ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে ২ রানে জিতে শীর্ষে সিলেট

বিপিএলে মাশরাফির কাছে হার সাকিবের

মো. মামুন রশীদ

প্রকাশিত: ০০:২২, ২৫ জানুয়ারি ২০২৩

বিপিএলে মাশরাফির কাছে হার সাকিবের

ম্যাচ শুরুর আগে শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন সাকিব আল হাসান ও মাশরাফি বিন মর্তুজা

নবম বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) টি২০ আসরে এবার দ্বিতীয় দিনই মুখোমুখি হয় মাশরাফি বিন মর্তুজার দল সিলেট স্ট্রাইকার্স ও সাকিব আল হাসানের দল ফরচুন বরিশাল। সেই ম্যাচে মাশরাফি নেতৃত্ব দিলেও সাকিব অধিনায়কত্ব করেননি। তবে মাশরাফি শেষ হাসি হেসেছিলেন সিলেটের ৬ উইকেটের জয়ে। ১৭ দিনের ব্যবধানে সেই একই ভেন্যু মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার দুপুরে মাশরাফি-সাকিবের নেতৃত্বে মুখোমুখি লড়াইয়ে বরিশালকে আবার হারিয়েছে সিলেট।

এবার অবশ্য হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে শেষ বল পর্যন্ত। শ^াসরুদ্ধকর ম্যাচে শেষ পর্যন্ত মাত্র ২ রানে হেরেছে বরিশাল। আগে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকটে ১৭৩ রান করে সিলেট। জবাবে ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৭১ রান করতে সক্ষম হয় বরিশাল। উভয় দলের এটি ছিল সপ্তম ম্যাচ। আগের ৬ ম্যাচে সমান ৫ জয়ে ১০ পয়েন্ট থাকার কারণে এ ম্যাচটি হয়ে দাঁড়ায় শীর্ষস্থান দখলের। শেষ পর্যন্ত ১২ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে থেকে গেছে চলতি বিপিএলে দুর্বার সিলেট এককভাবে সবার ওপরে। আর ১০ পয়েন্ট নিয়ে আপাতত দ্বিতীয় অবস্থানে থাকলেন সাকিবরা।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই বিপর্যয়ে পড়ে সিলেট। পাকিস্তানি পেসার মোহাম্মদ ওয়াসিমের করা দ্বিতীয় ওভারে মড়ক লাগে। প্রথম বলে জাকির হাসান (০) বোল্ড, পঞ্চম বলে ইনজুরি থেকে ফেরা তৌহিদ হৃদয় (৪) ক্যাচ ও শেষ বলে অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম (০) এলবিডব্লিউ হয়ে যান। ২ ওভারে মাত্র ১৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বিপর্যস্ত সিলেটকে চতুর্থ উইকেটে দুর্দান্ত এক জুটি গড়ে বড় সংগ্রহের পথে নিয়ে যান নাজমুল হোসেন শান্ত ও টম মুরস।

তারা ৭১ বল থেকে ৮১ রানের জুটি গড়েন। মুরস ৩০ বলে ৪টি চার ও ১টি ছক্কায় ৪০ রান করে সাকিবের বাঁহাতি স্পিনে স্টাম্পিং হয়ে যান। এরপর পঞ্চম উইকেটে অভিজ্ঞ শ্রীলঙ্কান অলরাউন্ডার থিসারা পেরেরার সঙ্গে মাত্র ৩৪ বলে ৬৮ রানের ঝড়ো জুটি গড়ে দলকে বড় পুঁজিতে পৌঁছে দেন শান্ত। থিসারা ১৬ বলে ৪টি চারে ২১ রানে সাজঘরে ফেরেন। কিন্তু দেখেশুনে খেলে ক্যারিয়ারের দশম ফিফটি পাওয়া শান্ত থেকেছেন শেষ পর্যন্ত। দলের বিপর্যয়ে হাল ধরে ৪৮ বল খেলে ফিফটি করেন তিনি। পরের দিকে দ্রুত ব্যাট চালিয়েছেন এবং শেষ পর্যন্ত ৬৬ বলে ১১ চার ও ১ ছক্কায় ৮৯ রানে অপরাজিত থাকেন। সিলেট নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেটে গড়ে তোলে ১৭৩ রানের চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ। ৪ ওভারে ৩৪ রানে ৩ উইকেট নেন ওয়াসিম।
জবাব দিতে নেমে বরিশাল উড়ন্ত সূচনা পায় সাইফ হাসান ও ইব্রাহিম জাদরানের আক্রমণাত্মক ব্যাটিং এবং সিলেটের ফিল্ডারদের সহজ ক্যাচ মিসের সুযোগে। পঞ্চম ওভারের পঞ্চম বলে সিলেটকে ব্রেক থ্রু এনে দেন তরুণ ডানহাতি পেসার তানজিম হাসান সাকিব। ১৯ বলে ৪ ছক্কায় ৩১ রান করে সাজঘরে ফেরেন সাইফ। এরপর রানের গতি কমে যায়। সপ্তম ওভারে তানজিমের দ্বিতীয় শিকার হয়ে সাজঘরে ফেরেন এনামুল হক বিজয় (৩)। তৃতীয় উইকেটে ৬১ রানের জুটি গড়েন ইব্রাহিম ও অধিনায়ক সাকিব।

দশম ওভারে রেজাউর রহমান রাজাকে পিটিয়ে তারা ২০ রান তুলে নেন। ফলে সঠিক পথেই এগোতে থাকে তারা। সেই রাজাই ২০তম ওভারে জোড়া আঘাত হেনে সিলেটকে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ এনে দেন। ৩৭ বলে ৪টি চার ও ১২টি ছক্কায় ৪২ রান করা ইব্রাহিম ও ১৮ বলে ৩ চার, ১ ছয়ে ২৯ রান করা সাকিব- দুজনই বোল্ড হন রাজার বলে। কিন্তু ১৬তম ওভারে মাশরাফিকে টানা ৩ ছক্কা হাঁকিয়ে করিম জানাত আবার বরিশালকে জয়ের আশা দেখান। ওই ওভারে আসে ২১ রান। ১৭তম ওভারে সেই জানাত ১২ বলে ২১ রান করে সাজঘরে ফেরেন মোহাম্মদ আমিরের বলে কট অ্যান্ড বোল্ড হয়ে।

তখনো ৩ ওভারে ৪১ রান প্রয়োজন বরিশালের। কিন্তু ১৮তম ওভারে তানজিমকে পিটিয়ে ইফতিখার আহমেদ ও ১৮ রান তুলে নিলে ম্যাচটি নাটকীয় পরিস্থিতিতে মোড় নেয়। ২ ওভারে ২৩ রান প্রয়োজন থাকলেও সেটি হয়নি। শেষ ওভারে ১৪ রানের দরকার পড়লে রাজা বোলিংয়ে এসে প্রথম বল ওয়াইড করলেও পরপর দুই বলে ইফতিখার (১৩ বলে ১৭) ও মেহেদি হাসান মিরাজ (৭ রানে রানআউট) সাজঘরে ফেরেন। তবু পঞ্চম বলে ছক্কা হাঁকিয়ে ওয়াসিম জমিয়ে তোলেন ম্যাচ।

কিন্তু শেষ বলে ৭ রান প্রয়োজন থাকলেও চার হাঁকাতে পেরেছেন তিনি। ফলে ৮ উইকেটে ১৭১ রানে থামে বরিশালের ইনিংস। রাজা  ৪ ওভারে ৪১ রানে ৩টি এবং তানজিম ও আমির ২টি করে উইকেট নেন। 
স্কোর ॥ সিলেট স্ট্রাইকার্স ইনিংস- ১৭৩/৫; ২০ ওভার (শান্ত ৮৯*, মুরস ৪০, থিসারা ২১; ওয়াসিম ৩/৩৪)।
ফরচুন বরিশাল ইনিংস- ১৭১/৮; ২০ ওভার (ইব্রাহিম ৪২, সাইফ ৩১, সাকিব ২৯, করিম ২১; রাজা ৩/৪১, আমির ২/২৪, তানজিম ২/৪০)। ফল ॥ সিলেট স্টাইকার্স ২ রানে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ নাজমুল হোসেন শান্ত (সিলেট স্ট্রাইকার্স)।

×