.
নবম বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) টি২০ আসর শেষ পর্যায়ে। রাউন্ড রবিন লিগ পর্বে আর ৬ ম্যাচ বাকি। ইতোমধ্যে ৩ দলের প্রাথমিক রাউন্ড থেকে বিদায় নিশ্চিত হয়েছে। খুলনা টাইগার্স, ঢাকা ডমিনেটর্স ও চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ছিটকে পড়েছে। আর প্লে-অফ নিশ্চিত করেছে ৪ দল- সিলেট স্ট্রাইকার্স, ফরচুন বরিশাল, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ও রংপুর রাইডার্স।
কিন্তু এখনো নিশ্চিত হয়নি পয়েন্ট টেবিলে দলগুলোর অবস্থান। পরবর্তী ৬ ম্যাচের ফলের ওপর দলগুলোর অবস্থান নির্ভর করবে। শীর্ষস্থান দখলের সুযোগ খোলা ৪ দলেরই। তবে ১১ ম্যাচে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে এগিয়ে থাকলেও সিলেটের বাকি মাত্র একটি ম্যাচ। দুটি করে ম্যাচ বাকি থাকা বরিশাল, কুমিল্লা ও রংপুরের পয়েন্ট সমান ১৪ করে। দলের লড়াইয়ের মধ্যে আছে ক্রিকেটারদের ব্যাট-বলের লড়াইও। ৯ ম্যাচে ৩৭৩ রান নিয়ে শীর্ষে সিলেটের টপঅর্ডার তরুণ তৌহিদ হৃদয়। তারই সতীর্থ নাজমুল হোসেন শান্ত ৩৭১ ও বরিশালের সাকিব আল হাসান ৩৪৭ রান নিয়ে সেরার লড়াইয়ে আছেন। বোলিংয়ে বাদ পড়া ঢাকার অধিনায়ক নাসির হোসেন ১৬ উইকেট নিয়ে সবার ওপরে। তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ৪ জন ১৩ উইকেট নিয়ে আছে দ্বিতীয় অবস্থানে।
চলমান বিপিএলে যে ৪টি দল প্লে-অফ নিশ্চিত করেছে তার মধ্যে এখনো ৩ দলের সুযোগ রয়েছে ১৮ পয়েন্ট করে অর্জনের। বর্তমানে যে অবস্থায় আছে পয়েন্ট টেবিল সেই অনুসারে ১৮ পয়েন্ট পাওয়া দলই শীর্ষে থাকবে। তবে ৩ দলের পয়েন্ট সমান ১৮ হয়ে গেলে তখন নেট রানরেটের ভিত্তিতে অবস্থান নির্ধারণ করা হবে। প্লে-অফ পর্বের জন্য এই অবস্থানটা অতীব জরুরি। কারণ শীর্ষ ২ দল খেলবে সরাসরি প্রথম কোয়ালিফায়ার ম্যাচ। সেই ম্যাচ খেলার সুবিধা সবচেয়ে বেশি। জয়ী দল সরাসরি ফাইনালে উঠবে এবং পরাজিতদের সুযোগ থাকবে আরেকটি কোয়ালিফায়ার ম্যাচ খেলার। কিন্তু পয়েন্ট টেবিলের তৃতীয় ও চতুর্থ হওয়া দল দুটিকে কেলতে হবে এলিমিনেটর ম্যাচ। সেখানে হারলেই বাদ এবং জেতার পরে ফাইনালে ওঠার জন্য আবার দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচেও বিজয়ী হতে হবে। আর সে কারণে বাকি ৬ ম্যাচে হবে জমজমাট লড়াই।
সেই লড়াইয়ে অনেক সুবিধাজনক অবস্থানে আছে সিলেট। তাদের একটি ম্যাচ বাকি। কিন্তু ১১ ম্যাচে ৮ জয়ে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে এককভাবে শীর্ষে মাশরাফি বিন মর্তুজার দল। ইতোমধ্যেই প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে পড়া খুলনার বিপক্ষে শেষ ম্যাচ তাদের। সেখানে জিতলে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে প্রথম দুই অবস্থানে থাকা অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যাবে সিলেটের। কারণ নেট রানরেটও বেশ ভালো দলটির। কিন্তু আর কোনো দলকে শীর্ষস্থান দখলের জন্য দুই ম্যাচই জিততে হবে। সে ক্ষেত্রে বরিশাল ২ ম্যাচ জিতলে শুধু রংপুরেরই সুযোগ আছে ২ ম্যাচ জেতার। আবার কুমিল্লা ২ ম্যাচ জিতলে অন্য দুই দলের সুযোগ নেই ১৮ পয়েন্ট হওয়ার। কারণ কুমিল্লার বাকি দুই ম্যাচ বরিশাল ও রংপুরের বিপক্ষে। তবে বরিশালের কাছে কুমিল্লা হেরে গেলে তাদেরই বড় সুযোগ থাকবে সিলেটকে হটিয়ে শীর্ষে ওঠার। কারণ নেট রানরেট এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি বরিশালের। তবে সে ক্ষেত্রে শেষ ম্যাচেও তাদের জিততে হবে খুলনার বিপক্ষে। মঙ্গলবার শুরু হবে এই শেষ পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ লড়াই।
দলগত লড়াইয়ের মধ্যে ক্রিকেটারদের আছে ব্যাটে-বলে দারুণ যুদ্ধ। বিশেষ করে ব্যাটিংয়ে সেরা হওয়ার তুমুল লড়াই চলছে এই মুহূর্তে সিলেটের দুই টপঅর্ডার শান্ত ও হৃদয়ের মধ্যে। ইনজুরিতে পড়ার কারণে হৃদয় মাঝে ২ ম্যাচ খেলতে পারেননি এবং আরেকটি ম্যাচে তার ব্যাটিং করতে হয়নি। এরপরও ৯ ম্যাচ খেলা এ ২২ বছর বয়সী ডানহাতি ৮ ইনিংসে ৫৩.২৮ গড়, ১৪৯.২০ স্ট্রাইকরেটে ৫টি অর্ধশথক হাঁকিয়ে করেছেন সর্বাধিক ৩৭৩ রান। ইনজুরির আগে ৩টি এবং ইনজুরি থেকে ফিরে ২টি হাফ সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে তিনি শান্তকে পেছনে ফেলেছেন। বাঁহাতি ওপেনার শান্ত ১১ ম্যাচের ১১ ইনিংসে ব্যাট করে ৪১.২২ গড় ও ১১১.৪১ স্ট্রাইকরেটে ৩৭১ রান নিয়ে এখন দ্বিতীয় অবস্থানে।
তিনি হাঁকিয়েছেন ৩ ফিফটি। বরিশালের অধিনায়ক সাকিব ৩ ফিফটিতে ৪৯.৫৭ গড় ও ১৮৩.৫৯ স্ট্রাইকরেটে ৩৪৭ রান করে তৃতীয়। তারই সতীর্থ পাকিস্তানের ইফতিখার আহমেদ ১ সেঞ্চুরি ও ৩ ফিফটিতে ৩৪৭ রান করলেও দেশে ফিরে গেছেন। তবে ২ ফিফটিতে ৪৮.৮৫ গড় ও ১২৫.৭৩ স্ট্রাইকরেটে ৩৪২ রান নিয়ে চতুর্থ স্থানে থাকা ঢাকার অধিনায়ক নাসির আরেকটি ম্যাচ সুযোগ পাবেন সবাইকে টপকানোর। চট্টগ্রামের আফিফ হোসেন ধ্রুব ২ ম্যাচ সুযোগ পাবেন। তার দল বাদ পড়েছে। আফিফ করেছেন ২ ফিফটিতে ৪৬.৮৫ গড় ও ১২৭.৬২ স্ট্রাইকরেটে ৩২৮ রান। বোলিংয়েও ম্যাজিক দেখিয়ে সবাইকে পেছনে ফেলেছেন নাসির। ১১ ম্যাচে এ অফস্পিনারের উইকেট ১৬টি। দ্বিতীয় স্থানে থাকা দুই পাকিস্তানি খুলনার ওয়াহাব রিয়াজ ও মোহাম্মদ আমির ১৩ উইকেট নিলেও দেশে ফিরে গেছেন তারা। তাই লড়াইয়ে আছেন দুই তরুণ ডানহাতি পেসার বরিশালের রেজাউর রহমান রাজা ও রংপুর রাইডার্সের হাসান মাহমুদ। তাদেরও উইকেট ১৩টি করে।