (১) ও মার্ক এডায়ার (০) সাজঘরে ফিরেছেন তার শিকার হয়ে। বিপর্যস্ত আইরিশদের পুরোপুরি পর্যবসিত করার কাজটা ফিরতি স্পেলে ফিরে করেছেন হাসান।

২৭তম ওভারে তিনি ৪৮ বলে ৪টি চারে ৩৬ রান করা ক্যাম্ফারকে  ও ২৯তম ওভারে গ্রাহাম হিউমকে (৩) সাজঘরে ফিরিয়েছেন। ফলে ২৮.১ ওভারে ১০১ রানেই গুটিয়ে গেছে আয়ারল্যান্ড। এর আগে ওয়ানডেতে প্রতিপক্ষের ১০ উইকেট নিতে পারেনি বাংলাদেশের পেসাররা। তবে ১২বার ৮টি করে উইকেট নিয়েছে। এবার ১০ উইকেটই পেয়েছেন পেসাররা। তাই এটি বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডেতে সর্বনি¤œ সংগ্রহ আইরিশদের। সার্বিকভাবে এটি তাদের ষষ্ঠ সর্বনিম্ন। আর বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডেতে কোনো দলের এটি ওয়ানডেতে তৃতীয় সর্বনিম্ন রান।

জবাব দিতে নেমে তামিম ইকবাল ও লিটন কুমার দাসের বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে ১৩.১২ ওভারেই বিনা উইকেটে ১০২ রান তুলে জয় পায় বাংলাদেশ। সিরিজ জিতে নেয় ২-০ ব্যবধানে। এর আগে ৫ বার ওয়ানডেতে ৯ উইকেটে জিতলেও এই প্রথম ১০ উইকেটে জিতল টাইগাররা। পরে ব্যাট করে সবচেয়ে বড় জয়ের রেকর্ড গড়েই সিরিজ জিতে নিল তামিমের দল।

×