ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আর্জেন্টিনা ও ফ্রান্সের তৃতীয় শিরোপার হাতছানি

জাহিদুল আলম জয়

প্রকাশিত: ২৩:১৯, ১৫ ডিসেম্বর ২০২২

আর্জেন্টিনা ও ফ্রান্সের তৃতীয় শিরোপার হাতছানি

মেসি ও এমবাপে

কাতার বিশ্বকাপ ফুটবল ফের ফিরিয়ে এনেছে লাতিন ও ইউরোপের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই। কেননা ২২তম বিশ্বকাপের ফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছে দক্ষিণ আমেরিকা চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা ও ইউরোপের পরাশক্তি ফ্রান্স। কাতারের রাজধানী দোহার লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে রবিবার রাত ৯টায় মাঠে গড়াবে হাইভোল্টেজ এই ফাইনাল মহারণ। দুদলই এর আগে দুইবার করে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এবার তাই যে কোনো একটি দল তৃতীয়বার সোনার ট্রফি জয়ের উল্লাস করবে।
ফ্রান্স এর আগে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছে ১৯৯৮ ও ২০১৮ সালে। অন্যদিকে আর্জেন্টিনা বিশ্বসেরা হয়েছে সেই ১৯৭৮ ও ১৯৮৬ সালে। দিয়াগো ম্যারাডোনার দেশ বিশ্বকাপ জিততে পারেনি দীর্ঘ তিন যুগ অর্থাৎ ৩৬ বছর। কিন্তু জিনেদিন জিদানের ফ্রান্স গতবারই অর্থাৎ ২০১৮ সালে বিশ্বকাপ জিতেছে। এমবাপে, গ্রিজম্যানরা তাই সোনার ট্রফি জয়ের টাটকা স্বাদ নিয়েই মুকুট ধরে রাখার লক্ষ্যে মাঠে নামবেন। কিন্তু মেসিদের প্রেক্ষাপট ঠিক উল্টো। আর্জেন্টিনার এই প্রজন্ম বিশ্বকাপের স্বাদ পায়নি। ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপে স্বপ্নপূরণের কাছাকাছি পৌঁছে গেলেও ফাইনালে জার্মানির কাছে অতিরিক্ত সময়ে ১-০ গোলে হেরে হৃদয় ভেঙেছিল মেসিবাহিনীর।
আট বছর আগে হারলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমূলে পাল্টে গেছে আর্জেন্টিনা। বিশেষ করে ২০২১ সালে ২৮ বছর পর প্রথম আন্তর্জাতিক শিরোপা (কোপা আমেরিকা) জয়ের মধ্য দিয়ে নান্দনিক ছন্দে আছে আলবিসেলেস্তারা। এর মধ্যে আবার ইউরোপ চ্যাম্পিয়ন ইতালিকে হারিয়ে ফিনালিসিমার শিরোপাও জিতেছে তারা। অসাধারণ ছন্দে থাকা দলটি কাতারে মিশন শুরু করে হট ফেভারিট হয়েই।

কিন্তু নিজেদের প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের কাছে অপ্রত্যাশিতভাবে হেরে বড়সড় ধাক্কা খায়। কিন্তু সেই ধাক্কা সামলে আর্জেন্টিনা এখন ফাইনালের রঙিন মঞ্চে। এত কাছে এসে এবার আর শিরোপা হাতছাড়া করতে চায় না দলটি। বিশেষ করে খুদে জাদুকরের শেষ বিশ্বকাপ ম্যাচে তাঁকে সোনার ট্রফি উপহার দিতে বদ্ধপরিকর আর্জেন্টিনার ফুটবলাররা।

এ লক্ষ্য পূরণে কঠিন পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হবে কোচ লিওনেল স্কালোনির দলকে। কেননা শিরোপা ধরে রাখার মিশনে ফ্রান্সও আছে দারুণ ছন্দে। মরুর বুকে তাদের টানা দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপ জয়ের হাতছানি। এর আগে ইতালি (১৯৩৪, ১৯৩৮) ও ব্রাজিল (১৯৫৮, ১৯৬২) এই কৃতিত্ব দেখিয়েছে। অর্থাৎ ৬০ বছর পর টানা বিশ্বকাপ জয়ের সুযোগ হুগো লরিস, রাফায়েল ভারানেদের।

২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপের ফাইনালে ক্রোয়েশিয়াকে ৪-২ গোলে হারিয়ে ২০ বছর পর বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ফরাসিরা। চার বছর আগের সেই সৌরভ মরুর বুকেও ছড়িয়ে চলেছে কোচ দিদিয়ের দেশমের দল। টানা দ্বিতীয়বার ফাইনাল নিশ্চিত করার পর দারুণ সুখবর পেয়েছে ফরাসিরা। চোটের কারণে শেষ মুহূর্তে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়া তারকা ফরোয়ার্ড করিম বেঞ্জামা ফাইনালে খেলতে পারেন বলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের উদ্ধৃতিতে জানা গেছে।
গত মৌসুমে স্প্যানিশ জায়ান্ট রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে চোখ ধাঁধানো পারফরমেন্স প্রদর্শন করা বেঞ্জামা চলতি বছর জিতেছেন সেরা খেলোয়াড়ের অ্যাওয়ার্ড ব্যালন ডি’অর। নিজের ক্যারিয়ারে প্রথমবার বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ নিতে এবার কাতার এসেছিলেন তিনি। কিন্তু শেষ মুহূর্তে পুরনো চোটে ছিটকে পড়েন ৩৪ বছর বয়সী এই সুপারস্টার। কিন্তু নতুন করে জানা গেছে, আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে ফাইনাল মহারণ খেলতে দলে যোগ দিচ্ছেন বেঞ্জামা।

চোটের পর পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে তিনি ছিলেন রিয়ালের সান্টিয়াগো বার্নাব্যুতে। সেখান থেকে ফের কাতারে ফরাসি দলের সঙ্গে যোগ দিচ্ছেন বলে জোর গুঞ্জন। এ বিষয়ে ফরাসি কোচ দিদিয়ের দেশম পরিষ্কার করে কিছু না বললেও জানা গেছে, ফাইনালে বেঞ্জামা না খেললেও প্রতিপক্ষকে চাপে রাখতে তাঁকে ডাগআউটে রাখা হবে। আর প্রয়োজন হলে তাকে খেলাতেও পারেন ফরাসি কোচ। বেঞ্জামার এই ফেরার খবরেই স্পষ্ট, ফাইনাল মহারণ নিয়ে কতটা উত্তাপ কাজ করছে।
দু’দলই নিজেদের সেরাটা দিয়ে ফাইনালে জিততে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। মূলত দুই লিওনেল অর্থাৎ অধিনায়ক লিওনেল মেসি ও কোচ লিওনেল স্কালোনির হাত ধরে আমূলে পাল্টে গেছে আলবিসেলেস্তারা। এবার দু’জনে মিলে আর্জেন্টিনাকে উপহার দিতে চান ৩৬ বছর পর বিশ্বকাপ ট্রফি। এ লক্ষ্যপূরণে আর মাত্র এক জয় দূরে বিখ্যাত আকাশি-সাদা জার্সিধারীরা।

বিশ্বকাপ জিততে ভীষণ আশাবাদী মাত্র ৪৪ বছর বয়সী কোচ স্কালোনি, ‘আমরা আমাদের স্বপ্নপূরণের শেষ ধাপে পৌঁছে গেছি। জানি কঠিন লড়াই হবে। কিন্তু আমরা আমাদের লক্ষ্যপরণে আশাবাদী।’ অধিনায়ক মেসি বলেন, ‘আমরা ধাপে ধাপে এগিয়ে এসেছি। শুরুটা প্রত্যাশিত না হলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সবাই নিজের শতভাগ দিয়েছে। আশা করি ফাইনালেও আমরা সেরাটা দিতে পারব। সেটা সম্ভব হলে বিশ্বকাপও ধরা দিবে’।

অভিন্ন স্বপ্ন ফরাসি কোচ ও অধিনায়কের। অধিনায়ক হিসেবে ফ্রান্সকে ১৯৯৮ সালে প্রথমবার বিশ্বকাপ জেতান দিদিয়ের দেশম। তার কোচিংয়েই আবার ২০১৮ সালে দ্বিতীয় বিশ্বকাপ জয় করে ফরাসিরা। এবারও দ্য ব্লুসদের কোচ দেশম। তার অধীনে আবারও বিশ্বকাপ জয়ের দ্বারপ্রান্তে জিনেদিন জিদানের দেশ। লক্ষ্যপূরণে ফরাসি কোচ বলেন, ‘আমাদের সামনে আরেকবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগ। কঠিন লড়াই হলেও ছেলেরা সবাই মুখিয়ে আছে ফাইনাল ম্যাচ জিততে।’

সম্পর্কিত বিষয়:

×